খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা), সংসদীয় আসন ১০৪ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান ৫১ হাজার ৮৬৫ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১ লাখ ৩ হাজার ৩৩৯ টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন, ৫১ হাজার ৪৭৪ টি ভোট। নির্বাচিত হয়ে সোমবার সকালে পাইকগাছা উপজেলা পরিষদ চত্বরে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। দ্বাদশ সংসদ সদস্য নির্বাচনে খুলনা-৬ এ কোথাও কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই সুষ্ট, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সিভিল প্রশাসন থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরবচ্ছিন্ন দায়িত্বপালন করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজয়ী প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান তার এ বিজয়কে কয়রা-পাইকগাছাবাসীকে উৎসর্গ করে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে শুভানুধ্যায়ীদের ধৈর্য্যধারণের অনুরোধ করেছেন। এদিকে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচন পরবর্তী যেকোন ধরনের সহিংসতা এড়াতে মাঠ পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী একই দলের জিএম মাহবুবুল আলম (ঈগল), জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), বিএনএম’র প্রার্থী ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙ্গর), বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু সুফিয়ান (আম) ও তৃণমূল বিএনপি’র নাদিম উদ্দিন খান (সোনালী আশ) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আ.লীগের বীর মুক্তিযোদ্ধা স.ম বাবর আলী, ১৯৭৯ সালে বিএনপির শেখ রাজ্জাক আলী, ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির মোমিন উদ্দিন আহমেদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সরদার জহুরুল হক, ১৯৯১ সালে জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ১৯৯৬ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক, ২০০১ সালে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াতের অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, ২০০৮ সালে আ.লীগের অ্যাড. সোহরাব আলী সানা, ২০১৪ সালে আ.লীগের অ্যাড. শেখ মো. নুরুল হক, ২০১৮ সালের ৩০ডিসেম্বর আ.লীগের মো. আক্তারুজ্জামান বাবু এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান নির্বাচিত হন। একসময় জামায়াত অধ্যুষিত হিসেবে চিহ্নিত আসনটিতে গত ৯ম, ১০ম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তাদের বিজয়ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছেন, প্রার্থী পরিবর্তন করে। এবার আসনটি থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়, তৃণমূলের রাজনৈতিক সংগঠক দু’বার ইউপি চেয়ারম্যান, একবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আ.লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সদস্য সচিব গণমানুষের অধিকার আদায়ের পথিকৃৎ মো. রশীদুজ্জামান। সর্বশেষ নির্বাচনে তিনি ৫১ হাজার ৮৬৫ ভোটের ব্যবধানে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সদস্য সচিব মো. রশীদুজ্জামান একসময় বাম রাজনৈতিক সংগঠন সিপিবির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এরপর আ.লীগে যোগদান করে অল্প দিনেই নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। তৃণমূলে আ.লীগের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা ও দলীয় মনোনয়ন পেতে কখনো ধৈর্যচ্যুতি ঘটেনি তার। জানাগেছে, ছাত্র জীবন থেকে গণ মানুষের অধিকার আদায়ে স্বোচ্চার এই নেতা মূলত আশির দশক থেকে নিজ জনপদে অপরিকল্পিত ও পরিবেশ বিধ্বংসী চিংড়ি চাষ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। বাম রাজনীতির ছায়াতলে এসব আন্দোলন-সংগ্রামে নিজেকে সপে তিনি বারংবার পুলিশী হয়রাণি ও প্রভাবশালী মহলের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জেলও খেটেছেন কয়েকবার। এলাকাবাসীর ভালবাসার টানে স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি কপিলমুনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর আগে ১৯৯০ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েও শেষ পর্যন্ত পরাজিত দেখানো হয় তাকে। সাবেক ছাত্র নেতা মো. রশীদুজ্জামান ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পরই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রঐক্য পরিষদের ব্যানারে সামনে থেকে নের্তৃত্ব দেন। তৎকালীন স্বৈরশাষক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ১৯৮৩ সালে সামরিক জান্তার হাতে গ্রেপ্তার হয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকারের পাশাপাশি কারাবরণ করেন। সে সময় আদালতে তার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রবেশ পত্র দেখিয়ে জামিন পান। এমএ পরীক্ষার পূর্বে আবারো তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৮৭ সালে বিশেষ ক্ষমতা আইনের সঙ্গে আরো তিনটি মামলা যোগ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেবার দীর্ঘ মেয়াদে জেল খাটেন তিনি। এরপর বাম রাজনীতি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এরপর উপজেলা আ.লীগের সদস্য সচীব ও পরে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে আ.লীগ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করায় সারাদেশে রাজনৈতিক বিপর্যয়ের পর তার গোটা পরিবার চারদলীয় জোট সরকারের অবর্ণনীয় নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডজন খানেক মামলায় মোকাবেলা করতে হয় তাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখা-পড়া, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পাশাপাশি নিজ এলাকায় কৃষকদের জমি লবণ পানি মুক্ত রাখতে ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে সমধিক পরিচিতি পান রশীদুজ্জামান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে এলাকায় ফিরে রাজনীতিতে সময় দেওয়ার জন্য চাকরির প্রত্যাশা করেননি সাহসী তরুণ নেতা মো. রশীদুজ্জামান। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৬, সংসদীয় ১০৪ আসনে ছিল বিষ্ময়কর চমক দেখিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিজয়ী প্রার্থী মো. রশীদুজ্জামান বলেন, আওয়ামী লীগের সরকারের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে জনগণ আমাকে বিজয়ী করেছেন। আমি কয়রা-পাইকগাছার সকলের কাছে চীর কৃতজ্ঞ। বিজয়ের আনন্দে প্রতিহিংসা পরায়ণ না হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।