ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য জাপা’র রওশন পন্থী নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার (ঈগল) পক্ষে মাঠে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ। গত ২৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ এলাকার হোটেল সুরমা ইন-এ অনুষ্ঠিত দলীয় সভায় উপরের ম্যাসেজ ও জেলার দায়িত্বশীল নেতার রেফারেন্স দিয়ে এ প্রস্তাব দিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে বেঁকে বসেছেন উপজেলার ৪ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। তারা বলছেন ভেবে দেখছি। আর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সভাপতি হামিদুল হক বলছেন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে মৃধার পক্ষে মাঠে কাজ করার। উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এড. নাজমুল হোসেন ফোন রিসিভ না করলেও সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম বলেন, সাবেক এমপি জিয়াউল হক মৃধার পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়েছে। আবার উপজেলা ছাত্রলীগ, ইউপি আ.লীগ ও যুবলীগের অনেক নেতা কর্মী কাজ করছেন মঈন উদ্দিনের পক্ষে। ফলে বিষয়টিকে ঘিরে ধু¤্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ নাজমুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত নারী আসনের (৩১২) এমপি ও আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ঠাকুর ও ৯ ইউনিয়নের ১৬ জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক। নেতা কর্মীরা জানায়, গোপনীয়তা রক্ষা করে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যৌথভাবে মৃধার পক্ষে সকলকে ভোটের মাঠে কাজ করতে বলেছেন। একাধিক নেতার প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, উপরের ম্যাসেজ আছে। এ ছাড়া জেলার দায়িত্বশীল নেতাও এমনটি চাচ্ছেন। তাদের এই প্রস্তাবে সরাইল সদর, কালীকচ্ছ, নোয়াগাঁও, শাহবাজপুর, শাহজাদাপুর ইউনিয়ের ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ সম্মত হলেও বিপাকে পড়েন অরূয়াইল, পাকশিমুল, চুন্টা ও পানিশ্বর ইউনিয়নের নেতারা। তারা বলে ওঠেন কাজটি আমাদের জন্য খুবই জটিল। কারণ আমরা কথা দিয়ে ফেলেছি। অরূয়াইল ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি আবু তালেব ও পানিশ্বর ইউপি আ.লীগের সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, আমরা তো আদৌ এই ধরণের কোন ব্রিফিং দলের কোন জায়গা থেকেই পায়নি। আপনারা কোথায় পেলেন? ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করেছি। তৃণমূলের নেতা কর্মীরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। আমরাও তাদেরকে মতামত দিয়েছি। এখন সেই জায়গা থেকে ফিরে আসা সম্ভব না ও হতে পারে। তারপরও ভেবে দেখছি। ওঁরা রূলিং দিয়েছেন। আমরা রূলিং শুনে এসেছি। সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- শাহাজাদাপুর ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. ছায়েফ উল্লাহ ঠাকুর, সম্পাদক শেখ মো. লুৎফুর রহমান মিয়া, শাহবাজপুর ইউপি আ.লীগের সভাপতি খায়রূল হুদা চৌধুরী বাদল, সম্পাদক মো. শাহেদ আলম বাবুল, সরাইল সদর ইউপি আ.লীগের আহ্বায়ক মো. কায়কোবাদ, যুগ্ম আহবায়ক-১ মো. বিল্লাল হোসেন, চুন্টা ইউপি আ.লীগের সভাপতি শেখ মো. হাবিবুর রহমান, পানিশ্বর ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. দ্বীন ইসলাম, সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন, কালীকচ্ছ ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান, সম্পাদক মো. ইসমাঈল খান, পাকশিমুল ইউপি আ.লীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম ও অরূয়াইল ইউপি আ.লীগের সভাপতি আবু তালেব। দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াগাঁও ইউপি আ.লীগের সভাপতি হামিদুল হক ও সরাইল সদর ইউনিয়নের যুগ্ম আহবায়ক-১ মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, সভাপতি সম্পাদকের উপস্থিতি ও প্রস্তাবে মৃধার পক্ষে কাজ করার বিষয়টি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়েছে। সূত্র জানায়, নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউল হক মৃধা মহাজোটের মনোনয়নে লাঙ্গল প্রতীকে জয়লাভ করেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনটি ছেড়ে দেয় তাদের তখনকার মহাজোটের অন্যতম শরীকদল জাপাকে। ওই নির্বাচনে জাপা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে এ আসনে দেয়া হয়েছিল লাঙ্গল প্রতীক। সদর উপজেলার কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল মৃধার মেয়ের জামাতা। নির্বাচনে সুবিধা করতে না পেরে মাত্র দুইদিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান রেজাউল। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মৃধা বিএনপি’র প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তারে কাছে পরাজিত হন। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদের সাথে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দ্বন্ধ লেগে যায়। মৃধা রওশন পন্থী হিসেবে পরিচিত হন। জি এম কাদেরের বিরূদ্ধে মামলা করে দল থেকে বহিস্কার হন মৃধা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছিলেন সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহজাহান আলম। জোটের জন্য আ.লীগের শাহজাহান আলমকে প্রত্যাহার করে নেয়। প্রার্থী হন জাপা’র রেজাউল ইসলাম। কিন্তু রেজাউলকে শুরূ থেকেই মেনে নেয়নি স্থানীয় আ.লীগ ও জাপা’র একটি অংশ। রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নৌকা প্রত্যাহার করে আমাকে প্রার্থী করা হলো। কিন্তু জেলা ও উপজেলা আ.লীগ আমাকে কোন সহযোগিতা করছেন না। তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগলের পক্ষে কাজ করছেন। জাপা’র কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন মঈন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তিনি ৭৬ হাজারের অধিক ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু নাছের আহমেদ বলেন, আমরা মঈন উদ্দিনের পক্ষে মাঠে কাজ করছি। এই আসনে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করছেন। অন্য প্রার্থীরা হলেন- বিএনপি’র দলছুট নেতা সদ্য সাবেক এমপি প্রয়াত উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার ছেলে তৃণমূল বিএনপি’র মাইনুল হাসান ( সোনালী আঁশ), সাবেক এমপি মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ছেলে ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস্ পাটির্র রাজ্জাক হোসেন (আম) ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ছৈয়দ জাফরূল কুদ্দুছ (ফুলের মালা)। প্রসঙ্গত: ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনটি সরাইল উপজেলার ৯টি, আশুগঞ্জ উপজেলার ৮টি সহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ১১২। সরাইল উপজেলার মোট ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭। আর আশুগঞ্জ উপজেলার মোট ভোটার ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৫।