ওয়ানডেতে এখন ভারতের হয়ে নিয়মিতই কিপিং করছেন লোকেশ রাহুল। তবে বড় দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেটের চিত্র ভিন্ন। টেস্ট ক্যারিয়ারে কিপার হিসেবে খেলেননি কখনোই। এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সেই চ্যালেঞ্জ নিতেই দেখা যাবে রাহুলকে। নতুন এই ভূমিকায় নিজেকে মেলে ধরতে তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাসী বলেই জানালেন ভারতের কোচ রাহুল দ্রাবিড়। ৭৫ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৫টিতেই কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেব খেলেছেন রাহুল। এর মধ্যে এই বছরই তাকে এই যুগল ভূমিকায় দেখা গেছে ২৩ ম্যাচে। সড়ক দুর্ঘটনায় রিশাভ পান্ত দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে চলে যাওয়ায় রাহুলই এই ভূমিকা পালন করছেন নিয়মিত। তবে ৪৭ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেননি একটিতেও। এমনকি ৯০ ম্যাচের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে স্রফে একটি ম্যাচ শুরু করেছেন কিপার হিসেবে। বেশির ভাগ সময়ই টপ অর্ডারে ব্যাট করছেন, বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলেছেন বলে মূলত কিপিং করা হয়নি তার। সেই রাহুলই এখন হতে যাচ্ছেন ভারতের টেস্ট কিপার। পান্তের দুর্ঘটনার পর টেস্ট কিপার হিসেবে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিলেন শ্রিকার ভারত। কিপিং ভালো করলেও ৫ টেস্ট খেলে ফিফটি করতে না পারায় একাদশে জায়গা হারান তিনি। সবশেষ দুই টেস্টে কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেন ইশান কিষান। কিষান এবারও ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের দলে। কিন্তু হুট করেই ব্যক্তিগত কারণে তিনি দেশে ফিরে যান। এতেই রাহুলের সামনে দুয়ার খুলে যায়। ভারতের টেস্ট একাদশে জায়গা হারিয়েছিলেন তিনি বছরের শুরুতে। এই সফরে স্কোয়াডে ফিরলেও একাদশে জায়গা ছিল অনিশ্চিত। কিষান না থাকায় কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে তার সামনে সুযোগটি আসছে। স্কোয়াডে যদিও শ্রিকার ভারত আছেন এবারও। তবে রাহুলেরই খেলা নিশ্চিত। এই সম্ভাবনা নিয়ে কদিন আগেই নিজের আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন রাহুল। সেঞ্চুরিয়নে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে কোচ দ্রাবিড়ও বললেন, রাহুলের নতুন ভূমিকা নিয়ে তারাও অপেক্ষায় আছেন রোমাঞ্চ নিয়ে। “আমি এটিকে রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি এবং তার জন্য সুযোগ নিশ্চিতভাবেই ভিন্ন কিছু করার। ইশানকে (কিষান) যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে না, সুযোগটি তাই তৈরি হয়েছে। আমাদের গোটা দুই কিপার আছে বেছে নেওয়ার জন্য, রাহুল তাদের একজন। তার সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে আমাদের। সে খুবই আত্মবিশ্বাসী, এটি চেষ্টা করে দেখতে খুবই আগ্রহী সে।” সমস্যা হলো, ওয়ানডে আর টেস্টে কিপিংয়ের বাস্তবতা ভিন্ন। কিপিং ও ব্যাটিং দুটিই যে লম্বা সময় ধরে করতে হয়! যদিও কিপার হিসেবে খেললে ব্যাটিং অর্ডারে হয়তো ৬-৭ নম্বরে খেলবেন তিনি। তার পরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিয়মিত কিপিং না করলে টেস্টে লম্বা সময় কিপিং করা কঠিন। দ্রাবিড় তবু বিশ্বাসটা পাঁচ্ছেন ওয়ানডের রাহুলকে দেখেই। তাছাড়া কিপিংয়ের মূল চ্যালেঞ্জটা স্পিন বোলিংয়ের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে টার্নিং ও অসমান বাউন্সের উইকেটে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই পরীক্ষা দিতে হবে না বলেও রাহুলকে নিয়ে ভরসা পাঁচ্ছেন দ্রাবিড়। “আমরা জানি, এটি সে খুব একটা করেনি। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিয়মিতই করছে। কাজটা অবশ্যই কঠিন, একই দিনে পুরো ৫০ ওভার কিপিং করা এবং এরপর ব্যাট করা। শরীরের অনেকটাই শুষে নেয় তা। তবে গত ৫-৬ মাসে তার প্রস্তুতি ভালোই হয়েছে। অনেক কিপিং সে করেছে, যদিও সাদা বলে। এখন এটি তার জন্য নতুন ও রোমাঞ্চকর একটা চ্যালেঞ্জ হবে।” “এখানে একটা ব্যাপার হলো, স্পিন বোলিং খুব একটা সামলাতে হবে না। স্পিনের চেয়ে পেসই এখানে বেশি হবে। কাজেই একটু সহজে সে এই ভূমিকায় ঢুকতে পারবে।” কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহুলের ভূমিকার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ভবিষ্যতেও এটা তিনি নিয়মিত করবেন কি না। তিনি যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো করেন, এরপর সামনে কিষান ও রিশাভ পান্তও ফিরবেন, তখন কাকে বেছে নেবে ভারতীয় দল? দ্রাবিড় সেই উত্তর ছেড়ে দিলেন সময়ের হাতেই। “আমরা পরখ করে দেখব, কীভাবে এটা এগোয় এবং সবকিছু কীভাবে হয়। তবে রাহুলের মতো একজনকে পাওয়া এবং এরকম একটি বিকল্প থাকা দারুণ ব্যাপার। ব্যাট হাতে তার যে সামর্থ্য, আমাদের জন্য তা দারুণ কার্যকর হবে। দেখা যাক, (কিপিং) গ্লাভস হাতে সে কেমন করে। ওয়ানডেতে সে খুব ভালো কিপিং করছে। সেটিই এখন লাল বলের ক্রিকেটে একটু বেশি সময় ধরে বয়ে আনার ব্যাপার।”