নওগাঁর মহাদেবপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ও তার ছেলে সাকলাইন মাহমুদ রকিকে গালিগালাজ, তাঁর ট্রাক মার্কার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, কর্মীদের পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর কর্মীদের নানান হুমকি দেয়া হচ্ছে। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার ছয়টি স্থানে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরা এসব ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এমপি সেলিম। তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের মাতাজীহাটে তার নির্বাচনী অফিস উদ্বোধনের সময় প্রতিপক্ষরা সেখানে হামলা চালায়। তারা এমপি সেলিমকে গালিগালাজ করতে থাকে এবং কয়েকজন কর্মীকে লাথি মারতে থাকে। তারা এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন অফিস হবেনা বলে ঘোষণা দিয়ে হুমকি দিতে থাকে। রাত ৮টায় এমপির ছেলে যুবলীগ নেতা সাকলাইন মাহমুদ রকি উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের খোর্দকালনা গ্রামে নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করতে গেলে নৌকার সমর্থকেরা বাধা দেয়। এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন অফিস হবে না বলে হুমকি দিতে থাকে। বিষয়টি মহাদেবপুর থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। কিন্তু পুলিশ চলে যাবার পরই নৌকার কর্মীরা হামলা চালিয়ে অফিসটি ভেঙ্গে ফেলে। তারা লাঠি, লোহার রড প্রভৃতি নিয়ে হামলা চালায়। এতে রকি লাঞ্ছিত হয়। এ ছাড়া ১০ জন কর্মী আহত হয়। মারাত্মক আহত চারজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা করানো হয়। লোহার রডের আঘাতে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম হয়। এদের মধ্যে মাসুদ বিল্লাহ নামে একজনের মাথায় মারাত্মক জখম হয়েছে ও তার ডান হাত ভেঙ্গে গেছে। তার অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের নওহাটা মোড়ে, সফাপুর ইউনিয়নের ঈশ^র লক্ষ্মীপুর গ্রামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিট করা হয়েছে। এ ছাড়া খাজুর ইউনিয়নের কুঞ্জবন গ্রামের একজন হিন্দু কর্মীকে, চাঁন্দাশ ইউনিয়নের লাউয়াডাঙ্গ গ্রামের দুজন হিন্দু কর্মীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে খাজুর ইউনিয়ন আওয়মী লীগের বর্ধিত সভায় প্রকাশ্যে মাইকে এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন অফিস করতে দেয়া হবেনা বলে হুমকি দেয়া হয়েছিল এবং গত ১৬ ডিসেম্বর বদলগাছীতে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান প্রকাশ্যে মাইকে বক্তব্য দেয়ার সময় এই এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট চাইতে গেলে তাদেরকে মেরে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এসব ব্যাপারে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান এমপি সেলিম। বিষয়গুলো জানতে উপজেলার নৌকার নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা একাধিক নেতাকে ফোন করা হলে তারা এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনে ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং ২০১৮ সালে নৌকার প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এবার এই আসনে সাবেক সিনিয়র সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তী সৌরেনকে নৌকা প্রতীক দেয়া হলে এমপি সেলিম ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।