গত ১২ ডিসেম্বর এফডিসিতে শুরু হয় ‘রাজকুমার’-এর শুটিং। শুটিংয়ে অংশ নেন শাকিবের আমেরিকান অভিনেত্রী কোর্টনি কফি। তিন দিন শুটিং করে নিজ দেশে ফিরে যান কফি। প্রথমবার বাংলাদেশে এসে ছয়দিনের মতো অবস্থান করেছিলেন কফি। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে আসার অনুভূতি এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রতি মুগ্ধতা জানান এই অভিনেত্রী। শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শাকিব খানের পেজ থেকে কোর্টনি কফির পরিচয় জানিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। যেখানে কফি বলেন, ‘আমি কোর্টনি কফি। রাজকুমার সিনেমার নায়িকা। যখন বাংলাদেশে আসার জন্য বিমানে উঠেছিলাম বারবার মনে হচ্ছিল অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। এখানে সবকিছু এত সুন্দর ছিল। আমি যা ভেবেছিলাম মনে হচ্ছে তার থেকেও বেশি সুন্দর।’ বাংলাদেশের মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ কফি। তা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশে আইফেল টাওয়ারের মতো বিখ্যাত কিছু আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের অনেক বড় মন আছে। আমি মনে করি বাংলাদেশের মানুষ হৃদয় দিয়ে এই দেশকে অনেক মহৎ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। আমি শুনেছি বাংলাদেশের মানুষের আপ্যায়নের জন্য বাংলাদেশ টুরিস্টদের অন্যতম আকর্ষণ। আমিও এখানে এসে সেটাই পেয়েছি। এখানকার মানুষ খুব দুর্দান্ত এবং অবিশ্বাস্য রকম দয়ার মানুষ।’ বাংলাদেশের সিনেমা নিয়ে নিজের ধারণাও প্রকাশ করলেন এই অভিনেত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝেছি বাংলাদেশের সিনেমা প্রেমীরা অন্য যে কোন দেশের সিনেমা প্রেমীদের চেয়ে অন্যরকম। বাংলা সিনেমার দর্শকরা তাঁদের সিনেমাকে ভালোবেসে গ্রহণ করে, অনেক বেশি উৎসাহিত করে। আমি চারপাশে ঘুরে দেখেছি এখানে অনেক সিনেমা প্রেমী মানুষ আছে। যারা আমাকে রীতিমতো চমকে দিয়েছে। এটাও বুঝতে পেরেছি এখানে শাকিব খানের অনেক ভক্ত আছে। যারা শাকিবকে খুব ভালোবাসে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগে এতোকিছু জানতাম না। শাকিব খানের জন্মদিনে হিমেল ও আমি অংশ নেই। হিমেল সেদিন সিনেমা নিয়ে আমাকে কিছু অংশ জানায় সেটা আমার আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। এমনকি শাকিব খান যে এত বড় স্টার এটাও জানতাম না। তার সাথে আমার দুর্দান্ত কাজ হয়েছে। আমার আমেরিকার বন্ধুরা বিশ্বাস করতে পারছে না এই সিনেমাটি আমি করছি।’ শাকিব খান প্রসঙ্গে কফি বলেন, ‘শাকিব খান বাংলাদেশের জন্য টম ক্রুজ। টম ক্রুজের মতোই জনপ্রিয় সে। শাকিব খুবই প্রফেশনাল, কাজে মনোযোগী, সহ শিল্পী হিসেবে একেবারে পারফেক্ট এবং শুটিংয়ে সে খুবই মজার মানুষ ছিল। তার সঙ্গে পুরো কাজের অভিজ্ঞতা খুবই দারুণ ছিল।’ ‘রাজকুমার’-এ নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে কোর্টনি বলেন, ‘এই সিনেমায় আমার চরিত্র অনেক খারাপ স্বভাবের। এই চরিত্রটি বাংলাদেশে আসে শাকিব খানকে বিয়ে করতে এবং তাকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে। বাকি অংশ দর্শকের জন্য চমক হিসেবে থাকুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘একাধিকবার সিনেমাটির শুটিং শুরু হওয়ায় কথা থাকলেও হয়নি। আমি কমপক্ষে পাঁচবার যোগাযোগ করেছিলাম। তারা জানিয়েছিলেন খুব শিগগিরই শুরু হবে। পরে আমি মনে করেছিলাম হয়তো শুটিং হবে না। কিন্তু আনন্দের বিষয় হচ্ছে দুই বছর পর হলেও আমরা কাজটা শুরু করতে পারলাম।’ শুটিং সেটের অভিজ্ঞতা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় দিন শুটিংয়ের সেটের সবার সঙ্গে একসাথে খেয়েছি সেটা ছিল খুবই মজার অভিজ্ঞতা। শিখেছি কিভাবে হাতে মাখিয়ে বাঙালি খাবার খেতে হয়। এছাড়াও, স্থানীয় জিনিসপত্রের জন্য নিউ মার্কেট গিয়েছিলাম। আট জোড়া জুতা, শীতের চাদর, অনেক কানের দুল কিনেছি। এগুলো খুব উপভোগ করেছি আমি।’ অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘এদেশের মত আমরা আমেরিকানরা ফেসবুকে খুব বেশি সক্রিয় নয় কিন্তু ইনস্টাগ্রামে বেশি সক্রিয় থাকে। আমি এক বছর আগে আমার ফেসবুক পেজ চালু করি। সেখানে বাংলাদেশ থেকে শাকিব খানের ভক্তরা আমাকে ফলো করে, আমি কিছু পোস্ট করলে তারা খুব চমৎকার সব মন্তব্য করে। কিছুদিন আগে আমি বাংলা শিখছি এমন একটি ছবি পোস্ট করেছিলাম, সেখানে তারা মন্তব্যের ঘরে জানিয়েছিল মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধ, শহীদদের কথা জানিয়েছিলেন।আমি তাদের বাংলা ভাষা শিখছিলাম সেটা নিয়ে তাঁরা গর্ববোধ করছিল। সেই মন্তব্য গুলো দেখে আমি অশ্রুসিক্ত হয়েছিলাম।’ এখন সিনেমাটির শুটিং চলছে পাবনায়। নতুন বছরের জানুয়ারিতে বাকি অংশের শুটিং হবে আমেরিকায়। আমেরিকার অংশের শুটিংয়ে আবার যুক্ত হবে কোর্টনি কফি।