ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে সরকারী (১নং খাস খতিয়ানভুক্ত) খাল উদ্ধার করলেন উপজেলা প্রশাসন। গত বুধবার দুপুরে উপজেলার চুন্টা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড পালপাড়ায় ছামির পাল ও যাদু পাল গং নামের দখলদারদের কবল থেকে মুক্ত করলেন খালটি। দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময় পর খালটি উদ্ধার হওয়ায় পানি নিস্কাশনের দূর্ভোগে থাকা আড়াই শতাধিক পরিবারে ফিরে এসেছে স্বস্থি। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সরাইল উপজেলায় সরকারী খাল দখল, ড্রেজারে ফসলি জমি কাটা ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুকুর ভরাট করা একটি স্বাভাবিক কাজে পরিণত হয়েছে। এসব অনিয়মে স্থানীয় ভূমি অফিস, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের যোগসাজস অনেকটা ওপেন সিক্রেট। চুন্টার ৬ নম্বর ওয়ার্ড পালপাড়ার এই খালটি স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে মাত্র এক কিলোমিটার উত্তরে। আজ থেকে ১০/১২ বছর আগে ছামিরপাল ও যাদুপাল খালটি দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেন। খালটির কোথাও বসতঘর, ল্যাট্রিন ইত্যাদি তৈরী করে দেদারছে ব্যবহার করছেন। ফলে ওই এলাকার প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবারের বাড়ি ঘরের পানি নিস্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। নিস্কাশনের ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২ টি পুকুরের পানিও পাড়ের উপর দিয়ে সড়কে চলে আসে। শুধু বর্ষা নয়, শুষ্ক মৌসুমেও সামান্য বৃষ্টি হলে জনগনের চলাচলের প্রধান সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে গ্রামের ওই অংশের শিক্ষার্থী, রোগী, নারী, পুরূষ সকলেই চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন দীর্ঘ সময় ধরে। কোথাও গিয়ে প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। কারণ চুন্টা এলাকায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরকারী জায়গার ফেরিফেরি/দখল ও খাল দখল বা লীজ পাইয়ে দেওয়ার কাজটি করতে বড় গোত্রের কতিপয় ব্যক্তি মিলে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন ৬০-৭০ বছর আগেই। তাদের উত্তরসূরিরা এখন এই কাজটি করছেন। পালপাড়ার সরকারী খাল দখলের পেছনে বড় অংকের লেনদেনের বিষয়টি চাউর রয়েছে গোটা মহল্লায়। এই ধরণের কাজে সেখানকার একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটও পেছনে থাকে। বিষয়টি জানতে পেরে গত বুধবার ওই গ্রামে ছুটে যান সরাইল উপজেলায় সদ্য যোগদানকৃত নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবা উল আলম ভূঁইয়া ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাছরিন সুলতানা। ওঁরা সেখানে অভিযান চালিয়ে ড্রেজারের সাহায্যে মাটি কেটে খালটি উদ্ধার করেছেন। এই কাজে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য। খাল উদ্ধারকালে ভুক্তভোগিরা স্বস্থির নি:শ্বাস ফেললেও দখলদার আর দালালদের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ। উপজেলা প্রশাসনকে বাহবা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবা উল আলম ভূঁইয়া বলেন, সরকারী খাল বা জায়গা অবৈধ পন্থায় দখলের কোন সুযোগ নেই। আর ভরাট করে জন দূর্ভোগ তৈরীর সাথে জড়িতদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ দখলদারদের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নিব।