অভিষিক্ত পেসার আমের জামালের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল আপার কাট করে স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠালেন ডেভিড ওয়ার্নার। ৯৮ থেকে পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ঘরে। এরপর তার সেই চিরচেনা উদযাপন। হেলমেট খুলে এক হাতে আর অন্য হাতে ব্যাট নিয়ে লাফিয়ে ওঠা। এবার যেন একটু বেশিই বুনো উল্লাস করতে দেখা গেল তাকে। চারদিকে যে তার ফর্ম নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছিল। ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট সিরিজের শুরুটা হলো দারুণ। পাকিস্তানের বিপক্ষে পার্থ টেস্টের প্রথম দিন ১৬৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন বাঁহাতি ওপেনার। ২১১ বলের ইনিংসটি গড়া ১৬ চার ও ৪ ছক্কায়। দিন শেষে ৮৪ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ৫ উইকেটে ৩৪৬। ওয়ার্নার ছাড়া আর কেউ এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। ক্যাচ মিস, স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া, অস্ট্রেলিয়ার রানের জোয়ার- পাকিস্তানের জন্য দিনটি ছিল হতাশার। এই ম্যাচের আগে বেশ চাপে ছিলেন ওয়ার্নার। ভারতে গত ওয়ানডে বিশ্বকাপটা তার দারুণ কাটলেও টেস্ট ক্রিকেটে সময় ভালো যাচ্ছিল না অনেক দিন ধরে। এই ম্যাচের আগে সবশেষ ৩৬ ইনিংসে ২৬.৭৪ গড়ে কেবল ৯৩৬ রান করতে পারেন তিনি। যেখানে শতক স্রেফ একটি- গত বছরের ডিসেম্বরে মেলবোর্নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করেন দ্বিশতক। এই সিরিজের সিডনি টেস্ট দিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ইচ্ছার কথা আগেই জানান তিনি। এতেই বেজায় চটে যান তার সাবেক সতীর্থ মিচেল জনসন। ফর্মের সঙ্গে লড়াই করা একজন ক্রিকেটারের দলে থাকা এবং এভাবে অবসর নেওয়ার অধিকার আছে কি-না, এমন প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই পেসার। পরে তার সঙ্গে কথার লড়াইয়ে যোগ দেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাচক জর্জ বেইলি। ওয়ার্নার সবকিছুর জবাব দিলেন ২২ গজে, ২৬তম টেস্ট শতকে। চা বিরতির সময় ফক্স ক্রিকেটে সাবেক কিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টকেও সেটিই বললেন ৩৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। “সমালোচনা চলতেই থাকবে, তবে সেটা মেনে নিতে হবে। রান করে তাদের (সমালোচক) চুপ করানোর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই।” পার্থ স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাটিং নেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। উইকেটে শুরুতে পেসারদের জন্য সহায়তা ছিল। যদিও তা কাজে লাগাতে পারেননি শাহিন শাহ আফ্রিদি ও দুই অভিষিক্ত পেসার খুররাম শাহজাদ ও জামাল। প্রথম ওভারে দুই বাউন্ডারির পর ধীরস্থির ব্যাটিংয়ের পথ বেছে নেন উসমান খাওয়াজা। অন্য প্রান্তে ওয়ার্নার শুরু করেন আক্রমণ। ফাহিম আশরাফের চার বলের মধ্যে তিন বাউন্ডারিতে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি স্রেফ ৪১ বলে। পরের ওভারে ২১ রানে খাওয়াজাকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করেন আবদুল্লাহ শাফিক। স্লিপ থেকে কিছুটা পেছনে দৌড়ে ক্যাচ ফেলেন তিনি। উইকেটবঞ্চিত হন জামাল। ওয়ার্নার যথারীতি চালিয়ে যান আগ্রাসী ব্যাটিং। আফ্রিদির বলে নিচু হয়ে লং লেগের ওপর দিয়ে তার ছক্কা দেখে মনে হতে পারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট! প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে ফেলে ১১৭ রান। দ্বিতীয় সেশনের শুরু থেকে দারুণ বোলিংয়ের পুরস্কার পান আফ্রিদি। দারুণ এক ডেলিভারিতে খাওয়াজাকে (৯৮ বলে ৪১) কিপারের ক্যাচ বানিয়ে ১২৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন বাঁহাতি এই পেসার। তিনে নেমে মার্নাস লাবুশেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তাকে এলবিডব্লিউ করে দেন ফাহিম। খানিক পরই ওয়ার্নার পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত শতক। ১০৪ রানে তাকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল, কিন্তু মিড অনে সহজ ক্যাচ ফেলেন শাহজাদ। প্রথম দুই সেশনে ২ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া শেষ সেশনে হারায় আরও ৩টি। থিতু হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ (৬০ বলে ৩১) ও ট্রাভিস হেড (৫৩ বলে ৪০)। শাহজাদের শর্ট বলে কিপারকে ক্যাচ দেন স্মিথ। জামালের শর্ট বল আপার কাট করে থার্ডম্যান ধরা পড়েন হেড। জামাল নিজের পরের ওভারে ধরেন বড় শিকার। তার শর্ট বল উড়িয়ে মেরে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ওয়ার্নার। এর আগে ১৪১ রানে তাকে স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হারান সরফরাজ আহমেদ। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ ইনিংসে ৫ শতকে ওয়ার্নারের রান হয়ে গেল ১ হাজার ৯। গড় ১৪৪.১৪! দেশের মাটিতে কোনো একটি দলের বিপক্ষে অন্তত এক হাজার রান করার ক্ষেত্রে ওয়ার্নারের চেয়ে ভালো ব্যাটিং গড় আছে কেবল একজনের। ভারতের বিপক্ষে নিজ দেশে ১৩ ইনিংসে ১৫৮.৫৫ গড়ে ১ হাজার ৪২৭ রান করেন পাকিস্তানের জহির আব্বাস। এই সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের তালিকায় ম্যাথু হেইডেন ও মাইকেল ক্লার্ককে ছাড়িয়ে পাঁচ নম্বরে উঠে গেছেন ওয়ার্নার (৮ হাজার ৬৫১)। আরও কিছু অর্জন-কীর্তি সঙ্গী হয়েছে ওয়ার্নারের। পুরো দিনটিই যে তার!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৮৪ ওভারে ৩৪৬/৫ (ওয়ার্নার ১৬৪, খাওয়াজা ৪১, লাবুশেন ১৬, স্মিথ ৩১, হেড ৪০, মার্শ ১৫*, কেয়ারি ১৪*; আফ্রিদি ১৯-৫-৭৫-১, শাহজাদ ১৭-৫-৬২-১, জামাল ১২-০-৬৩-২, ফাহিম ১৪-০-৬৫-১, সালমান ২২-২-৭০-০)