আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উৎসবের আমেজ ততই বৃদ্ধি পাঁচ্ছে চট্টগ্রামের হাটহাজারী সংসদীয় আসনে। প্রার্থীরা রাত দিন কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রচারনার কাজে ব্যস্ত দিন কাটাচ্ছে। সংসদীয় এলাকার আনাচে কানাচে, অলি গলিতে প্রার্থীদের প্রতীক সম্বলিত পোস্টার, ব্যনার ও পেষ্টুনে ছেয়ে গেছে। পোস্টার ব্যানার লাগাতে কাজ করছে শ্রমিক কর্মীর। একদিকে আমন ধান কাটা, অন্যদিকে শীতকালীন সব্জী ক্ষেতের কাজ ও ইরি চাষাবাদ কাজ চলছে জমিতে। এসব কাজে শ্রমিক সংকট তো আছেই। প্রার্থীদের নির্বাচনী কাজে শ্রমিক নিয়োগ হওয়ায় চাষাবাদের কাজে শ্রমিক সংকট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার, প্রচারনা, জনসংযোগ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অতীতের নির্বাচন নিয়ে নানা কথার মধ্যে এবারের নির্বাচন গ্রহনযোগ্য করার নির্বাচন কমিশনের যে তাগিদ এতে করে সকল প্রার্থী কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি করার বিষয়ে জনসংযোগ কালে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন। যাতে করে ভোটের বিষয়ে ভোটারদের শংকা দূরীভূত হয়। হাটহাজারী সংসদীয় আসন ৮ জন প্রার্থী নির্বাচন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে চার জনের মধ্যে মুল প্রতিদ্বন্ধীতা হবে বলে লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে। জানা যায়, জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এবার ও হাটহাজারী সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ সরাসরি কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি। ফলে এই আসনে জাতীয় পার্টি নাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ভোট কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করে রায় তাঁর পক্ষে নেওয়ার জন্য কাজ করছেন। তিনি ৭ম বারের মত এবার নির্বাচন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাঁর পক্ষে আওয়ামী লীগের একটি অংশ সরাসরি নির্বাচনী প্রচারের মাঠে রয়েছে। তাই তিনি এবার ও নির্বাচনী বিজয়ে আশাবাদী। বিশেষ করে বিগত তিন বার মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে এলাকায় শিক্ষা স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়নে তিনি কাজ করছন। তিনি এই আসনে অন্যান্য প্রার্থীদের মুল প্রতিদ্বন্ধী বলে ইতোমধ্যে লোকমুখে প্রচারিত হচ্ছে। তাঁর বাড়ি ৪নং গুমানমর্দ্দন ইউনিয়নে। এদিকে আওমীলীগ এই আসনে কোন প্রার্থী না দিলে ও আওয়ামী রাজনীতির ঘরনার দুই জন স্বতন্ত্র প্রার্থী, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। এই দুই প্রার্থীর মনোনয়ন প্রথম দিকে অবৈধ ঘোষণা করা হলে তাঁরা আপিলের মাধ্যমে তাদের প্রার্থীতা ফিরে পেয়ে তাঁরা ও ভোটের মাঠে রয়েছেন। এই দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী একজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি ও অন্যজন সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী কেটলি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকায় তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। তিনি আবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। তিনি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুসারে অবাদ নির্বাচনে তিনি বিজয় হবেন বলে আশাবাদী। তাঁর বাড়ি ৩ নং মির্জাপুর ইউনিয়নে।অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির হায়দার করিম বাবুল ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী জনসংযোগ করছেন। তিনি এই নির্বাচনের পুর্বে আরো দুই বার নির্বাচন করে বিজিত হয়েছেন। পূর্বে দুইবার নির্বাচন করার কারণে তাঁর নির্বাচনী এলাকায় একটা বিশেষ পরিচিতি রয়েছে বলে তিনি গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তাঁর জন্ম স্হান ১১ নং ফতেপুর ইউনিয়নে। তাঁর সাথে ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী কাজ করছেন। তাই তিনি ও নির্বাচন বিজয়ের আশাবাদী বলে উল্লেখ করেন। এদিকে প্রগতিশীল গনতান্ত্রিক ফোরামের সভাপতি মোঃ নাজিম উদ্দীন প্রকাশ ভি পি নাজিম তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ই সি কর্তৃক নিবন্ধন না পেয়ে তিনি তৃনমুল বি এন পির প্রতীক সোনালী আঁশ (পাট) প্রতীক নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি পি হিসাবে তাঁর একটা বিশেষ পরিচিতি রয়েছে। তাছাড়া ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর রাজনীতিতে হাতে খড়ি। সেই হিসেবে তাঁর এলাকায় পরিচিত ভালো। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের স্হান ফতেপুর তাঁর জন্ম স্হান। তাই তাঁর পরিচিত ভালো। ভি পি নাজিম ও নাসির হায়দার করিম বাবুল দুই জন একই ইউনিয়ন তথা ১১ নং ফতেপুর ইউনিয়ন বাসিন্দা। বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোক্তার আহাম্মদ সিদ্দিকী হাটহাজারী পৌরসভার বাসিন্দা। সরকার তথা ইসির ঘোষণা অনুসারে নির্বাচনকে গ্রহনযোগ্য ও অর্থবহ করে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। মনোনয়ন ও প্রতীক পেয়ে তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ ও প্রচারনা শুরু করেছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেক ওয়ার্ড ও ইউনিয়নে নিজ দলের কর্মী সমর্থক রয়েছে। নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে যে নির্দেশনা দিয়েছেন, তাঁর দলের কর্মী ও সমর্থকেরা কেন্দ্রে ভোটের পরিবেশ পেলে অবশ্যই কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট প্রদান করবেন বলে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন তাঁর দলের কর্মী সমর্থকেরা নিবেদিত। দলীয় আদর্শের প্রতি অবিচল। তাই তিনি ও নির্বাচনে বিজয়ের আশাবাদী। বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ার প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক হাফেজ আহম্মদ এর বাড়ি ও হাটহাজারী পৌরসভার মধ্যে। তিনি পূর্বেও এই আসনে নির্বাচন করেছেন। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। তিনি কিন্ডারগার্টেন এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তা। প্রতিবছর তিনি তাঁর সংগঠের পক্ষ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকেন। তাঁর ও বিশেষ পরিচিত রয়েছে। এই পরিচিতির কারণে তাঁর ও এলাকায় প্রভাব রয়েছে। তিনি তাঁর কর্মী সমর্থকদের নিয়ে প্রচারনা করছেন। এবারের নির্বাচনে তিনি বিজয়ের আশাবাদী বলে গনমাধ্যমকে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টির একতারা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী কাজী মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরীর বাড়ি ২নং ধলই ইউনিয়ন। তাঁর দল ই সি কর্তৃক নতুন নিবন্ধিত। নতুন রাজনৈতিক দল হলে ও এই দলের একটা পরিচিত রয়েছে। তিনি তাঁর দলীয় নেতা কর্মী ও সমর্থক নিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছে। তিনি ও চেষ্টা করছেন বিজয়ের বরন ঢালা তাঁর পক্ষে আনতে। বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট টেলিভিশন (বি এন এফ) প্রতীকের আবু মোহাম্মদ শামসুদ্দীন নামে এক প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিলে ও তাঁকে প্রচার প্রচারনায় মাঠে দেখা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে। ১টি পৌরসভা, ১৪ টি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১ নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ও ২ নং জালালাবাদ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১শ ৪৬টি। এতে ১ হাজার ৬১টি বুথে ভোট গ্রহন করা হবে। এইজন্য ভোট গ্রহনের ইতোমধ্যে দায়িত্ব ও বন্ডন করা হয়েছে। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৬ হাজার ২ শ ৮২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ১ শ১৭জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ১শ৬৫ জন।