নারী নির্যাতন সভ্য সমাজে বেমানান বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশে নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে জীবনযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশে হিমালয় থেকে উৎপন্ন জলের ধারা প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। যদিও নদীমাতৃক বাংলাদেশ কালের আবর্তে দখল দূষণ উজান থেকে আসা পলির কারণে নদীমাতৃক পরিচয়টা হারিয়ে যাচ্ছ। তবে এ নদীর সঙ্গেই বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। নদীপথ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মিশরের নীল নদ যেমন মিসরের প্রাণ, তেমনি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। হাজারও নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এগুলোর মধ্যে প্রধান। এছাড়াও প্রতিটি নদীরই রয়েছে স্বাতন্ত্র্য। বাংলার জনপদগুলোকে পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে এসব নদী। তবে এসব নদীতে ভাঙন দেখা দিলেও সরকারি ভাবে সহযে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। যেখানে সরকারী ভাবে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিছুদিন ধরে যমুনার পারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নে যমুনা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমেও যমুনার পারে এভাবে ভাঙন দেখা দেওয়ায় স্থানীয় মানুষ দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ২০১১ সালে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়। সম্প্রতি নদীর পানি অনেক কমে গেলেও স্রোত থাকায় ও ঘূর্ণন সৃষ্টি হওয়ায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর থেকেই বাঁধ দফায় দফায় ভেঙেছে। সিসি ব্লকের বিভিন্ন অংশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পুরো বাঁধই। তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। বর্তমানে ভাঙন রোধে যেভাবে কাজ হওয়া প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। দ্রুত বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আরো অনেক স্থানেই ভাঙন দেখা দেবে এবং আগামী বর্ষায় বাঁধের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেতে পারে। ফলে সরকারের ৩৪ কোটি টাকার পুরোটাই যেমন জলে যাবে, তেমনি যমুনাপারের শত শত পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাদের সর্বস্ব হারাতে হবে। তাই নদী সংস্কারের মাধ্যমে বাঁচিয়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।