প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শুক্রবার। এতে পরীক্ষায় প্রক্সি, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এবং অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বিভিন্ন জেলায় আটক বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
দিনাজপুর: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এবং অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৮ জনকে আটক ও ১৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আটক ১৮ জনের মধ্যে ৯ জন নারী রয়েছেন। এদের কাজ থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত মাস্টারকার্ড, ব্লুটুথ ডিভাইস ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে এতথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জেলার ৫৪টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩৮ হাজার ৯ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২৮ হাজার ৩৭৫ জন। পরীক্ষায় প্রক্সি, ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার এবং অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১৮ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেন জানান, আটকদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
লালমনিরহাট: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির অভিযোগে ১০ নারীসহ ১৩ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে পুলিশে সোপর্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও তিন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে তাদের পুলিশে দেওয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় লালমনিরহাট সরকারি কলেজ, সরকারি মজিদা খাতুন কলেজ, লালমনিরহাট সরকারি বালক ও বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একযোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এসব পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ১৬ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এরমধ্যে অপরাধ বিবেচনা করে ১৩ পরীক্ষার্থীকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার চৌধুরি বলেন, জেলায় মোট ১৬ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১২ হাজার ৪২৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এরমধ্যে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করার কারণে ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু বহিষ্কৃত ১৬ জনের মধ্যে অপরাধ বিবেচনায় ১৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এই ১৩ জন পরীক্ষার্থীকে আসামি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস মামলা করবে। লালমনিরহাট সদর থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, পরীক্ষা আয়োজক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আটক পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা রয়েছে। আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা রুজু করে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করবো। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতি করার অভিযোগে বহিষ্কৃত ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়ােগ পরীক্ষায় প্রক্সি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে ১২ জনকে আটক ও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী পরীক্ষার্থী বলে জানা গেছে। আজ শুক্রবার বিকেলে এতথ্য জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়ােগ পরীক্ষায় কুড়িগ্রামে ৪৫টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬ হাজার ৮০৫ জন। এরমধ্যে উপস্থিত ছিলেন ২০ হাজার ৭১ জন। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ১২ পরীক্ষার্থীকে আটক ও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
গাইবান্ধা: স্টারকার্ডের মধ্যে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত করে জালিয়াতির সময় পাঁচ মূলহোতাসহ ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার বিকেলে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে জেলার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্র ও এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন র্যাব-১৩ এর গাইবান্ধা ক্যাম্পের সদস্যরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি ইলেকট্রনিক ডিভাইস সংযুক্ত মাস্টারকার্ড, ১৯টি বøæটুথ ডিভাইস ও ১৬টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। ব্রিফিংয়ে র্যাব কমান্ডার জানান, আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলছিল। এ সময় একটি চক্র ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং মোবাইলের মাধ্যমে অসদুপায় অবলম্বন করছিলেন। এ ঘটনার গোপন সংবাদের মাধ্যমে বিভিন্ন কেন্দ্রে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এতে তাদের গ্রেপ্তারসহ ওইসব উপকরণ জব্দ করা হয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা মারুফ, মুন্না, সোহাগ, নজরুল ও সোহেল বিভিন্ন পরীক্ষার্থীকে ১৪ থেকে ১৮ লাখ টাকায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে আসছিলেন। এদের মধ্যে নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং সোহেল ডিভাইস সংগ্রহ সরবরাহ করতেন। আর মারুফ ও মুন্না বাহির থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করেন। অধিনায়ক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।