বিশাল পাহাড় এর চূড়ায় বাস করতো এক হাঁস। সেখানে সে তার বাচ্চাদের নিয়ে বসবাস করতো বহু বছর ধরে। ওই পাহাড়ে তার তেমন কোন বন্ধু ছিল না। সেই পাহাড় এর পাদদেশে দিয়ে বয়ে গেছে একটি নদী। নদীতে বাস করতো একটা কুমির। হাঁস তা জানতো না, প্রতিদিন হাঁস তার বাচ্চাদের নিয়ে মনের সুখে নদীতে গোসল করতো। কুিমর হাঁস এবং তার বাচ্চাদের গোসল করতে দেখতো ,হাঁসের এমন সুন্দর বাচ্চা দেখে কুিমর এর লোভ হতো কিন্তু কোন ভাবেই তাদের মা তাদের একা ছাড়তো না, বলে কুমির ও তাদের খেতে পারতো না। তাই সে হাঁসের বাচ্চাদের কি ভাবে খাওয়া যাবে সেই বুদ্ধি খুঁজতে লাগলো। হঠাৎ তার মাথায় বুদ্ধি আসলো সে হাঁস এর সাথে বন্ধুত্ব করবে। তার পর কৌশলে তার বাচ্চাদের খাবো। এক দিন হাঁস প্রতিদিন এর মতো গোসল করছে। হঠাৎ তার চোখে পড়লো এক কুমির ,দেখে চমকে গেলেন হাঁস! এই নদীতে তুমি আসলে কোথা থেকে ? হাঁস কে মিষ্টি সুরে বললো হাঁস ভাই সালাম ভয় পাবেন না, আমি কুমির, আমি আপনাকে খাব না ,আমি ভুল করে আমার সাথি দের হারিয়ে এখানে এসে পড়েছি, দয়া করে আপনি আমায় বন্ধু বানিয়ে নিন। আমি বড় একা সাথী হারা আমি, বলে কুমির হু হু করে কাঁদতে লাগলো। এই দিকে হাঁস তো খুবই সহজ সরল, কুমির এর কাঁন্না দেখে হাঁসের চোখে ও জল এসে গেল, বললো কুমির ভাই কেঁদো না, নিজেকে একা ভেবো না, আমি আছি তো তোমার বন্ধু, আমি ওই দুরে পাহাড় এর চূড়ায় থাকি। প্রতিদিন এসে তোমার খোঁজ নিয়ে যাব। কুমির মাথা নাড়ালো বলল ঠিক আছে। আজ থেকে তুমি আমার বন্ধু। এই বলে হাঁস চলে গেলো। কুমির তো মহা খুশি এবার তার মনের আশা পূরণ হবে। কুমির এই ভেবে সুযোগ খোঁজতে থাকে। এর পর হাঁস তার বাচ্চাদের নিয়ে প্রতি দিন এর মতো গোসল করতে আসে কুমির দেখে তো মহা খুশি সালাম বন্ধু হাঁস হ্যাঁ বন্ধু কুমির বলো তুমি কেমন আছো ? কুমির, ভাল তুমি? এই তো আছি ভাল, তার পর বলো আর কি খবর ? দিন কাল চলছে কেমন? কুমির এই তো, তার পর বাচ্চারা কেমন আছো তোমরা ? বাচ্চারা কে মা এই টা ? হাঁস, এটা তোমাদের চাচ্ছু কুমির, ও মা তাই নাকি? এ তো বিশাল বড় মা ,হুম, কুমির হাঁস বন্ধু তোমার বাচ্চারা তো ভারি সুন্দর হুম, তো বাচ্চাদের পড়ালেখা কিছু শিকাও নি বন্ধু হাঁস ? না রে কুমির বন্ধু, সেই সুযোগ আর হইলো কই ? থাকি বন্ধু পাহাড়ের চূড়ায়, স্কুল কলেজ অনেক দুরে, বাচ্চারা একা যেতে পারে না তাই আর কি পড়ালেখা করাতে পারছি না । কুমির, ও তাই এই কথা বন্ধু হাঁস, কোন চিন্তা করো না আমি তো আছি সব ব্যাবস্থা করবো আমি, যদি তুমি রাজি থাকো হাঁস বন্ধু। আমার একটা স্কুল আছে। তুমি চাইলে আমি সেখানে বাচ্চাদের পড়াশুনা করাতে পারি । হাঁস সরল মনে রাজি হয়ে যায় । ঠিক আছে তা হলে কাল সব বাচ্চাদের রেখে যেও। হাঁস ঠিক আছে । তা হলে এই কথাই থাকলো । আজ আমরা আসি এই বলে হাঁস চলে গেল । হাঁস বাসা গিয়ে তার বাচ্চদের বলে স্কুল এর কথা, বাচ্চারা তো মহা খুশি তারা স্কুল এ পড়বে। এর পর হাঁস তার বাচ্চাদের নিয়ে আসলো কুমির এর কাছে। কুমির তো মহা খুশি ,এসো এসা বাচ্চারা আমার কাছে তোমাদের আর কোন চিন্তা নেই এবার তোমরা সবাই শিক্ষিত হবে। হাঁস বন্ধু এবার তুমি যাও, কোন চিন্তা করো না আমি তো আছি বাচ্চাদের কোন অযত্ন হবে না। ঠিক আছে কুমির বন্ধু তুমি বাচ্চাদের দেখো। আমি মাঝে মাঝে এসে দেখে যাব । ঠিক আছে, এই বলে হাঁস চলে গেল। যেমনি হাঁস চলে গেল ওমনি কুমির তার বাচ্চাদের তার গোপন আস্তানায় নিয়ে গেল ,এবং তাদের মধ্যে থেকে এক এক করে খাওয়া শুরু করলো ,বাকি বাচ্চারা ভয় পেতে থাকে, কি ভাবে তাদের মা কে বলবে এ সব কথা তারা তো কেউ আর বাঁচবে না। তাদের মা তো কিছু জানতে ও পারবে না । এভাবে মরবে তারা? এই দিকে তাদের মা হাঁস ও তাদের কথা ভেবে ভেবে রাতে ঘুমাতে পারে না। খুব সকালে সে চলে আসে কুমির এর কাছে । কুমির বন্ধু কোথাই তুমি,কুমির এই তো আমি কি হয়েছে এই তো আমি, বন্ধু বলো, বাচ্চাদের রেখে আমার ঘুম হয় নাই তাই সকাল সকাল চলে এলাম বাচ্চাদের দেখতে। কই বাচ্চারা ডাকো বন্ধু। না না বন্ধু কি বলছো এই সব বাচ্চারা তো পড়াশুনা করছে এখন। ওদের এখন ডাকলে পড়াশুনা নষ্ট হবে, তুমি কি তা চাও ? না না কুমির বন্ধু আমি তা চাই না তুমি বাচ্চাদের ভাল করে পড়ালেখা করাও আমি আবার পড়ে আসবো। ঠিক আছে যাও। এ ভাবেই চলতে লাগলো দিন এর পড় দিন। হাঁস আসে বারবার আর কুমির নানা রকম বাহানা দিতে থাকে এক দিন হাঁস তো আর ছাড়েই না কুমির নিরুপায় হয়ে মাত্র একটি বাচ্চাকে নিয়ে আসে অনেক ভয় ভীতি দেখিয়ে। বাচ্চাটি বলে মা কেমন আছো তুমি? আমরা ভাল আছি। তুমি আর এখন এসো না আমাদের দেখতে। সামনে পরীক্ষা হাঁস বলে ঠিক আছে মা আমি কয়দিন পড়ে এসে তোমাদের নিয়ে যাব। এই বলে হাঁস চলে গেল। এখন আর একটি মাত্র বাচ্চা আছে কুমির চিন্তা করে এর পড়ে সে আর কি খাবে, তার চেয়ে ভাল হয় হাঁস কে নিয়ে এসে দু জন কে এক সাথে খাওয়া যাবে। এবার হাঁস আসলে সেই দিন আর তাকে ছেরে দেওয়া যাবে না। এ ভাবে ভাবতে লাগলো কুমির। কয় দিন পড় হাঁস আসলো এসে কুমির কে প্রতি দিন এর মতো ডাকতে লাগলো, কুমির তো আজ অন্য বুদ্ধি করেছে তাই কুমির আর হাঁসের ডাকে সাড়া দিল না। হাঁস তো ডাকতে ডাকতে হয়রান হয়ে গেল। এর মধ্যে কুমির এর কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে, হাঁস কুমির কে খোজতে লাগলো কিন্তু কোথাও কুমির এর দেখা নেই অবশেষে হাঁস তার আস্তানায় ঢুকে পড়লো কুমির তো ওত পেতে রয়েছে হাঁস কে ধরার জন্য। হাঁস কে দেখে কুমির দেয় এক লাফ একটুর জন্য হাঁস এর ঘাড় এর ওপর পড়ে না হাঁস ও দুরে লাফিয়ে পড়ে যার কারনে কুমির হাঁস কে ধরতে পারে না কুমির তো রেগে গিয়ে হাঁসকে তারা করে এই সুযোগ এ হাঁসের বাচ্চা টা ও পালিয়ে যায় কুমির অনেক চেষ্টা করেও আর হাঁস কে ধরতে পারে না হাঁস তার বেঁচে ফেরা এক মাত্র সন্তান এর কাছ থেকে সব শুনে কিন্তু তখন আর কিছু করার থাকে না হাঁস মনের দুঃখে কষ্টে সেই পাহাড় ছেড়ে অনেক দুরে চলে যায়। জেনে বুজে বন্ধুত্ব না করলে তার ফল ভয়ানক হয়।