ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়ায় ঠান্ডায় কাঁপছে হিমালয়ের পাদদেশের জনপদ লালমনিরহাট। টানা তিন দিন ধরে লালমনিরহাটে সূর্যের দেখা নেই। এ কারনো প্রতওদিন হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডা জনিত রোগীদের ভিড়। জানা গেছে, টানা তিনদিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। সেই সাথে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। বিকেল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির মত পড়ছে কুয়াশা। কুয়াশায় ঢাকা পড়ে পুরো জনপদ। সব মিলে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায় লালমনিরহাটের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে বের হচ্ছে না মানুষ। ঠান্ডায় কাজে যেতে না পেয়ে অনেকটা সংকটে পড়েছেন নি¤œ আয়ের দিনমজুর ও শ্রমিকরা। হিমেল হাওয়ায় বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে তিস্তা ধরলা নদী পাড়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকাও দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষদের। বিত্তশালীরা শীত উপভোগ করতে ভ্রমণে বের হলেও শীতে কাবু নি¤œা আয়ের মানুষরা। তারা পুরাতন কাপড়ের দোকানের গরম কাপড় কিনে ঠান্ডা নিবারনের চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ খড়কুটো আগুন দিয়ে শরীর তাপানোর চেষ্টা করছে। এ কারণে অনেক জায়গায় অগ্নিকান্ডের ঘটনাও ঘটছে। প্রতি বছর সরকারী বেসরকারী ভাবে শীতবস্ত্র বিতরন করা হলেও এবছর অনেকটা কম। কারণ হিসেবে অনেকের দাবি নির্বাচনকে ঘিরে প্রশাসন ব্যস্থ থাকায় এদিকে ততটা নজর নেই সরকারী বেসরকারী সংস্থাগুলোর। সরকারী বা বেসরকারী ভাবে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরন করা হলেও শিশুরা অনেকটা অবহেলিত থেকে যাচ্ছে। চরাঞ্চলের শিশুরা গরম কাপড়ের অভাবে ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে। কম্বলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সোয়েটার বিতরনের দাবি করছেন সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা। তিস্তা চরাঞ্চলের সোবহান (৬০) বলেন, এমন ঠান্ডা বাহে ইয়ার আগত আর কোনদিন দেখি নাই। দিনে তো গাছের পাতায় আগুন দিয়ে শরীর গরম করি। রাত হলেই ভাঙ্গা বেড়া দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকে হাড় পর্যন্ত ঠান্ডা হয়। ছাওয়া পোয়া (সন্তানদের) নিয়া খুব কষ্টে রাত কাটে বাহে। নিন্দ(ঘুম) হয় না। রিক্সা চালক নবিয়ার রহমান বলেন, ঠান্ডার কারণে লোকজন কম বাহিরে তাই আয়ও কম। কনকনে ঠান্ডায় বসে থেকে খালি পকেটেও বাড়ি ফিরতে হয় কোন কোন দিন। টানা এ ঠান্ডায় মানুষসহ গবাদি পশুপাখিও নানান ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ঠান্ডা জনিত রোগীদের ভিড়ও বেড়েছে জেলার সরকারী বেসরকারী হাসপাতাল গুলোতে। বিশেষ করে শিশু আর বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, নিউমেনিয়া আর পাতলা পায়খায়। প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছে সরকারী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে। ভর্তি রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে। দুই মাস বয়সী শিশু সোহাগকে নিয়ে হাসপাতালে আসা মা সোহাগী বেগম বলেন, শীতের ঠান্ডা লেগে শিশুর জ¦র সর্দ্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। ৪/৫ দিন ধরে স্থানীয় চিকিৎসকের দেয়া পরামর্শে ওষুধ দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। তাই হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছি। বাচ্চাকে নিয়ে কয়েক রাত ঘরে ঘুমাতেও পারছি না। নিউমেনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি এক বছর বয়সী মোস্তাকিন। শিশু মোস্তাকিনের বাবা জানান, ৪ দিন ধরে নিউমেনিয়ায় ভুগছে তার শিশু সন্তান। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই দিনে অনেকটা সুস্থ্য শিশু মোস্তাকিন। এমন অনেক শিশুই ঠান্ডায় নিউমেনিয়া আর পাতলা পায়খানায় ভুগছে। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তপন কুমার রায় বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বহিঃবিভাগে একাই দৈনিক প্রায় ৬০/৭০ জন রোগী দেখছি। সব শিশুই আসছে নিউমেনিয়া, ডায়েরিয়া আর জ¦র সর্দ্দি কাশি নিয়ে। খুব বেশি আক্রান্তদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ঠান্ডাজনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষায় সাধ্যমত উষ্ণতা দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার শীতকালিন শাকসবজি দিতে হবে। আক্রান্তদের থেকে শিশুদের দুরে রাখতে হবে। আক্রান্তদের মাস্ক পড়ে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ছিন্নমুল মানুষদের শীত নিবারনের জন্য ইতোমধ্যে ৫ উপজেলাতে ২৪ হাজার পিস কম্বল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যা বিতরন চলছে। শিশুদের জন্য ৫০ হাজার পিস জ্যাকেট ও সুয়েটারের চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে তা শিশুদের মাঝে বিতরন করা হবে।