জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল সফরকে ঘিরে শুক্রবার বিভাগের সর্বত্র উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরেছিলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে সড়কে নেমেছিলো সর্বস্তরের মানুষের ঢল। আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা ছিলেন উজ্জীবিত। নগরীর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী জনসভা হলেও গোটা বরিশাল বিভাগজুড়ে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। বিকেল তিনটায় জনসভা হলেও শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সভাস্থলে আসতে থাকেন। দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী সভাস্থল। একপর্যায়ে নৌকার শ্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাস্থল বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান। নির্বাচনী প্রচারনার অংশহিসেবে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আয়োজনে বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৭ আসনের নৌকার প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য সকাল দশটার পর থেকেই সভাস্থলের আশপাশে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। নেতাকর্মীদের ছোট-বড় মিছিলে নৌকা নৌকা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সভাস্থল ও তার আশপাশের এলাকা। নৌকা সাদৃশ্য ভ্যান ও হাতে হাতে ছোট কাঠের নৌকা নিয়ে নেতাকর্মীরা আসেন জনসভাস্থলে। মিছিলে অংশগ্রহণ করা আওয়ামী লীগ কর্মী গোলাম হেলাল মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের মাঝে আসছেন। এজন্য আমরা খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নয়; সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ কাজ করছে। সাবিনা খন্দকার নামের আরেক নারী কর্মী বলেন, ভোরে পরিবারের জন্য রান্না শেষ করে প্রধানমন্ত্রীর সভায় এসেছি। কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে যেন দেখতে পারি, সেজন্য সকাল সকাল জনসভাস্থলে এসে অপেক্ষা করছি। সকালে বিশাল একটি মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করার সময় বরিশাল-৫ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা শুরুর আগেই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে। এজন্য আমরা সকাল সকাল কর্মী সমর্থকদের নিয়ে জনসভার মাঠে এসেছি। তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর পর প্রধানমন্ত্রী বরিশালে এসেছেন। তাই আমরা গর্বিত। আমাদের এই আসনের ভোটাররাও গর্বিত। কেননা প্রধানমন্ত্রী বরিশাল সফর করলেই উন্নয়ন আরও সহজ হয়ে যায়। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রত্যাশিত উন্নয়ন করেছেন। এজন্য গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আসতে শুরু করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। নানা রঙের শাড়ি, রঙিন ক্যাপ-পোশাক পরে মাঠে আসেন তারা। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের পর জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে সমাবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দরা বক্তব্য রাখেন। বিকেল তিনটার সময় মঞ্চে আসেন জনসভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। জনসভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সফর কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি। প্রধানমন্ত্রীর সফর কমিটির সমন্বয়ক ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল আজ উন্নয়নের রোল মডেল। পদ্মা সেতু পায়রা বন্দর থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। উন্নয়নের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য কখনও কিছু চাইতে হয়নি। তিনি নিজেই দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যোন্নয়নে সব সময় চিন্তা করেন। ইতোমধ্যে যার অসংখ্য প্রতিফলনও হয়েছে। তাই দলমত নির্বিশেষে বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থী, আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আজ জনসভায় উপস্থিত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল সফর ছিলো নির্বাচনী জনসভা। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে সবকিছু করা হয়েছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সবশেষ বরিশাল সফর করেছেন। শুক্রবারের নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল বিভাগের নৌকা মার্কার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি দেশব্যাপী চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর কমিটির সমন্বয়ক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, উন্নয়ন আর অগ্রগতিতে বাংলাদেশকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে এসেছেন স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের যোগ্য উত্তরসূরি সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা আর সততায় বাংলাদেশ আজ অদম্য। টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার শেষপ্রান্তে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। উন্নয়ন ও অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রেখে বাংলার মানুষ আবারও স্বপ্ন বুনছেন শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থ মেয়াদে দেশ সেবার দায়িত্বে দেখার জন্য। বলরাম পোদ্দার আরও বলেন, পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনবার। সরকার পরিচালনায় দক্ষতার সাথে সাফল্যের পাল্লা ভারী করছেন প্রতিনিয়ত। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এসে ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণসহ সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাসসহ নানাবিধ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেন। বিচারহীনতার সংস্কৃতি দূর করতে উদ্যোগ নেন ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করার। জাতিকে কলংকমুক্ত করার জন্য শুরু করেন জাতীয় চারনেতা হত্যা ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। উদ্যোগ গ্রহণ করেন বিদ্যুতের আলোতে দেশকে আলোকিত করতে। বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩,২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সাথে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিস্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নকে ডিজিটাল সেন্টারের আওতায় আনা, মাধ্যমিক পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, কৃষকের জন্য কৃষি কার্ড, ১০ টাকায় তাদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেয়া, স্বাস্থ্য সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনসহ জনগণের জীবনমান উন্নয়নে গ্রহণ করে বহুমুখী জনবান্ধব কর্মসূচি। শুধু উদ্যোগ গ্রহণ নয় তার শতভাগ বাস্তবায়নও করা হয়েছে। বলরাম পোদ্দার আরও বলেন, এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ আবারও বেঁছে নেয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ের পর টানা দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নীত হয় মধ্যম আয়ের দেশ। ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থনের ফলে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসান ঘটে। উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশের জনগণ আর ভুল করেনি। প্রয়োজন বোধ করেনি আর অন্যকোনো রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার। টানা তৃতীয় মেয়াদে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ পান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। অনেক আন্তর্জাতিক চাঁপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সফলতা অর্জন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ জনকল্যাণমুখী সকল কর্মসূচি সফল বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার। তাইতো সেদিনের কথা শত্রু পক্ষের মুখে ছাই দিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ শেষে তা উদ্বোধণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও প্রমান করে দিয়েছেন বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবেনা। এর আগে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে শুক্রবার সকাল সোয়া নয়টার দিকে সড়ক পথে বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হন। স্বাধীনতার পর বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতু। সেই সেতু হয়ে সড়ক পথ পাড়ি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধি মেনে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকাবিহীন ব্যক্তিগত গাড়িতে বরিশাল আসেন। তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে তার গাড়িতে ছিলো দলীয় পতাকা। শুক্রবার দুপুর একটায় বরিশালে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্কিট হাউজে অবস্থান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে শুধু বঙ্গবন্ধু উদ্যান নয়, পুরো সিটি করপোরেশন সাজানো হয়েছিলো বর্ণিল সাজে। গত ১৫ বছরে পদ্মা সেতুর পাশাপাশি পায়রা সেতু, শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল সেতু নির্মিত হয়েছে বরিশালঅঞ্চলে। এছাড়াও ছোট-বড় অসংখ্য অবকাঠামো নির্মিত হওয়ায় জীবনমান উন্নত হয়েছে বরিশালবাসীর। এবার ভোলার গ্যাসসহ আরও কিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও নৌকার প্রার্থী আলহাজ¦ আমির হোসেন আমু এমপি, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও নৌকার প্রার্থী রাশেদ খান মেনন, জেপি’র চেয়ারম্যান ও নৌকার প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নৌকার প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, নৌকার প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান খান, অভিনেতা মীর সাব্বির, নাট্যাভিনেতা তারিন জাহান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ও নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়-য়া, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আহমেদ, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, বরিশাল-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ মল্লিক, ঝালকাঠী-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর, সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি আবদুল মান্নান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আফজালুল হোসেন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। বিকেল তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নৌকার আদলে নির্মিত জনসভার মঞ্চে আসার পর বরিশালের কৃষ্টি কালচার নিয়ে আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষন দিয়েছেন। এর পাঁচ বছর পর নির্বাচনী সভায় যোগ দিতে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী বরিশালে আসেন। এর আগে যদিও চলতি বছরের মার্চ মাসে বরিশাল সফরের কথা ছিল প্রধানমন্ত্রীর। পরে তা স্থগিত করা হয়।
মিছিলের নগরী ॥ নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা বরিশাল শুক্রবার সকাল থেকে মিছিলের নগরী পরিণত হয়েছিলো। শুক্রবার বিকেলে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যোগ দিতে বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা সকাল নয়টা থেকেই বিভিন্ন সড়কের মোড়ে মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার পর থেকেই মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রবেশ করতে শুরু করেন। জনসভা মঞ্চের সামনের নির্ধারিত অংশে নিরাপত্তা গেট দিয়ে নেতাকর্মী ও জনসাধারণকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। জনসভাস্থলমুখী মিছিলগুলোতে নানা রঙের শাড়ি পরা নারী, টুপি ও টি শার্ট পরা পুরুষদের উপস্থিতিতে বর্ণিল হয়ে ওঠে সড়কগুলো। বরিশালের একমাত্র দ্বিপ উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জ থেকে কয়েকটি লঞ্চ ভর্তি করে নেতাকর্মীদের নিয়ে জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য বরিশালে আসেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। পরে সু-বিশাল মিছিল নিয়ে তিনি জনসভায় যোগদান করেন। এছাড়াও বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে মিছিল নিয়ে আসেন।
জনসভার মাঠে জুম্মার নামাজ আদায় ॥ জনসভা শুরুর আগেই সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসন থেকে আওয়ামী লীগ ও তার সকল সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। কিন্তু জুম্মার নামাজের জন্য জনসভার মাঠেই আয়োজন করা হয় সর্ববৃহত জুম্মার নামাজের জামাত।
পঙ্কজ-শাম্মীর অনুসারীদের সংঘর্ষ ॥ বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে মেহেন্দিগঞ্জ আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে মঞ্চে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই সংঘাতে জড়ায় বাদ পরা বরিশাল-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী শাম্মী আহমেদ এবং স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারীরা। সংঘর্ষে উভয়গ্রুপের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে কি কারণে এই সংঘাতের ঘটনা ঘটছে তা তাৎক্ষণিক ভাবে জানা যায়নি।
এখন কার সঙ্গে খেলব-বরিশালে কাদের ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, খেলা হবে। বিএনপি কোথায়? পালিয়ে গেছে। তো কার সঙ্গে খেলব? ১৮৯৬ জন এখনো খেলবার জন্য প্রস্তুত। বিএনপি ফাউল করে লালকার্ড পেয়ে পালিয়ে গেছে। শুক্রবার বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় তিনি আরও বলেন, বিএনপির একদফা পল্টনের খাদে পরে গেছে। বিএনপির একদফা ভুয়া, বিএনপির আন্দোলন ভুয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যা বসে আসে বিজয়ের লাল সূর্যের পতাকা হাতে। আগামী ৭ জানুয়ারি বিজয়ের বন্দরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা পৌঁছাবো। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বরিশাল ছিল বঙ্গবন্ধুর আন্দোলনের দুর্জয় ঘাঁটি। এখন বরিশাল শেখ হাসিনার ঘাঁটি। ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা কোনো নেতা স্বীকার করেন না কিন্তু শেখ হাসিনা স্বীকার করে ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছেন। জনগণ আামাদের শক্তি। কারো হুমকিতে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভয় পান না। ৭ জানুয়ারি বিপুল ভোটে খেলা হবে। জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
হুইল চেয়ারে করেই সমাবেশস্থলে আসেন রাকিব ॥ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী জনসভাস্থল বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মানুষের সেই ঢলের মধ্যেই সমাবেশস্থলের দিকে এগিয়ে যেতে দেখা যায় শারীরিক প্রতিবন্ধী ২০ বছরের যুবক রাকিবকে। তিনি একনজর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখতে চান। আর এজন্য শুক্রবার বেলা ১২ টার মধ্যে হুইল চেয়ার নিয়ে বরিশাল জিলা স্কুলের মোড়ে এসে হাজির হয়েছেন তিনি। বরিশাল নগরীর লুৎফর রহমান সড়কের বর্তমান বাসিন্দা ও উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া এলাকার রুবেল মিয়ার ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী রাকিব বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে একনজর দেখতে চাই। কথা বলার ইচ্ছেও আছে কিন্তু তা মনে হয় সম্ভব হবেনা। আর সমাবেশস্থলে আসার জন্য সদররোড পর্যন্ত গাড়িতে এসেছি। এরপর গাড়ি ঢুকতে না পাড়ায় হুইল চেয়ারে করেই সমাবেশস্থলে যাচ্ছি। দেখি কি হয়, কতদূর যেতে পারি।
নৌকার বাইরে গিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই ॥ বরিশাল-২ আসনে জোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, নৌকার বিকল্প কিছু নেই, নৌকায় ভোট দিতে হবে। নৌকার বাইরে গিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মেনন আরও বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে নয়, নিজেকে বিজয়ী করুন, শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করুন।
চেতনা জয় বাংলায় আমি পুরোনো ॥ ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থী শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেছেন, প্রিয় ভাই ও বোনেরা বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আমি আপনাদের দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। আশা করি আপনারা আমাকে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে গ্রহণ করবেন। তিনি আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগে সর্বকনিষ্ঠ হলেও, আমার চেতনা জয়বাংলা কিন্তু সর্বকনিষ্ঠ নয়, এটা অনেক পুরাতন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার প্রশংসা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেছেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে।