বগুড়ার শেরপুরে দলিলকৃত স্বত্বদখলীয় সম্পত্তি সরকারের দাবী করে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী উপহারের ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আয়রা গ্রামে ঘটেছে। স্থানীয়ভাবে প্রতিকার না পেয়ে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালতে দুটো মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনার সমাধান ও সুষ্ঠ বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছে ভূক্তভোগী কয়েক পরিবার। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি বুধবার বিকালে সরেজমিনে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের আয়রা গ্রামে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমির আলু বিনষ্ট পূর্বক ও ইট-বালি ফেলতে দেখা যায়। এ সময় ওই জায়গার স্বত্ব দখলীয় মালিক একই গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমসহ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের আর্তনাদ করতেও দেখা যায়। এ সময় কান্না জরিত কন্ঠে মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, বর্তমানে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের জোরপূর্বক বেদখল দেয়া সম্পত্তিটি তার স্বামী শেরপুর থানাধীন মৌজা-আয়রা, জে.এল নং ৮৬, ১/৪৮৮ ও ২২০ তে ৩১ শতক সম্পত্তি এম.আর.আর ৪১২ তফশিল ৪৯২ ডি.পি-৮৮ জমি ২০ শতক এবং সেল এগ্রিমেন্ট ৩২২৮/৯২ নম্বর মুলে ৩০ শতক সবমিলিয়ে ৮১ শতক দলিল মুলে ক্রয় করে। এর মধ্যে বিগত ২০/০১/৯৬ ইং তারিখে ৮৭১ নম্বর বিক্রয় কোবলা দলিল মূলে মোছাঃ ছায়েরুন বিবির নিকট হইতে ৩১ শতক সাবেক ৫৫২ হাল ১০১০ দাগ ৪৩২ হাল ১৪২৬ দাগে, বিগত ০৮/০৯/১৯৯৭ ইং তারিখে ৭১০১ নম্বর বিক্রয় কোবলা দলিল মূলে খাজা সরকারের নিকট হইতে ৫৫২/১০১০ দাগে ২০ শতক, এবং ১০/০৫/১৯৯২ ইং তারিখে সেল এ- এগ্রিমন্ট ৩২২৮/৯২ নম্বর মূলে ৩০ শতক। আমার স্বামী ভোগ দখল করে আসার একপর্যায়ে স্বামী মারা গেলে ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হইয়া দীর্ঘকাল ধরে আমি ও আমার ছেলে-মেয়েরা জ্ঞাতসারে ভোগ দখল করে আসছি। ওই সম্পত্তি আমার স্বামীর নামে বিক্রয় কোবলা দলিল থাকা স্বত্বেও গত ৩১ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে সরকারী সম্পত্তি দাবী করেনশেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারি কমিশনার(ভূমি) সহ সংশ্লিষ্টরা। সেই মোতাবেক ওইসব কর্মকর্তারা কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ওই সম্পত্তির ফসল( আলু লাগানো) অবস্থায় ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের দলিল মুলে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতেজোরপুর্বক দখল, বেআইনীভাবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ” কাজ শুরু করেন। শুধু তাই নয় উল্লিখিত কর্মকর্তারা একই গ্রাম আয়রায় মকবুল হোসেনের স্ত্রী আছিয়া খাতুনের নামে ২০ শতক(বাড়ী) এ স্থানে লাল নিশান লাগিয়েছে। এছাড়াও মৃত আবুল হোসেন খোকার নামে ৩৪ শতক দলিল মূলে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে সরকারের কোন স্বত্ত্ব না থাকা সত্ত্বেও জোর পূর্বক আকার আকৃতির পরিবর্তন করে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। এ ঘটনায় আবুল হোসেন খোকার ওয়ারিশ ছেলে আবদুল করিম, আবদুর রাজ্জাক, রহিম ও বক্কাররা আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় প্রতিকার চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চ মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে ৩ জানুয়ারি বুধবার বিকালে শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ভূক্তভোগী পরিবাররা। এ সময় ভূক্তভোগী পরিবারের মধ্যে শাহ আলম ও আনিছার রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ভূক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের মত গরীব ও অসহায় মানুষ স্বত্ব দখলীয় সম্পত্তিতে ওইসব কর্মকর্তারা কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ওই সম্পত্তির ফসল(আলু লাগানো) অবস্থায় ভেঙ্গে দিয়ে আমাদের দলিল মুলে পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিতেজোরপুর্বক দখল, বেআইনীভাবে ঘর-বাড়ী নির্মাণ কাজ শুরু করে। এসব কাজ বন্ধে মৌখিকভাবে তাদেরকে অনুরোধ করা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। এর ফলে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব), শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ও সহকারি কমিশণার(ভূমি), শেরপুরকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্ষ্ঠু সমাধান ও বিচারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুমন জিহাদী বলেন, সম্পত্তিটি মুলত সরকারের, অভিযোগকারীরা নিজেদের দাবি করলে তাদেরকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের জন্য ৩ দিনের সময় দেয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময় পার করে পরবর্তী ১ মাসের মধ্যেও তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ কারণে সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে।