মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও স্বাধীণ বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার পুনরায় মন্ত্রীত্ব পাওয়ায় কাপাসিয়াবাসি উচ্ছ্বসিত। বঙ্গতাজের মেজো কন্যা বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি চতুর্থবার বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এবং প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় মন্ত্রীসভায় স্থান করে নিলেন। তিনি পেলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। তাজউদ্দীন আহমদ মু্ক্িতযুদ্ধকালীন ও পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং পরে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রী সভায় অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এ পরিবার থেকে তার ছোট ভাই আফছার উদ্দীন আহমদ খান ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং গনপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। কিন্তু মেয়াদ শেষ হবার পূর্বে তাকে মন্ত্রীত্ব হারাতে হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গতাজ তাজউদ্দীনের একমাত্র পুত্র তরুণ প্রজন্মের তানজিম আহমদ সোহেল তাজ বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ব্রিগেডিয়ার আ স ম হান্নান শাহকে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু পাঁচ মাসের মাথায় তিনি মন্ত্রীত্ব ও সংসদ সদস্যর পদ ছেড়ে দেন। ভাইয়ের ছেড়ে দেয়া আসনে বঙ্গতাজের মেজো মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি উপ নির্বাচন সহ পর পর তিনটি নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দীর্ঘ পনের বৎসর কাপাসিয়া মন্ত্রীবিহীন ছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে রিমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী তার আপন ফুপাতো ভাই শিল্পপতি আলম আহমেদকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন। তখনই সচেতন মহলের ধারণা ছিলো রিমি নতুন মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারেন। রাজনীতির মাঠে দীর্ঘ সময়ে তিনি তাঁর ক্লিন ইমেজ ধরে রেখেছেন। সভা সমাবেশ গুলোতে তিনি কখনো তার প্রতিপক্ষকে কটাক্ষ করে কোন বক্তব্য রাখেন নি। প্রতিমন্ত্রী সিমিন হোসেন রিমি বলেন, করোনাকালীন সময়ে তিনি উপজেলার প্রায় ৩ হাজার করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবায় সহযোগিতা করেছেন। তিনি উপজেলার ২৩১টি গ্রামেই ঘুরেছেন, তাই কাপাসিয়ার সর্বস্তরের মানুষকে তিনি আত্বার আত্মীয় মনে করেন। তিনি আরো বলেন, এখানে কেউ যদি অসুস্থ হয় তাহলে আমার কষ্ট হয়। তিনি ২৩১টি গ্রামকে আদর্শ গ্রামে পরিনত করবেন এবং প্রত্যেককে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। উপজেলার মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবায় উন্নয়ন, গর্ভবতী মায়েদের আলাদা ডাটা ব্যাজ স্থাপন করায় মাতৃমৃত্যু হার শূন্যের কোটায় আনা, বেকার যুবকদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কারিগরি স্কুল ও কলেজ স্থাপন, মায়ের নামে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন নাসিং কলেজ স্থাপন করেছেন। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপজেলাকে একটি সবুজ বনায়ণ, বেকার সমস্যা ও স্বাস্থ্য সেবায় উন্নয়ন করা এবং কৃষিতে জোর দিয়ে উপজেলাকে একটি কৃষি অর্থনীতি অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলবেন। তিনি বাবার অদর্শের কথা চিন্তা করে বলেন, বঙ্গতাজের পূন্য ভূমি যাতে কলুষিত না হয় সে চেষ্টা করা হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানু রহমান প্রধান বলেন, তিনি হলেন কাপাসিয়ার মা ও মাটির মানুষের মানবিক নেত্রী। তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে কাপাসিয়ার সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব। আধুনিক মানের কাপাসিয়া গড়ে তুলতে তাঁকে সকল স্তরে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করার আহবান জানান তিনি। সিমিন হোসেন রিমি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা। তিনি ১৯ আগস্ট ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৪, কাপাসিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালান করেছেন। রিমি ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে গাজীপুর-৪, কাপাসিয়া আসনের উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২২ সালের নভেম্বরে রিমিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।