৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর থেকে নির্বাচনী সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ছেন বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকরা। গত ১০ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ-৫ আসনের বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। দেওবাজার উপজেলা সদরে এ সংঘর্ষে দু’ জন সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ভোট শেষ হবার পর থেকে ৮ জানুয়ারি বিকেল পর্যন্ত ১১ জেলায় হামলা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অন্তত ২১ টি ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন নিহত ও ৬৪ জন আহত হয়েছেন। মাদারীপুর-৩ আসনে স্বতন্ত্র বিজয়ী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলা করেছে পরাজিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুস সোহবান (গোলাপ) এর কর্মী সমর্থকরা। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। ৮ জানুয়ারি সকালে কালকিনির ফাসিয়াতলা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ঝিনাইদহ সদরে অন্তত ৪০ টি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। নৌকার প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকীর পক্ষে কাজ করায় তার কর্মী কমর্থকদের বাড়িতে গত ৮ জানুয়ারি এসব ঘটনা ঘটে। এতে চারজন আহত হয়েছেন। পটুয়াখালী- ৪ আসনে বিজয়ী নৌকার প্রার্থী মোঃ মহিবুর রহমানের সাত কর্মী সমর্থককে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে। নাটোরে পৃথক তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় ছ’ জন আহত হয়েছেন। কুষ্টিয়ার চারটি আসনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পাঁচটি ঘটনায় ১৩ জন আহত হয়েছেন। জামালপুর- ৪ আসনে নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমানের ছ’ সমর্থকের বাড়িঘরে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সিরাজগঞ্জের চৌহালিতে বিমল নাথ নামের একজনের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। এমনি ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। কাজেই সারা দেশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার জন্য নির্ধারিত সময়ের পর নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের বেওয়াজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে প্রচলিত। নির্বাচন মানেই উৎসব আনন্দে নিজ প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার অধিকার সংবিধানে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে প্রাণহানী নি:সন্দেহে গর্হিত কাজ। এমনিতেই নির্বাচন বর্জন কারীদের আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে প্রাণঘাতী বেশ কিছু ঘটনার কারণে মানুষ আতঙ্কে ছিল। তারপর নির্বাচনী সহিংসতার কারণে আবার নতুন করে আতঙ্ক নিঃসন্দেহে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। নির্বাচনের পর চতুর্থ বারের মতো সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। কাজেই নতুন সরকারের সামনে নিত্য-পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ সহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনার চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি নির্বাচনী সহিংসতার বন্ধের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য। আর যেসব ঘটনা ঘটে গেছে, সেগুলো তদন্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হয়। অবশ্য একথা ঠিক সারা দেশে যে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা ঘটেছে তাতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই ঘটেছে। তাই শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, দলীয় শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্যও জড়িতদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।