ছোট রানআপে তাসকিন আহমেদের একটি ডেলিভারি চলে লেগ স্টাম্পের অনেকটা দূর দিয়ে। বোলিং প্রান্তে ফেরার সময় তাকে থামিয়ে কিছু একটা বললেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। পরে নিজ হাতে পিচের ওপর বিছিয়ে দিলেন কিছু নির্দেশক। কিছুক্ষণ মুঠোফোনেও ধারণ করলেন তাসকিনের বোলিংয়ের কিছু অংশ। কাছ থেকে সব পর্যবেক্ষণ করলেন বিসিবির দুই ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম ও মুজাদ্দেদ আলফা সানি। মিরপুর একাডেমি মাঠে বৃহস্পতিবার এভাবেই প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলল তাসকিনের বোলিং অনুশীলন। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর এ দিনই বোলিংয়ে ফিরলেন অভিজ্ঞ এই পেসার। কয়েক বছর ধরে দারুণ বোলিংয়ের ছন্দ নিয়ে ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলেন তাসকিন। পেস বোলিং বিভাগের নেতা হিসেবে তার ওপর দলের প্রত্যাশাও ছিল বেশি। কিন্তু বড় মঞ্চে হতাশ করেন ২৮ বছর বয়সী পেসার। সাত ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৫ উইকেট। ওভারপ্রতি খরচ করেছেন সাড়ে পাঁচের বেশি রান। গড়ে একেকটি উইকেটের জন্য বল করেছেন ৬৬টি, রান দিয়েছেন ষাটের বেশি। তার বোলিংয়ের গতিও দেখা গেছে গড়পড়তার চেয়ে কম। টুর্নামেন্টের মাঝপথে সংবাদমাধ্যমে তাসকিন নিজেই বলেছিলেন, কাঁধের চোটের সঙ্গে লড়াই করে খেলে চলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের পর এই পুরোনো চোটের অবস্থা বুঝে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বিসিবি। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার পর তাকে চার সপ্তাহের পূর্ণাঙ্গ বিশ্রামে পাঠায় বিসিবির চিকিৎসা বিভাগ। এর মধ্যে ব্যথার অবস্থা উন্নতির দিকে থাকায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয় তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। এক দিন পর তিনি শুরু করলেন বোলিং। মিরপুরে জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির মাঠে ঢুকে প্রথমেই ফিজিও সানির তত্ত্বাবধানে গা গরম করে নেন তাসকিন। ততক্ষণে তার বোলিংয়ের জন্য প্রস্তুত সেন্টার উইকেট। আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে তাসকিনের বোলিং দেখতে থাকেন খালেদ মাহমুদ। কিছুক্ষণ পরপর নানা দিক-নির্দেশনাও দিতে দেখা গেল বর্তমান বিসিবি পরিচালককে। পপিং ক্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে বোলিংয়ের সময় তাসকিনের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায় দুই ফিজিও বায়েজিদ ও সানিকে। তারাও কিছুক্ষণ পরপর বোলিংয়ের ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করেন। শুরুতে ছোট রান-আপে বোলিং করেন তাসকিন। পরে রান-আপ কিছুটা বাড়িয়ে করেন আরও কিছু ডেলিভারি। এ সময় বলের গতিতেও দেখা যায় ইতিবাচক পরিবর্তন। তবে লাইন ঠিক রাখার ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যায় ভোগেন তাসকিন। এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন মাহমুদ। প্রায় ত্রিশ মিনিটের সেশন শেষ করে ফেরার সময়ও হাতের কবজি দেখিয়ে তাসকিনকে কিছু একটা পরামর্শ দিতে থাকেন মাহমুদ। তাসকিনের পুনবার্সন প্রক্রিয়া নিয়ে বিসিবির ফিজিও সানি সংবাদমাধ্যমকে যা বললেন, তাতে বিপিএলের আগেই পুরোদমে বোলিংয়ে ফিরতে পারবেন এই পেসার। “তাসকিনের যে ৪ সপ্তাহ বিশ্রাম ছিল, সেটা শেষ হয়েছে। ১২ তারিখ থেকেই মূলত পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তার ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটা একটু লম্বা। মোটামুটি ৫ সপ্তাহের একটা প্রোগ্রেসিভ বোলিং প্ল্যান। আশা করা যায়, সব ঠিক থাকলে জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে ফুল রান-আপে বোলিং করতে পারবেন তিনি।” তবে সম্ভাব্য এই পরিকল্পনায় বাধা হতে পারে তাসকিনের চোটের ধরন। যা মূলত ফিরতে আসতে পারে যে কোনো সময়ই। তাই আপাতত শুরুর কিছু দিন বোলিং সেশনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবেন তাসকিন। ব্যথা আর ফিরে না এলে ধীরে ধীরে বাড়বে তার বোলিংয়ের মাত্রা, লম্বা হবে রান-আপ। তখন গতি বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে পারবেন তিনি। সব মিলিয়ে পাঁচ সপ্তাহের এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা আগামী ১৫ জানুয়ারি। ১৯ জানুয়ারি থেকে মাঠে গড়াবে বিপিএল। সব কিছু ঠিক থাকলে নতুন দল দুর্দান্ত ঢাকার হয়ে ওই ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট দিয়েই হয়তো মাঠে ফিরবেন তাসকিন।