চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাঠে মাঠে এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত কৃষকরা। এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি তারা। দেশের পেঁয়াজের বাজারে যখন অস্থিরতা চরমে, তখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনে দিবে বলে আশা করছেন চাষীরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে- গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে কমে আসবে আমদানিনির্ভরতা। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে-চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ উপজেলায় এ বছর ৪ হাজার ৫০০ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। ভারতের এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন চাষীরা। এ পেঁয়াজ ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজের মতোই স্বাদ ও আকার। সরকারি প্রণোদনার আওতায় জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের পেয়াজ চাষী সায়েম আলী জানান, এ বছর গ্রষ্মকালীন পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ভালো। বিঘাপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে পেঁয়াজ। এক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতিকেজি পেয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১১ টাকা ২৫ পয়সা। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বাজারজাত শুরু হয়েছে। এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম কমবে। মামুনুর রশিদ নামে আরেক চাষী বলেন- গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াপের পুল লাগাতে হয় সেপ্টেম্বরে। ৯০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ বিক্রির উপযোগী হয়ে গেছে। এখন পেঁয়াজ বাজারজাত করছি। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারজাত করা যাচ্ছে এই পেঁয়াজ। যখন বাজারে আসছে তখন বাজারে দেশি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। পেয়াজ চাষী আবুল কালম আজাদ জানান, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি অনেক সহজ। একবার করে কীটনাশক ও সার দিয়েই চাষ করা যায় এ পেঁয়াজ। পাশাপাশি প্রায় সারাবছরই এ পেঁয়াজ চাষ করা যায়। এ কারণে অন্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষীরা। প্রতিবছরই চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেঁয়াজ চাষের পরিমাণ বাড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার জানান- সাধারণত দেশি জাতের পেঁয়াজ বিঘাপ্রতি ফলন হয় ৩০ থেকে ৪০ মণ। সেখানে গ্রষ্মকালীন এন-৫৩ জাতের পেঁয়াজ হয় বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ। আর অসময়ে পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করার কারণে চাষীরাও অধিক দাম পান। চাঁপাইনবাবগঞ্জে অনেক আম বাগাান গড়ে উঠেছে, যেখানে আলো-বাতাস পর্যাপ্ত থাকে। এ সব বাগানেও পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব। তিনি বলেন- গ্রীষ্মকালীণ পেঁয়াজ চাষ সম্প্রাসরণ করেছি প্রণোদনার মাধ্যমে। কৃষককে শিখিয়েছি, এই সময়ে পেঁয়াজ করা যায়। কৃষক জানতো এই বর্ষার সময়ে পেঁয়াজ করা যায় না। আমরা যদি এই পেঁয়াজ চাষে সক্ষম হই তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার কোনোই দরকার নাই। আগামী বছর জেলায় গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষ আরো বাড়বে বলে আশা করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে মেয়াদ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোর পর দেশের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়। রাতারাতি কেজিতে ৬০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসলে দাম কমে আসবে বলে আশা করছেন চাষী ও কৃষি বিভাগ।