প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও শান্ত পরিবেশ এক জলের বুকে লাল শাপলার গালিচার মাঝে ঝাঁক বেঁধে ডানা মেলছে শত শত অতিথি পাখির দল। উড়ে চলা পাখির কিচির-মিচিরে মুখরিত হয়ে উঠে চারিপাশ। প্রতিবছর শীত আসলেই বাহারি রঙের এসব অতিথি পাখির খুনসুঁটি আর ছুটাছুটি যে কারো মনে উদ্বেলিত করে তুলে। শীতের মৌসুমে প্রকৃতির অপরূপ অলঙ্কার হয়ে ওঠা এ অতিথি পাখির ঝাঁক যখন দল বেঁধে উড়ে চলার সে সময় দৃশ্য দেখে মনে হয় যেন জলরঙে আঁকা ছবি। প্রতিবছর শীতকাল এলেই বাংলাদেশের জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা অতিথি পাখিতে। আদর করে আমরা সে গুলোকে বলি অতিথি পাখি। মূলত এই অতিথি পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে। আবার গরমের আবহাওয়া পড়লে অতিথি পাখিরা সব চোলে যায় তাদের গন্তব্য স্থানে। উপজেলার আশুরহাট গ্রামটিতে হঠাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসা শুরু করে। স্থায়ী কোন বাসা না করায় পাখি গুলো সারাদিন যায় আর আসে। এভাবে কাটছে কয়েক বছর, কিন্তু এলাকার কেউ অত্যাচার করে না। এভাবে কাটছে বছরের পর বছর ও কেটে যায় কয়েক বছর। ২০১৩ সালে স্থায়ীভাবে বাসা বেঁধে বসবাস শুরু করে হাজার হাজার পাখি। ১০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠেছে পাখির অভয়ারণ্য। যা রক্ষার্থে স্থানীয় ভাবে পাহারাদারের ব্যবস্থাও করা হয়। তখন থেকেই আশুরহাট গ্রামটি লোকমুখে পাখি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে,যা এলাকার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়েছে। গ্রামটির অবস্থান উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে। ২০১৩ সালেই তৎকালীন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন এই এলাকাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছরের মতো এবার ও গ্রামের মধ্যপাড়ার আবদুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ে শিমুুল, জাম, মেহগনী গাছের ডালে ডালে বাসা বাঁধে হাজার হাজার পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া, পরিমিত খাবারের জোগান থাকায় পাখি গুলো এখানেই জায়গা করে নিয়ে থাকে প্রতি বছর শীতের সময়। তাই শীতকাল এলেই দূর-দূরান্ত থেকে আসতে শুরু করে অতিথি পাখি। শিমুল গাছে থাকা পাখি গুলো সব সময় গাছেই অবস্থান করে। বিশেষ করে প্রতি বছর নভেম্বর মাছ এলই এসব পাখি চোলে আমে আশুরহাট এলাকায় ও মার্চ এপ্রিলে পাখিরা আবার তাদের নির্দিষ্ট স্থানে চোলে যায়। অভয়ারণ্য তৈরির শুরু থেকেই নানারকম হুমকির মুখে পড়েতে হয় অতিথি পাখিদের। রাতের আঁধারে পাখি নিধন, নিরাপত্তা ও আ¤্রয়স্থল চরম সংকটে পড়ে। বর্তমানে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কেটে ফেলা হচ্ছে পাখির অভয়ারণ্যের গাছ। হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত এই অভয়ারণ্য। কিন্তু গাছ কেটে ফেলার কারণে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন অতিথি পাখির বসবাস সংকুচিত হয়ে পড়বে। সেই সাথে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে জেলার একমাত্র এই পাখির অভয়ারণ্য। এলাকাবাসীর দাবি, এই পাখি অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা গাছ কাটা ও পাখি শিকার যেন না করা হয়। শৈলকুপার আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্য আরিফ জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের মকররম আলীর ছেলে নইমুদ্দিন ও বদর উদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন এই পাখি অভয়ারণ্যের গাছ কেটেছে। আরও কেউ কেউ গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কেটে ফেললে পাখিশূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী জানান, জমির মালিকেরা মাঝে মধ্যেই গাছ কাটে নিয়ে থাকেন। এভাবে গাছ কাটার কারণে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পাখিশূন্য হয়ে পড়বে এই অভায়রণ্য। কোনো পাখি শিকারি যাতে পাখি শিকার করতে না পারে তাই আমরা সারা রাত ধরে পাহারা দিয়ে থাকি। আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, এভাবে গাছ কাটলে অতিথি পাখিরা কোথায় এসে দাঁড়াবে। আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এই মুহূর্তে গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে আগামীদিনে অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি এই এলাকায় আসবে না। পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র অভয়ারণ্য। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখির অভয়ারণ্যের গাছ কাটার খবর পেয়েছি। পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং পাখি অভায়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে ব্যাপারে প্রয়োজণয়ি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম ও শহরের সব বয়সী মানুষজন মুগ্ধতার আবেশে দেখছে জলাশয় ও অতিথি পাখির যোগসূত্রের এই নৈসর্গিক দৃশ্য আমাদের চিত্তানন্দের উপাদান এই পাখিরা কিন্তু জীবন ও জীবিকার আশায় হাজার-অযুত পথ পাড়ি দিয়ে দিনের পরে রাত উড়ে উড়ে আসে আমাদের দেশে, আর এত পথ পাড়ি দিয়েও শেষ রক্ষা হয়না, আমাদের একটু বেআইনী ক্ষুদ্র আনন্দের শিকার হয়ে ওদের প্রান দিতে হয়! পাখি শিকার বন্ধ করে আমরা কি এই অতিথিদের প্রতি আরো একটু সদয় আর ভালোবাসার পরিচয় দিতে পারিনা। এমন সৌন্দর্য দেশের খুব কম স্থানেই দেখা মিলতে পারে এমন টা ধারনা অনেকের কাছে। এসব অতিথি পাখি এলাকাঢ এভাবে প্রতি বছর আসা এ ঝিনাইদহ জেলার জন্য স্যেভাগ্য।