বাগেরহাটের শরণখোলায় সোনালী শীষে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠ জুড়ে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে এখন চারদিক মুখরিত হয়ে উঠছে। বাম্পার ফলন ও দাম ভালো থাকায় কৃষকদের মাঝে আনন্দ বইছে। কৃষকরা ধান কাটা মাড়াই এবং গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি ঘরে ঘরে চলছে নবান্নের উৎসব। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা নতুন জাতের ধান, প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি ও প্রতিঘাত সহনশীল স্বল্পজীবনকালীন বিভিন্ন ফসলের জাতের ধান চাষাবাদ করায় উৎপাদন বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপণ্ডসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো:আবুল হাসান জানায়, এ বছর উপজেলায় প্রায় ৭০ হাজার বিঘা জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি ধান ৩৯, ৪৯, ৫২, ৭১, ৭৩, ৭৫ ও ৮৭। বিআর ১১, ২২, ২৩, স্থানীয় দুধকলম, সাদা মোটা ও লালমোটাসহ বিভিন্ন জাতের ধান। স্বল্পকালীন জাতের (১১৫ দিনের) ধান চাষ করায় রবি মৌসুমে গম, সরিষা, মুগ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় এক ফসলী ১১ হাজার ৫১৪ বিঘা জমি এখন দ্বি ফসলে ১৬ হাজার ৭২৫ বিঘা জমিতে চাষের আওতায় রূপান্তরিত হয়েছে। চাষিদের উৎসাহিত করতে ৩০ টি প্রদর্শনী ও প্রায় ৩০০ বিঘা জমি চাষের জন্য চাষীদের সরকারি প্রনোদোনা দেয়া হয়েছে।
উপজেলার দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের সফল চাষী নজরুল ইসলাম মোল্লা জানায়, তিনি ৮০ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছেন। এবছর যে ফসল হয়েছে তা গত তিন চার বছরেও হয়নি বলে জানান। তিনি ইতোমধ্যে ৫০ বিঘা জমির দান কর্তন করে মাড়াইয়ের কাজ চলছে। প্রতি বিঘায় প্রায় ২০ মন ধান হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের হাসেম হাওলাদার, লাকুরতলা গ্রামের এমাদুল হাওলাদার, খাদা গ্রামের বাদল আকন ও জিলবুনিয়া গ্রামের আইয়ুব আলী বলেন বাম্পার ফলনের কথা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রায়েন্দা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আজমল হোসেন মুক্তা ও খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন বলেন, মাঠ শুকিয়ে যাওয়ার পর পরই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ছিল আমাদের জন্য আর্শিবাদ। তা ছাড়া কৃষি বিভাগের পোকা প্রতিরোধে চাষীদের সচেতন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বৃষ্টির কারণে ফসল ভালো হওয়ায় এ বছর সুপার বাম্পার ফলন হয়েছে। তাছাড়া দরিদ্র চাষিদের স্বাবলম্বি করতে সরকারি ভাবে চাষিদের মধ্যে প্রদর্শণী ও প্রণোদনা দিয়েছেন। বাম্পার ফলনের জন্য আল্লাহর কাছে লাখো শুকুর।
উপজেলা কৃষি অফিসার দেবব্রত সরকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, চলতি আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের লক্ষ্য নিয়ে আগাম স্বল্প সময় ক্ষেত ধ্বংসকারী কারেন্ট পোকা সহ বিভিন্ন ধরনের পোকা প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক পরামর্শ ব্যবস্থা নিতে চাষীদের সচেতন করতে উপজেলার বিভিন্ন হাটে বাজারে কৃষি বিভাগ সভা সমাবেশ লিফলেট বিতরণ করে। তাছাড়া নতুন জাত প্রযুক্তি সম্প্রসারন, সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, প্রতিঘাত সহনশীল জাত, সল্পজীবনকালীন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত চাষাবাদ ও সঠিক সময় বৃষ্টি হওয়ায় সুপার বাম্পার ফলন হয়েছে। দামও ভালো থাকায় চাষিরা খুব খুশি। স্বল্পজীবনকালের ধান চাষের কারণে রবি মৌসুমে এক ফসলের জমির চাষের পরিমান বেড়ে তিন বছরের ব্যবধানে দ্বি ফসলে জমির পরিমান প্রায় দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।