বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্পের ইতিহাস সুপ্রাচীন এবং গৌরবময়। বস্ত্রশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। এ খাতের টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে ৪ ডিসেম্বরকে 'জাতীয় বস্ত্র দিবস' হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে সারা দেশে জাতীয় বস্ত্র দিবস পালন করা হয়। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগ অর্জিত হয় বস্ত্রখাত থেকে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যবিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও বস্ত্র খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের বস্ত্রের চাহিদা-যোগানের সাথে জড়িত রয়েছে দেশের এক বিশাল জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে যার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ নারী। ফলে, এ তৈরি পোশাক শিল্পখাতের মাধ্যমে নারীদের মূল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্তকরণ ও ক্ষমতায়ন সম্ভব হয়েছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের। বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প খাতকে আরও শক্তিশালী, নিরাপদ ও প্রতিযোগিতাসক্ষম করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। সরকারের এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পের ‘পোশাক কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে বস্ত্র অধিদপ্তর তথা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে বাংলাদেশের বস্ত্র খাতে বৃহত্তম তিনটি উপ-খাত স্পিনিং, উইভিং ও ড্রাইং-ফিনিশিং। এই উপ-খাতগুলোতে প্রায় ৫৫ লাখ কর্মকতাণ্ডকর্মচারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশের বৃহত্তর বিনিয়োগ এ খাতে যেমন সমস্যা, তেমনি সম্ভাবনাও প্রচুর। ফলে ডলারের উচ্চমূল্য, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের অপ্রতুলতা, অর্থাভাব, উচ্চ সুদের হার, বিভিন্ন খাতে ঘুষ-দুর্নীতি, বাড়তি কর-ভ্যাটের বোঝা আর গ্যাস বিদ্যুৎ সংকট, উচ্চমূল্যে বিপর্যস্ত এ খাতকে দেশের স্বার্থেই বাঁচানো দরকার। কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের অনেক টেক্সটাইল, স্পিনিং বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে গেছে। যেগুলো কোনো মতে টিকে আছে, সেসব শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বস্ত্র খাতে সহায়ক বাজেটও খুব জরুরি। এ খাতের অনেক প্রতিষ্ঠানই রুগ্ণ। বিশ্ববাজারে টেক্সটাইল কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজের দাম বেড়েছে। তাই গার্মেন্টশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এসব বস্ত্র খাত নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। যেহেতু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে মিল-মালিকরা এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে ব্যস্ত। এর ফলে বস্ত্র খাত উপকৃত হয়ে অর্থনীতিতে আরো অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এ ছাড়া বাইরের বস্ত্র এবং সুতা আমদানিতে যথাযথ তদারকির পাশাপাশি বিদ্যুৎ-গ্যাস সংকটেরও সমাধান করা জরুরি। এবং আমাদের শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শিল্প-আগ্রাসনও প্রতিরোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব না দিলে দেশের বস্ত্রশিল্প বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হবে।