পনের বছরের সরকারবিরোধী আন্দোলনে সাফল্য না জুটলেও নতুন বছর নিয়ে আশাবাদী বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক। তার আশা, ২০২৪ সালেই ‘স্বৈরাচার’ সরকারের পতন হবে। রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণের আগে তিনি সংবাদিকদের এ কথা বলেন। ফারুক বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাস শুধু নয়, সারা পৃথিবীর ইতিহাসে আছে, কোনো স্বৈরাচার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না, কোনো স্বৈরাচার, যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না সেই দল ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। “জনগণের বিজয় নিশ্চিত মনে রাখবেন। স্বৈরাচার ক্ষমতায় থাকবে না। আমাদের বিশ্বাস, জনগণ আমাদের সাথে আছে। বিজয় দিন আসবেই।” দুই বছরের জরুরি অবস্থা শেষে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ; টানা তিন মেয়াদ তারা দেশ শাসন করছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে সংসদের বাইরে চলে যায় বিএনপি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা অংশ নিলেও ভরাডুবি হয়। এবার আবার তারা ভোট বর্জন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। সরকার আগামী ৭ জানুয়ারি ‘একতরফা’ নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্তব্য করে সাবেক বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ বলেন ফারুক বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ এই অবৈধ সরকারের অধীনে একদলীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে-পাড়া-মহল্লায় আমরা লিফলেট বিতরণ করে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে জনগণ বলেছে, ৭ জানুয়ারি ‘আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে, সন্তান নিয়ে আমরা ঘরে থাকব, ভোট কেন্দ্রে যাবো না, ভোটে অংশগ্রহণ করব না’। “আমরা আজকে ষষ্ঠ দিন লিফলেট বিতরণ করে আপনাদের জানাতে চাই, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না এই কারণে যে, যারা আজকে বলছে যে, জনগণের কাছে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে আমরা (বিএনপি) নাকি পশ্চাৎপদ হচ্ছি। কিন্তু জনগণ বলতে শুরু করেছে যে আগামী ৭ তারিখ আওয়ামী লীগ পশ্চাৎপদ হবে। আমরা বলতে চাই, বিএনপি ও সমমনা দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচন বর্জন করবে ইনশাল্লাহ।” জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে এদিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসসক্লাবের সামনে এবং তোপখানা রোডে পথচারী, দোকানদার ও যানবাহনের যাত্রীদের হাতে ভোট বর্জনের লিফলেট তুলে দেন ফারুক। কৃষক দলের খলিলুর রহমান, ভিপি ইব্রাহিম, ওবায়দুর রহমান টিপু, শাহ আবদুল্লাহ আল বাকী, ফজলে হুদা বাবুল, শাহাদাত হোসেন বিপ্লব, জাহাঙ্গীর আলম, মোজাম্মেল হক মিন্টু সওদাগর, রবিউল হোসেন রবি, নাঈম মমতাজী, দিপু হায়দার খান, শফিকুল ইসলাম এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
‘ওরা শাদ্দাদের বেহেস্ত বানিয়েছে’
সকালে মালিবাগ কাঁচা বাজার এলাকায় ভোট বর্জনের লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, “কেন আওয়ামী লীগ সরকার এই পাতানো নির্বাচন, ভাগবাটোয়ারার নির্বাচন করছে? কারণ একটাই। অর্থ সম্পদ লুট করে তারা যে বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছে, সেটা তারা বজায় রাখতে চায়। জনগণের অর্থ, জনগণের সম্পদ লুট করে তারা শাদ্দাদের বেহেশত বানিয়েছে। সেজন্য তারা সেই বেহেশত হাতছাড়া করতে চায় না। “জনগণকে বলব, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, লুটেরাদের বিরুদ্ধে, খুনিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিন, ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জন করুন, কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।” বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, মীর নেওয়াজ আলী, মাহবুবুর রহমান সুমন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নাদিয়া পাঠান পাপন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াসীন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান এদিন মতিঝিলের এজিবি কলোনি কাঁচাবাজারে লিফলেট বিতরণ করেন।