কুড়িগ্রামের নাগেশ^রীতে তৃণমূল পর্যায়ের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পে প্রশিক্ষণের ভাতা চেক বিতরণে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ৪র্থ ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে একশ’ সুবিধাভোগীকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় উপজেলা প্রশাসন অডিটোরিয়ামে চেক বিতরণ করা হয়। চেক প্রদানের আগে প্রতিজনের কাছ থেকে তিনশ’ থেকে পাঁচশ করে টাকা নেয় প্রকল্পের উপজেলা মাঠ সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম। উপজেলা প্রশিক্ষক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন শামিমের নির্দেশে এসব টাকা নেয়া হয়। শুধু তাই নয় ট্রেডের এক তৃতীয়াংশ সুবিধাভোগী উপস্থিত ছিলেন না। অনুপস্থিতরা প্রকৃতপক্ষে সুবিধাভোগী নন। জানা গেছে, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্পের আওতায় বেকার যুব মহিলাদের বিউটিফিকেশন, ফ্যাশন, কেটারিং ও ইন্টেরিওর ডিজাইন ট্রেডে একশ’ জন নারী সুবেধিাভোগীকে ৮০দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় বেকার যুব মহিলাদের দক্ষ কারিগর তৈরির লক্ষ্যে নেয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থার নাগেশ্বরী শাখা। প্রশিক্ষণকালে সুবিধাভোগীদের যাতায়াত বাবদ দৈনিক দেড়শ’ টাকা করে দেয়া হয়। ৮০ দিনের পূর্ণ মেয়াদ শেষে প্রশিক্ষণ ভাতা হিসেবে একজন সুবিধাভোগী ১২হাজার পাঁচশ’ টাকা করে চেক হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার চেক বিতরণের আগে সুবিধাভোগী জনপ্রতি পাঁচশ’ করে টাকা নেন প্রকল্পের জেলা কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম। অনেকের কাছ থেকে তিনশ’ করেও নেন। ভুক্তভোগীরা জানান, জেলা কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশিক্ষক কর্মকর্তার কথা বলে এসব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ক্যাটারিং ট্রেডে প্রশিক্ষণ নেয়া রূপালী খাতুন, নিলুফা ইয়াসমিন, উম্মে কুলছুম টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, মাঠ সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম তাদের বলেন, স্যারকে টাকা দিতে হবে। এটা সবাই দেয়। একই কথা জানান ফ্যাশন ট্রেডের আয়শা খাতুন, আশা মনি, লাকি খাতুন, মনোয়ারা খাতুন ও ঝরনা রানীসহ অনেকে। এরা ছাড়াও ওই ট্রেডের সবার কাছ কাছ থেকে তিনশ’ করে টাকা তুলেছেন ওই মাঠ সমন্বয়কারী। ফ্যাশন ট্রেডের পিংকী রানী, মরিয়ম, শামসুন্নাহারসহ কয়েকজন জানান, প্রকল্পের প্রশিক্ষক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন শামিম ও মাঠ সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম তাদের কাছ থেকে পাঁচশ’ করে টাকা নেন। পরে তারা জানতে পারেন অন্য ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীর অনেকের কাছে তিনশ’ করে টাকা নেয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করলে দুইশ’ করে ফেরত দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম। চারটি ট্রেডের সকল প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়েছে এভাবে। শুধু তাই নয় ভুক্তভোগীদের মাধ্যমে জানা গেছে, তালিকার একশ’ নামের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সুবিধাভোগী প্রশিক্ষণে উপস্থিত ছিলেন। এমনকি চেক প্রদানের সময়ও তারা ছিলেন না।। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রকল্পের সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের নাম তালিকায় রাখেন। তারা প্রশিক্ষণে উপস্থিত থাকেন না। সেসব নামের সুবিধা নেন আমিনুল। এছাড়াও অভিযোগ উঠেছে, নাগেশ্বরী কামার পাড়া এলাকায় জাতীয় মহিলা সংস্থা অস্থায়ী কার্যালয়ে সুবিধাভোগীদের নিয়োগ পরীক্ষা হলেও যাচাই-বাছাই ও মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয় আমিনুলের বাড়ীতে। সেখানে তার দুই মেয়ে এবং স্ত্রী বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেন বলেও অভিযোগ আছে এবং প্রার্থীরা উর্ত্তিণ হলেও দুই থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে তালিকায় নাম রাখেন তিনি। এ বিষয়ে কথা বলতে মঙ্গলবার বিকেলে প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তার মেয়ে আইভি রিসিভ করে জানান তিনি বাসায় নেই। পরে বেশ কয়েকবার কল করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। নাগেশ^রী প্রশিক্ষক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন শামিমের ফোনের একাধিকবার কল করলেও রিসিভ হয়নি। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার আহাম্মেদ বলেন, টাকা নেয়ার অভিযোগ আমার কাছেও এসেছে। বিষয়টি মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি তিনি ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। চেক গ্রহণকারীর বিষয়ে বলেন, ৩০টির মতো চেক বিতরণ হয়নি। এটা আমার কাছেও কেমন মনে হয়েছে। তবে তদন্ত না করে কিছু বলা ঠিক হবেনা।