কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা মহিনন্দ ইউনিয়নের প্রতিভাময়ী বাউল শিল্পী আবদুস সাত্তার পাঠান গানে গানে মাতিয়ে রাখেন গ্রাম গঞ্জের আবাল বৃদ্ধা বনিতাকে। সমাজের অপরাধ প্রবনতা দূর করতে তাঁর গান সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। জেলা তথ্য অফিসসহ সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গান পরিবেশন করণে ¯্রুেতারাও মুখরিত হয়ে ওঠে। গ্রাম গঞ্জের পাড়া মহল্লায় চায়ের আড্ডায় আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে এ শিল্পী ও তার গান।
আ.সাত্তার পাঠান ১৯৭৬ সালের ৫ মার্চ সদর উপজেলার মহিনন্দ ইউনিয়নের চংশোলাকিয়া এলাকায় আ.জব্বার পাঠান ও জাহানারা বেগমের পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। গাংগাইল এমদাদুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। মেধাবী হলেও অর্থাভাবে আর বেশিদূর এগুতে পারেননি। প্রথমে স্থানীয় বাউল উস্তাদ সোলায়মান পাঠানের গৃহে বাউল সংগীদের উপর তালিম নেন। পরে যশোদলের বাউল আ.কদ্দুছের কাছে আরও গানের দীক্ষা নেন। এ যাবত তিনি ৪০টির মতো গান লিখেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে বেড়ানোই তার নেশা ও পেশায় পরিণত হয়েছে। জেলা তথ্য অফিস এর সহায়তায় ভ্রাম্যমান গানের টিমে জড়িয়ে গানে গানে সমাজ সচেতনতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টিভিতেও তাঁর গান পরিবেশিত হয়েছে। তাঁর জীবনের প্রথম লেখাটি ছিলো- “আওলাদে রাসূল মদীনার ফুল গাউছুল আজম বইরাবাড়ি,ফুটাইয়া নূরের কলি এই বিশ^ জুড়ি”। তার গানে আধ্যাতিœকতা রয়েছে। তিনি লিখেন “হলুদ বরণ কুঠুম পাখিরে মধুমাখা সুরে ডাকিয়ানি আনতে পারো আমার প্রাণ বন্ধুয়ারে”। জেলা তথ্য অফিসের নিয়মিত ও ভাতাভোগী শিল্পী আ.সাত্তার পাঠান বিভিন্ন মঞ্চে বাউল গানের পাশাপাশি পালা গানও পরিবেশন করে থাকেন। এমনকি বিষয়ভিত্তিক সংগীতও পরিবেশন করে আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকেন। তার গানে মাদক, বাল্য বিয়ে, পরিবেশ সচেতনতা সৃষ্টি করে। মাদকের বিষয়ে শিল্পীর লিখা- “কতো মায়ের কত সন্তান কাইরা নিলো মাদকে বাপ ও মায়ে কাইন্দা মরে থাপড়াইয়া বুকে”। বাল্য বিয়ে নিয়ে তার লিখা “আমি অল্প বয়সে দিছিলাম বিয়া জমে এখন টানে লইয়া,ঘরে বইয়া কান্দে এখন বাপ ও মায়, জাদু আমার কোথায় যায়”। যৌতুকের বিষয়ে তাঁর গান “ যৌতুক আমরা নেবো না যৌতুক আমরা দেবো না,যৌতুকের বিরুদ্ধে এসো গড়ে তুলি আন্দোলন,শুনেন দেশের ভাই বন্ধুগণ”।
এই প্রতিভাময়ী শিল্পী ১৯৯৫ সালে মহিনন্দের দরিয়াবাদ এলাকার গোলাপ মিয়ার কন্যা মোছা: হারেছা বেগমের সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পারিবারিক জীবনে তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। তিনি কিশোরগঞ্জ বাউল সমিতির একজন সদস্য। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত থেকে সমাজ উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা,পল্লী সাংস্কৃতিক পরিষদ সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি বলেন আজীবন সংগীতের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে যাবো। তিনি বলেন শিল্পীদেরকে রাষ্ঠ্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা বিশেষ করে শিল্পী সম্মানী ভাতা বাড়ানো দরকার। সরকারের থেকে বছরে ১৫ হাজার টাকা সম্মানীতে সংসার চালানো বড় কষ্টের। যদিও টাকার বিণিময়ে আমাদের গান নয় তবে সংসার টিকিয়ে রাখতে টাকাও প্রয়োজন আছে। পেটের চাহিদা না মেটালে গলায় সুর আসবে না মনে ভাব উদয় হবে না গায়ে জোর আসবে না। তাই সরকার যেনো বাউলদের বিষয়ে একটু নজর দেন সেটিই প্রত্যাশা। মানব কল্যাণে যেনো নিয়োজিত থাকতে পারি এ জন্য সকলের দোয়া চাই।