বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা ও বাদুরতলা সংরক্ষিত বনের কয়েক হাজার শ্বাসমূলীয় গাছ কেটে বনভূমি দখল করা হয়েছে। এতে বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব ও পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মধ্যে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নির্বিচারে বন উজার করে জমি দখল করা হয়েছে, পাশাপাশি সেখানে পুকুর খননের কাজও চলছে। আর এমন অভিযোগ এলাকার লোকজনের বিরুদ্ধে। বনবিভাগ বলছে বন প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায় এবং লোকবল সংকটের কারণে কিছুই করতে পারছে না তারা। তবে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই এ বনাঞ্চল উজার করে জমি দখলে নিচ্ছে। জানা যায়, বলেশ্বর নদের তীরবর্তী চরলাঠিমারা ও বাদুরতলা মৌজার ৩ হাজার ১৯ একর আয়তনের এই বন দুটিকে ১৯৮৬ সালে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কেওড়া, গেওয়া, বাইনসহ বিভিন্ন শ্বাসমূলীয় ও অন্যান্য প্রজাতির বৃক্ষর পাশাপাশি কাঁকড়া, কচ্ছপ, হরিণ, মেছোবাঘ, বানর, শূকর প্রভৃতি বন্য প্রাণীসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির পাখির অভয়ারণ্য এই বনাঞ্চল। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বনবিভাগের ঘোষণা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনে অনুপ্রবেশ করে স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন, তার ৪ ছেলে এবং খাইরুলসহ একাধিক স্থানীয়রা বনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে জমি দখলে নিয়েছে। সেখানে জাল দিয়ে বেড়াসহ পুকুর খননের কাজও করছে। গত কয়েকদিন ধরে বন উজার এবং জমি দখলের মহোৎসব চলছে। ইতোমধ্যেই দখলদাররা মাটি কেটে বাঁধ দিয়েছে। স্থানীয় নুরুল ইসলাম প্যাদা, আলম ফিটার ও বাবুল হাওলাদার বলেন, স্থানীয় দেলোয়ারসহ একাধিক ব্যক্তিরা বনের গাছ কেটে জমি দখলে নিয়েছে। আমরা এসব বনদস্যূদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছি না। বিভিন্ন মামলা, হামলার ভয়ভীতি দেখায়। তারা আরও বলেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ বন ধ¦ংস এবং জমি দখল করছে। অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাড়ির এক বৃদ্ধ নারী জানান, তারা এখানে এসেছে ৪০ বছর। এর মধ্যে কিছুই করতে পারেনী। তারা এই অল্পএকটু জমি দখল করেছে তাতেই এত কিছু। বন বিভাগের লোক আসার পরে কাজ বন্দ করে দিয়েছেন। বন বিভাগের চরলাঠিমারা বিট কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, বিট কার্যালয়ের পাশেই প্রত্যন্ত এলাকায় বন। আমাদের কোন গাফেলতি ছিলো না। এত বড় বনের স¦ল্প সংখ্যক লোকবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। বনবিভাগকে ম্যানেজ করে এমন অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, তাদের (স্থানীয়দের) স¦ার্থের বিরুদ্ধে গেলেই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দেয়। এটা তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, সংরক্ষিত বন উপকূলের রক্ষাকবজ। এ বন যদি এভাবে ধংস করা হয় তাহলে পরিবেশসহ জীববৈচিত্যই হুমকির মুখে পড়বেনা গোটা পাথরঘাটার উপকূল ধ্বংসসহ হুমকির মুখে পড়বে। একদিকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা দিয়ে বন সংরক্ষণ করা হচ্ছে অন্যদিকে বনবিভাগের ছত্রছায়ায় বন ধংস হচ্ছে এমন চোর পুলিশের খেলা বন্ধ করতে হবে। পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, বন উজার ও জমি দখলের দখলদার ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। যেহেতু এটা বন আইনের অপরাধ তাই বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।