ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের মেধাবী ছাত্র মঈন উদ্দিন মঈন। বড় হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। সততা, ন্যায়পরায়নতা, অদম্য সাহস ও প্রতিভাই ছিল তাঁর মূল পূঁজি। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকেই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের রাজনীতি করেছেন দীর্ঘ সময়। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছুররা গুলির আঘাতের যন্ত্রণায় এখনো কাতরান রাজপথের এই লড়াকু সৈনিক। একসময় স্বপ্ন দেখতেন জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের সেবা করার। সেই পথ অনুসরণ করেই অগ্রসর হচ্ছিলেন। পথে অনেক প্রতিবন্ধকতা। ধৈর্য্য সততা সাহস ও প্রতিভার দ্বারা সবকিছু ছিন্ন করে এগিয়ে চলেছেন। পিছু হটেনকি কখনো। ১১ বছর পর স্বপ্নপূরণ হয়েছে মঈন উদ্দিন মঈনের। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে (সরাইল-আশুগঞ্জ) স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে কলারছড়া প্রতীকে ৮৪ হাজার ৬৭ ভোট পেয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ওঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী একই আসনে মহাজোট থেকে পরপর দুইবারের নির্বাচিত সাবেক এমপি এড. জিয়াউল হক মৃধা ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৪৩১ ভোট। জাপাসহ বাকি ৫ প্রার্থীর কেউই জামানত পাবেন না। পারিবারিক ও দলীয় সূত্র জানায়, আশুগঞ্জের অজপাড়া গাঁয়ে বেড়ে উঠা মঈন ১৯৮৪ সালে ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অধ্যায়নের ফাঁকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই সৈনিক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিজের মেধা ও প্রজ্ঞার দ্বারা এগুতে থাকেন সামনের দিকে। আসে প্রতিবন্ধকতা। আটকাতে পারেনি। একসময় জহুরূল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন মঈন। শুরূ হয়ে যায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। শেখ হাসিনার ডাকে নেমে পড়েন ঢাকার রাজপথে। মঈন তখন লড়াইয়ের অগ্রভাগে। পুলিশের ছুররা গুলির আঘাতে গুরূতর আহত হন মঈন। আন্দোলন থেকে পিছু হটেননি। ছুররা গুলির যন্ত্রণায় এখনো কাতরান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম (অনার্স) এম কম পাস করেন। একসময় মঈন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি হন। সাড়ে ৯ বছর দায়িত্ব পালন করেন। প্রথম ২০১৩ সালে নিজ আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরূ করেন তিনি। মনোনয়ন পাননি। হাল ছাড়েননি। ২০১৮ সালে নৌকা চেয়েও পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হন মঈন। সেই যাত্রাই ৭৬ হাজারেরও অধিক ভোট পেয়ে জিততে জিততে হেরে যান উকিল আবদুস সাত্তারের কাছে। মঈন মনোবল হারাননি। উকিল আবদুস সাত্তারের পদত্যাগের পর এই আসনের উপনির্বাচনে মঈন আবারও নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপত্র করেন। দলের সিদ্ধান্তে আবারও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। সর্বশেষ গত বছরের ৫ নভেম্বরের উপনির্বাচনেও মঈন নৌকা চেয়ে পাননি। সর্বশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন-২০২৪ এ নৌকা প্রতীক চেয়ে পাননি। তাই বাধ্য হয়ে এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। প্রতীক কলারছড়ি। সফল হয়েছেন মঈন। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিশাল ভোটে জয়লাভ করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ১১ বছর পর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এখন জনগণের স্বপ্নপূরণই তার বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রƒতির উল্লেখ করে মঈন বলেন, আমি নির্বাচনী সভায় বলেছিলাম ‘আমি আপনাদের কামলা হতে চাই। সুযোগ দিন করে কাজ করে শান্তি দেয়ার চেষ্টা করি। কামলা পছন্দ না হলে তাড়িয়ে দিয়েন। শেষ কথা ছিল আমি এমপি নির্বাচিত হতে পারলে সরাইল আশুগঞ্জ বাসীকে নিজের সন্তানের মত করে দেখব। সন্তানের মতই ভালবাসব। লালন পালন করব। তবে আমার পথ চলায় দুই উপজেলার সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা চাই। আমি এমপি নয়, আপনাদের ছেলে, ছোট/বড় ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা হয়ে থাকতে চাই।