আগামী রোববার ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা সদরে গুম-খুনের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানববন্ধন করবে বিএনপি। আজ শুক্রবার বিকালে ভার্চুয়াল এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচির প্রস্তুতির কথা জানান। তিনি বলেন, আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি ১০ ডিসেম্বর (আগামী রোববার) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে। সেদিন ঢাকা শহরে গুম-খুনের পরিবার এবং যে সমস্ত নাগরিক গুম-খুন হয়েছেন সেই পরিবারের সমন্বয়ে এই মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগরসহ জেলা সদরে এই কর্মসূচি পালিত হবে। তিনি জানান, ঢাকায় মানববন্ধন হবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টায়। এই বিষয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপি সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলাসমূহে মানববন্ধনে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। রিজভী আরও বলেন, সরকারের দিক থেকে যদি বাধা-বিপত্তি আসে তবে সব বাধাকে প্রতিহত করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে এই মানববন্ধন কর্মসূচি সফল করতে হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বলব, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার, গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে আপনারা মানববন্ধনে উপস্থিত করবেন। উল্লেখ্য, বিএনপির এর আগে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি গত বুধবার থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায়। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পন্ড করে দেওয়ার পর থেকে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে দশম দফায় ২০ দিন অবরোধ এবং তিন দফা চারদিন হরতাল কর্মসূচি করেছে। ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য নেতা-কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে রিজভী বলেন, এই কর্মসূচি অনাচারের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার যে জনগণের কাঁধের ওপর আরব্য উপন্যাসের দৈত্যের মতো চেপে বসেছে। যার কাছে মানবতা, মানবাধিকার, মানুষের নাগরিক অধিকারের কোনো দাম নেই। তিনি আরও বলেন, আজকে একটি জাতির সমস্ত সম্ভাবনা, একটি জাতির অগ্রগতি, একটি জাতির এগিয়ে যাওয়া সকল কিছুকে স্তব্ধ করে দিয়ে নিজের হাতের ক্ষমতায় ধরে রাখার জন্য স্বৈরাচারে রূপান্তরিত হয়েছে আওয়ামী সরকার। তারা দেশ থেকে, রাষ্ট্র থেকে, সমাজ থেকে সত্য কথা ভুলিয়ে দিতে চাচ্ছে। তারা ন্যায় বিচার বিবেককে অন্তর্হিত করছে, নিরুদ্দেশ করতে চাচ্ছে। এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে সত্য কথা, মানুষের অধিকারের পক্ষে কথা বলা সবচাইতে বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কথা বলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, অন্যায় হিসেবে গণ্য করা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৫ অধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সাতটি মামলায় সাড়ে ৮০০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ২৩ জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেন তিনি। গত ২৪ ঘণ্টায় গ্রেপ্তারদের মধ্যে ফেনীতে বিএনপির চারজন, নারায়ণগঞ্জে দুইজনের নাম জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় গ্রেপ্তার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাতজন এবং জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের ১০ জনের নাম উল্লেখ করেন। ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফেনী পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম অভিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশে দেয় জহিরুল ইসলামের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এছাড়াও ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহŸায়ক ওমর ফারুক ভ‚ঁইয়া, ফেনী পৌর ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক বিজয় ও মো. শিবলুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা শাখা ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালিয়ে সাদীপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। এসময় পুলিশের বেধড়ক পিটুনিতে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক জাকারিয়া ভূঁইয়া, যুগ্ম আহবায়ক শাহজালাল ও ইউনুস খানসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব জানান, খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তুহিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খালিদ ওয়ালিদ, হাজারীবাগ থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম রফিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন সর্দার, জাফর আহমেদ, ছাত্রল নেতা মাসফিকুল ইসলাম রাইয়ান, কেশবপুর উপজেলা ছাত্রদল নেতা সোহাগ, মাইদ হাসানসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম জেলা মোটরচালক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মানিক, নেত্রকোনা জেলা মোটরচালক দলের সহ-সভাপতি মো. আব্দুল হান্নান, পানগাঁও থানার সহ-সভাপতি মো. মোস্তাক, মহানগরের দপ্তর সম্পাদক মো. আরিফ, পাহারতলী থানার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আরিফ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মধু, হালিশহর থানার প্রচার সম্পাদক মো. আলমগীর, সদস্য মো. বাবুল, মো. মোমিন ও ঢাকা মহানগর উত্তর মোটরচালক দলের সাবেক সভাপতি মো. জুয়েল খন্দকারসহ বেশকয়েকজন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। রিজভি অভিযোগ করেন, গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি ৮৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মী। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী। গত ১৫ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট গ্রেপ্তার ৮ হাজার ৪৭৫ জন। মামলা হয়েছে ৩০৯টি, এসব মামলায় আসামি ৩৪ হাজার ৪৬৫ জন। সংঘর্ষসহ বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন এক হাজার ২৩৭ এবং সাতজন মারা গেছেন, যোগ করেন রিজভী।