বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬, সংসদীয় আসন ১০৪। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ৭ জন প্রার্থী প্রতীদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম মাহবুবুল আলম (ঈগল), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), বিএনএম প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম (ডাব), ন্যাশনাল পিপুলস পার্টির আবু সুফিয়ান (আম) ও তৃণমূল বিএনপি'র নাদিম উদ্দিন খান (সোনালী আশ) প্রতীক। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার পরে প্রার্থীরা আচারণ বিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় উসবমূখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ভোটাদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রার্থীরা উঠান বেঠাক, পথসভাসহ ভোটারের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে সাধারন ভোটারের মন্তব্য মূল লড়াই হবে ত্রিমুখী, নৌকা, ঈগল ও নোঙ্গর প্রতীকে। জানা গেছে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের স ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক। ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জামাতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ২০০৮ সালে আ.লীগের অ্যাড. সোহরাব আলী সানা, ২০১৪ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়লাভ করেন আ.লীগের মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। তবে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এই আসনে আ.লীগের প্রার্থীরাই ধারাবাহিকভাবে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিবারই নতুন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। একইভাবে এবারও খুলনা-৬ আসনে নতুন প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা মো. রশীদুজ্জামান। তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা উপজেলা আ.লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান একসময় বাম রাজনৈতিক সংগঠন সিপিবির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। মানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার এই নেতা মূলত আশির দশক থেকে নিজ জনপদে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান ও দলীয় মনোনয়নে ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। স্থানীয় নির্বাচন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ বলছে, এবারের নির্বাচনে খুলনা-৬ আসনে আ.লীগ প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী প্রার্থীরা। এরইমধ্যে উপকূলীয় এই জনপদ মানুষ উৎসবমূখর প্রচারণায় মেতে উঠেছে। এই আসনে নৌকার শক্ত প্রতিপক্ষ ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম ও বিএনএম এর নোঙ্গর প্রতীকের ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ। এখানে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু প্রচারণায় না থাকায় নৌকা, ঈগল ও নোঙর প্রতীকের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে জানান স্থানীয় ভোটাররা। তাই নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ছুটছেন কর্মী-সমর্থকরা। খুলনা-৬ আসনের নোঙ্গর প্রতীকের প্রার্থী নেওয়াজ মোরশেদ হাইকোর্টে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। এ ছাড়াও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে এলাকায় তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অপরদিক স্বতন্ত্র হিসেবে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় নতুন সমীকরণ চলছে। মাহবুবুল আলম প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ায় নির্বাচন জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান এফএনএসকে বলেন, ভোটাদের মধ্যে ভোটদানে আগ্রহ ভালো এবং নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম (ঈগল), বিএনএম প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙ্গর) এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করে রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কয়রা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান এফএনএসকে জানান, উপজেলার আইন শৃঙ্খলা পরিবেশ ভালো, কোন সহিংতার ঘটনা ঘঠেনি। পাইকগাছা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওবাইদুর রহমান এফএনএসকে বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং সবাই সমান সুযোগ সুবিধা পাঁচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ নির্বাচনে কয়রা উপজেলায় ৭টি ও পাইকগাছা উপজেলায় ১০টি মোট ১৭টি ইউনিয়ন এবং পাইকগাছা পৌরসভা নিয়ে এই আসনের সীমানা। বর্তমানে এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৬ হাজার ১১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৩৬ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৪ হাজার ৫৭৯ জন। খুলনা ৬ সংসদ সদস্য ও অভিভাবক কে হচ্ছেন, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।