বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পদক-কাবাডি বাদে বাংলাদেশের কোন খেলায় সেটি সম্ভব হয়েছে, একমাত্র আর্চারিতেই। অলিম্পিক কোটা অর্জন, সেটিও মাত্র দ্বিতীয় ঘটনা হিসেবে ঘটেছে আর্চারিতেই। তা ছাড়া নিয়মিত বিরতিতে এশিয়া কাপ বা সমমানের টুর্নামেন্টগুলোতে পদক আসায় খেলাটি নিয়ে এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে বহুগুণ। তবে অলিম্পিক কোটা বা বিশ্ব আসরে পদক জেতাটাকে নিশ্চয় এখনো অভ্যাসে পরিণত করতে পারেননি আর্চাররা। গত বছর দুয়েকে তেমন আর কোনো সাফল্য না আসায় তাতে মনে হতেই পারে রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকীরা সেই আলো হারিয়েছেন। অলিম্পিক কোটা ও বিশ্ব আসরে পদক-আর্চারিতে এ দুটি বড় সাফল্যই এসেছে রোমানের হাত ধরে। সেই তিনি ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে শুরু করে এ বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই রোমানের আলো থেকে বঞ্চিত দেশের আর্চারি প্রায় একটা বছর। এশিয়ান গেমসে ফিরেই কিন্তু রোমান তার সব ভুলিয়ে দিতে চলেছিলেন। বাংলাদেশের ছেলেদের দল ব্রোঞ্জ মেডেল ম্যাচ খেলে এ আসরে। অর্থাৎ ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই একটি ম্যাচ জিততে পারলেই এশিয়াডের মতো আসরে পদকও উপহার দিত আর্চারি। এবারের আসরে ক্রিকেট ও বক্সিং বাদে পদকের এত কাছাকাছি যেতে পারেনি কিন্তু অন্য কোনো খেলাই। রোমানের সতীর্থ হাকিম আহমেদ তবু আক্ষেপের বছর বলছেন ২০২৩ সালটাকে, ‘কারণ আমরা অলিম্পিক কোটা অর্জন করতে পারলাম। এশিয়াডে পদক পেলে সেই কোটাও পেতাম। সেটা হলো না। এরপর ব্যাংককে কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টটাতেও পারিনি। কাছাকাছি (কোয়ার্টার ফাইনালে) গিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা যথেষ্ট হয়নি।’ বছরের শুরুতে তাইওয়ানে এশিয়া কাপ স্টেজ ওয়ানে সোনা জিতেছে বাংলাদেশ। তেমন আসরে সোনা এসেছিল তার আগের বছরও। তবে ফুকেটে সে আসরে তিন সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ। তাইওয়ানে একটি। এ বছর এশিয়া কাপ স্টেজ টুতে আসে একটি ব্রোঞ্জ। গত বছর যেখানে এই পর্যায়ে ছিল চারটি রুপা ও চারটি ব্রোঞ্জ। সেটিও কমবেশি হতেই পারে একেক বছরে। তবে ভারতের মতো দলগুলো যেখানে বিশ্বকাপ পর্যায়ে নিয়মিত পদক জেতে, বাংলাদেশ গত দুই বছরে সেখানে তেমন সম্ভাবনাই তৈরি করতে পারেনি। পারলে হয়তো বা এশিয়ান গেমস বা কোটার আক্ষেপটাও মিটে যেত। তেমন সাড়া ফেলা পারফরম্যান্স না দেখার অতৃপ্তি আছে তাই বাংলাদেশে খেলাটার ডেভেলপমেন্ট পার্টনার সিটি গ্রুপের ব্র্যান্ড ম্যানেজার রুবাইয়াত আহমেদেরও, “আমাদের ‘গো ফর গোল্ড’-এর ওভারঅল প্রজেক্ট নিয়ে আমরা হ্যাপি। তবে ইনডিভিজুয়াল পারফরম্যান্স যদি বলেন, সেখানে কিছুটা ঘাটতি ছিল। সব খেলাতেই এই উত্থান-পতন যায়। এ বছর রোমান সানা, দিয়া সিদ্দিকীর বিয়ের বিষয়টিও ছিল। ওরাই তো পারফরম করে আসছিল গত কয় বছরে। তার ওপর রোমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দিয়েও গেল।’ তবে এই সূত্রে শীর্ষ পর্যায়ে পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ের ঘাটতিও আবিষ্কার করেছে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানটি। সামনের করণীয়ও তাই ঠিক করে ফেলেছে তারা। রুবাইয়াত যেমন বলেছেন, ‘আর্চারিতে আমরা নিজেদের কিন্তু পৃষ্ঠপোষক বলি না, বলি ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। আমরা ফেডারেশনের সঙ্গে বসেই কর্মপরিকল্পনা সাজাই। এ বছর যেমন আমাদের মনে হয়েছে, আমাদের পাইপলাইনে পর্যাপ্ত খেলোয়াড়ের ঘাটতি আছে। শুরুতে আমরা বড় আকারে একটি প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি করেছিলাম। সামনে আবারও সেটি করতে হবে।’ জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ জিয়াউর রহমান, যিনি এই মুহূর্তে সৌদি আরবে কোচিং করাচ্ছেন, তিনিও রোমান-দিয়াদের নিয়ে আশা হারাচ্ছেন না, ‘হতাশ হওয়ার মতো কিছুই হয়নি। আর্চারদের পারফরম্যান্স খারাপ নয়। ছেলেদের দলটা তো দুর্দান্ত। আগামী বছর শেষ অলিম্পিক কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্টটাতেই হয়তো ওরা কিছু করে ফেলতে পারে।’