লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনের সংসদ-সদস্য মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারি (পিএস-২) আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান তিনি। পাশাপাশি হাতীবান্ধা উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও রয়েছেন। সেই শ্যামল আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ‘হাইকোর্টে অর্থের (টাকার) বিনিময়ে রায়' নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। স্থানীয় সাংবাদিকদের দেয়া তার ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের উচ্চ আদালত সম্পর্কে এমন বক্তব্যে এলাকার সচেতন নাগরিদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ‘হাইকোর্ট দেশের মানুষের শেষ ভরসাস্থল। সেই আদালতকে নিয়ে এমন বক্তব্য খুবই দুঃখজনক ও হতাশা ব্যাঞ্জক। জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালের দিকে হাতীবান্ধার গড্ডিমারী এলাকায় স্থানীয় সাংবাদিকরা শ্যামলের কাছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধানের হাইকোর্ট থেকে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়া রায়ের বিষয়ে জানতে চান। এ সময় আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, ‘ওনার (আতাউর রহমান প্রধান) প্রার্থীতা কোন ভাবেই বৈধ হওয়ার কারণ নাই। ওনার মনোনয়নপত্র জেলার রিটার্নিং অফিসার বাতিল করেছেন, বিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনার বাতিল করেছেন। ওনি ‘হাইকোর্টে অর্থের বিনিময়ে' রায়টি নিয়েছেন। সেটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা হয়েছে। সেটির রায় হলেই জানতে পারবেন।তবে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া পূর্বের রায়কে বহাল রাখলে আতাউর প্রধানের নির্বাচনে আইনগত বাধাঁ নেই বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে। তবে হাইকোর্ট সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামলের ওই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জজ কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুল হক দুলাল বলেন, ‘ হাইকোর্ট হচ্ছে আমাদের সবার শেষ ভরসাস্থল। সেই হাইকোর্ট সম্পর্কে এমন বক্তব্য খুবই দুঃখজনক ও হতাশা ব্যঞ্জক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন সংসদ-সদস্য মোতাহার হোসেন। এ আসনে কেন্দ্রিয় আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য আতাউর রহমান প্রধান ঈগল পাখি মার্কা নিয়ে ভোট যুদ্ধে নেমেছেন। তবে শুরু থেকে আতাউর রহমান প্রধান নির্বাচন করতে পারবেনা বলে এলাকায় প্রচার চালায় প্রতিপক্ষের লোকজন। এর সত্যতাও মেলে লালমনিরহাট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের সময় মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায়। এরপর নিবার্চন কমিশনে আপিলেও আতাউর রহমান প্রধানের আপিল খারিজ হয়। অবশেষে গত রোববার উচ্চ আদালতের রায় পেয়ে পরদিনই জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঈগল পাখি প্রতিক নিয়ে এলাকায় ভোটের প্রচারে নামেন তিনি। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা হয়। গত মঙ্গলবার তা খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। তবে হাইকোর্ট সম্পর্কে শ্যামলের এমন মন্তব্য সচেতন মহলের কাছে বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। হাইকোর্ট সম্পর্কে এমন মন্তেব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারি (পিএস-২) আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বুধবার মুঠোফোনে বলেন, আমি আসলে এভাবে বলতে চাইনি। ওই কথাটা হলো উকিলদেরকে (আইনজীবী) ম্যানেজ করেছে। কোর্ট তো আর ম্যানেজ হয়না। এটাই বলেছি।, লালমনিরহাট-১ আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘আমার প্রতি পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলার মানুষের নিখাঁদ ভালোবাসা দেখে প্রতিপক্ষরা শুরু থেকেই আমাকে ভোটের মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। দেশের উচ্চ আদালতে ন্যায় বিচার পেয়ে জনগনকে নিয়ে মাঠে আছি। আগামী ৭ জানুয়ারি এলাকার মানুষজন বিপুল ভোটে আমাকে মুল্যায়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।