এবারের নির্বাচনে এই আসনে নেই জোট মহাজোট। মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীও। কোথায় যাবেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ? কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন তারা? এই আসনে শুরূ থেকেই বিব্রতকর অবস্থ্ায় পড়েছে সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আ.লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগের জেলার নেতৃবৃন্দ গোটা জেলায় মহাজোটের অস্তিত্ব অস্বীকার করছেন। কিন্তু মুখ খুলছেন না উপজেলা আ.লীগের নেতারা। ক্ষোভে ইউনিয়নের একাধিক নেতা বলছেন এই নির্বাচনে উপজেলা আ.লীগ চুপচাপ লীগ করছেন। নির্বাচনী কোন সভা করছেন না আ’লীগ। কোন ধরণের সিদ্ধান্তও দিচ্ছেন না। উপজেলার ২/১ জন আ.লীগ নেতা বলছেন ‘ম্যাসেস ক্লিয়ার’। তাই আ.লীগের জেলা ও কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের ইশারায় আমরা ‘ঈগল’ করছি। তবে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের মতে এইসব গুজব ও ভাওতাবাজি। তাই আমারা সহ মঈন উদ্দিনের (কলারছড়া) পক্ষে কাজ করছেন আ.লীগের একটি বড় অংশ। এসব কারণে উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে এখন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। ঐক্যবদ্ধ ভাবে এক জায়গায় নেই দলটির নেতৃবৃন্দ। সুযোগ বুঝে প্রত্যেকের পছন্দে পক্ষ অবলম্বন করছেন তারা। সংরক্ষিত নারী আসনের (৩১২) সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দলটির অবস্থান পরিস্কার করবেন বলে জানিয়েছেন। সরজমিন অনুসন্ধান ও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ৯ দিন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (সরাইল-আশুগঞ্জ) আওয়ামী লীগের অবস্থা হ-য-ব-র-ল। নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা পছন্দমত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। কেউ লাঙ্গল। কেউ কলা। কেউ ঈগল। এই অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত একেবারেই নিরব। দলটির স্থানীয় দায়িত্বশীল জনৈক নেতা গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে চলছেন। একই দলের দায়িত্বশীল আরেক নেতা বলছেন ‘ম্যাসেজ ক্লীয়ার’। দল, জনগণ ও এলাকার বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে ঈগলের পক্ষেই কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের একটা অংশ ঈগলের পক্ষে মাঠে নেমে পড়েছেন। আরেকটি অংশ কলারছড়ার পক্ষে কাজ করছেন তোড়জোড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনী মাঠে দলটির অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরাও পরিস্কার বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। লাঙ্গলের পক্ষেও যে আ.লীগের কেউ নেই এমনটাও শতভাগ সত্য নয়। উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. হামিদুল হক বলেন, দলের উপরের নির্দেশে এলাকার নেতা জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল) নির্বাচন করছি। চুন্টা ইউনিয়ন আ.লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচন হাতের নিকটে। এখন পর্যন্ত উপজেলা আ.লীগের নেতৃবৃন্দ কোন নির্দেশনা না দিয়ে চুপচাপ লীগের পরিচয় দিচ্ছেন। শাহবাজপুর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল বলেন, এখনো দলের কোন সিগনাল পায়নি। তাই নেতা কর্মীরা যারযার মত করে নির্বাচন করছেন। কাউকে বাঁধা দিচ্ছি না। কিছু বলছিও না। এভাবেই চলছে। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মো. আমিন খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. বাবুল হোসেন বলেন, এই আসনে নৌকা নেই। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক জননন্দিত নেতা মঈন উদ্দিন আওয়ামী লীগ নেতাও। তাই আমরাসহ আ.লীগের অনেক নেতা কর্মীই জনপ্রিয় এই নেতার (কলারছড়া) নির্বাচন করছি। প্রধানমন্ত্রী বা আ.লীগের কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা থাকলে তো আমাদের কাছে পত্রই আসত। উপজেলা আ.লীগ সভা করে সিদ্ধান্ত জানাতো। ইশারা, সিগনাল এসব গুজব ভূঁয়া ভাওতাবাজি। কলারছড়ার জনপ্রিয়তা দেখে ষড়যন্ত্র চলছে। উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি এড. আশরাফ উদ্দিন মন্তু নিজ গ্রামে জিয়াউল হক মৃধার এক নির্বাচনী সভায় বলেছেন, জাপা দুই ভাগে বিভক্ত। নেতৃত্বে আছেন জি এম কাদের ও রওশন এরশাদ। মৃধা রওশন পন্থী নেতা। মৃধা কাজের ও জনগণের নেতা। শেখ হাসিনা মৃধাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনেন। পছন্দও করেন। মহাজোটের দুইবারের নির্বাচিত এমপি হওয়ায় শেখ হাসিনা এই আসনে মৃধাকে মনোনয়ন দিতে বলেছিলেন। জাপা তা করেননি। তাই শেখ হাসিনার প্রত্যাশা এই আসনে মৃধাই জয়লাভ করূক। তাই আমরা মৃধার (ঈগল) নির্বাচন করছি। সরাইল উপজেলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ঠাকুর বলেন, ম্যাসেজ ক্লীয়ার। নৌকা নেই। মহাজোটও নেই। তবে এই আসন থেকে পরপর দুইবার মহাজোটের মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন মৃধা। তাঁর সময়কালে এই জনপদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। তাই দল, এলাকা ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে ঈগলের পক্ষে কাজ করতে হচ্ছে। আশুগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাছের বলেন, এই আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নেই। দলের কোন নির্দেশনাও নেই। তাই আওয়ামী লীগেরই লোক মঈন উদ্দিনের কলারছড়ার নির্বাচন করছি। সিদ্ধান্ত না আসা ও নির্বাচনে দলের নেতা কর্মীদের হ-য-ব-র-ল অবস্থা সম্পর্কে সরাইল উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শিউলী আজাদ বলেন, আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) নির্বাচনে করণীয় বিষয়ে উপজেলা ও ইউনিয়নের সকল নেতা কর্মীকে নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত দিতে পারব। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র.আ.ম উবায়দুল মোতকাদির চৌধুরী বলেন, জাপা’র মহাসচিব বলেছেন আমরা কোন জোট মহাজোটে নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কোথাও মহাজোটের প্রার্থী নেই। এমনটি কেউ বা লিখলে সেটা হবে প্রতারণা।