প্রবাসী শ্রমিকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ হলেও প্রবাসী আয়ে সপ্তম স্থানে। নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে প্রবাসীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়ে চললেও, সেই অনুপাতে রেমিট্যান্স বাড়ছে না। যার নেপথ্যে রয়েছে রেমিট্যান্স পাঠাতে জটিলতা এবং হুন্ডিতে বাড়তি দাম পাওয়া। আমাদের দেশে অনেক প্রবাসী সব হারিয়ে, পুলিশের হাতে আটক হয়ে, বাধ্য হয়ে, শূন্য হাতে নিজ দেশে ফিরে আসা শ্রমিকের সংখ্যাও কম নয়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, এ বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ৮০ হাজার ৮১১ জন প্রবাসী। তাঁদের মধ্যে পুরুষ কর্মী ৭৮ হাজার ৭৯ জন এবং নারী কর্মী ২ হাজার ৭৩২ জন। তবে এর বাইরে যারা পাসপোর্ট নিয়ে ফিরে আসছেন, তাঁদের কোনো হিসাব নেই এ সংস্থার কাছে। অভিবাসন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যর্থ অভিবাসনের প্রকৃত চিত্র আরও নাজুক। তবে প্রবাসী কর্মীরা যে উন্নয়নের অংশীদার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাঁদের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ও প্রবাসী আয় বাড়াতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। প্রবাসী কর্মীদের বেশির ভাগই প্রবাসে যান দালালদের মাধ্যমে, ফলে তাদের অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। শুধু যে দালালদেরই বেশি টাকা দিচ্ছেন, তা নয়, অনেকে ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার কারণে গন্তব্য দেশটিতে তাঁরা নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। যে চাকরির কথা বলে তাঁদের বিদেশে নেওয়া হয়, সেই চাকরি দেওয়া হয় না এবং অধিকসংখ্যক প্রবাসী কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা কাজ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হন। প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার আরেকটি কারণ অদক্ষতা। তাই জায়গা ধরে রাখতে হলে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের টেকনিক্যাল ট্রেনিং ও টেকনিক্যাল গ্রেডের প্রশিক্ষণ ও ভাষাগত দক্ষতা বাড়াতে পারলে দেশের শ্রমিকরা বিদেশে অবশ্যই ভালো করতে পারবে। পাশাপাশি একজন কর্মীও বিদেশে গিয়ে যাতে প্রতারিত হয়ে ফিরে না আসেন, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। হয়রানি ও প্রতারিত হওয়া থেকে প্রবাসী কর্মীদের রক্ষা করতে হলে প্রতিটি নিয়োগ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্ত্বেও তাঁরা যাতে বিদেশে হয়রানির শিকার না হন, গন্তব্য দেশটিকে তা নিশ্চিত করাও জরুরি। এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে। নানামুখী পদক্ষেপ সত্ত্বেও যদি কোনো প্রবাসী কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন, তাহলে দেশে তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে তাঁরা যাতে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারেন, সে জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। দেশ থেকে টাকা পাঁচার বন্ধ করতে হবে। আশা করি, প্রবাসী শ্রমিকদের ন্যায্য ও যৌক্তিক আইনি সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার সব রকম পদক্ষেপ নেবে।