আধুনিক স্মার্ট যুগেও শেরপুরের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ প্রাচীনকালের বাহন ঘোড়া গাড়ির ওপর নির্ভরশীল। ব্রিটিশ উপনিবেশকালে প্রথম ভারত উপমহাদেশে ঘোড়া গাড়ির প্রচলন শুরু হয়। এরপর ইঞ্জিনচালিত বিভিন্ন যানবাহনের প্রচলন শুরু হলে ঘোড়ার গাড়ি আস্তে আস্তে উঠে যায়। বর্তমান আধুনিক যুগে সর্বশেষ ব্যাটারিচালিত বিভিন্ন যানবাহনের কারণে ঘোড়া গাড়ির ব্যবহার নেই বললেই চলে। তবে সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে মালামাল বহনের জন্য এখনো দু-চারটি ঘোড়া গাড়ির দেখা গেলেও শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে সহস্রাধিক ঘোড়া গাড়ির ওপর নির্ভর করছেন কয়েক হাজার পরিবার। এসব পরিবার ঘোড়া গাড়ির আয় দিয়ে তাদের সংসার চালছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেরপুর জেলার সদর উপজেলার কামারের চর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চলাঞ্চলের বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাট এখনও পাকা হয়নি। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদ ও দশানী নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ৭ নম্বর চর, ৬ নম্বর চর, পয়স্তির চর, গোয়ালপাড়াসহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বর্ষার বেশিরভাগ সময় জমিজমা ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে ওইসব গ্রামে আজও কোনো রাস্তা পাকারণ করা হয়নি। তবে এসব গ্রামে ধান, পাট, ভুট্টা, সরিষাসহ শীতকালীন সবজির আবাদ হয় ব্যাপক। কিন্তু ওইসব গ্রাম থেকে ইউনিয়ন সদরে এবং শহরে যাতায়াতের জন্য কোনো পাকা সড়ক না থাকায় কৃষকের উৎপাদিত এসব কৃষি পণ্য ও সবজি স্থানীয় হাটবাজারে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই আদিকাল থেকেই ওইসব গ্রামের মানুষ ঘোড়া গাড়ির ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং এখনও রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তাদের কৃষিপণ্য হাটবাজারে নেওয়ার জন্য ঘোড়ারগাড়ির বিকল্প নেই। কারণ এসব ঘোড়ার গাড়ি ক্ষেত খামার এবং বালু ও কাঁচা মাটির রাস্তায় চলতে পারে। কিন্তু ওইসব কাঁচা রাস্তায় ট্রলি বা আধুনিক কোনো যান্ত্রিক বাহন, ট্রাক ও অটোরিকশা যাতায়াত করতে পারে না। গ্রামগুলোতে যুগ যুগ ধরে ঘোড়া পালন এবং ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করে নিজেদের আয়ের পথ বেছে নিয়েছে একশ্রেণির হতদরিদ্র মানুষ। অপরদিকে স্থানীয় কৃষকরাও এইসব ঘোড়া গাড়ির ওপর নির্ভরশীল হয়ে রয়েছেন। ঘোড়ার মালিকরা জানান, প্রতিটা ঘোড়ার পেছনে তাদের প্রতিদিন ২শ থেকে ৩শ টাকা খরচ হয়। প্রতিটা ঘোড়া ১৫ থেকে ১৬ মণ ভারী পণ্য টানতে পারে। প্রতিদিন ভাড়া পেলে হাজার টাকা আয় হয় তাদের। কিন্তু বর্ষার সময় ঘোড়াগুলোকে বেকার পালতে হয়। তারা আরও জানান, প্রত্যন্ত ফসলের মাঠগুলো থেকে কৃষিপণ্য বাজারে এনে ট্রাকে লোড করে ঢাকায় নিয়ে যেতে ওইসব কৃষিপণ্যের ব্যাপারীদের ঘোড়া গাড়ির ওপরে নির্ভর করতে হয়। কারণ কৃষিজমি পর্যন্ত ঘোড়া গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো বাহন নেওয়া সম্ভব নয়। স্থানীয় মানুষরা জানান, নদী ভাঙন, বর্ষায় মাঠঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এবং প্রচুর বালুর কারণে ওইসব গ্রামে আজও অনেক কাঁচাসড়ক পাকাকরণ সম্ভব হয়নি। তাই ওই চরাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়ি কোনো বিকল্প নেই। কামারের চর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমাদের এই চলাঞ্চলে ঘোড়া গাড়ির প্রচলন রয়েছে। এসব ঘোড়া গাড়ির ওপর নির্ভরশীল রয়েছে হাজারো পরিবার। প্রত্যন্ত চরাঞ্চল হওয়ায় এখনও অনেক রাস্তা কাঁচা রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা পাকা করা হয়েছে। রাস্তাগুলো সব পাকা হয়ে গেলে ওইসব ঘোড়ার গাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের কিছুটা ভোগান্তি কমবে।