আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচনে অনেক বাঁধা-বিপত্তি ছিল, অনেক চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ছিল। কোনমতে নির্বাচন যেন না হয়, না হতে পারে এটাই ছিল আসল চক্রান্ত। অথচ একটা গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া কোন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় না থাকে তহলে কোন দেশের উন্নতি হয়না। এটা আমাদের দেশের জন্য প্রমাণিত সত্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ’৭২ সাল থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন ক্ষমতায় থেকে একটি যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ধ্বংসন্তুুপের উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ কে রেখে যান একটি স্বল্পোন্নোত দেশে। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছিল প্রথমে ২১ বছর পরে প্রায় ৮ বছর। তারা দেশের কোন উন্নতি করেনি। দেশের উন্নতি তখনই হয়েছে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।
রোববার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, বিএনপির দুর্ণীতি, লুুটপাট, মানিলন্ডারিং, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলাসহ নানা কারতে জনগণ তাদের উপর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। যার জন্য ইমার্জেন্সী আসে। সেই জঙ্গিবাদ বাংলাভাই সৃষ্টি করে মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছিল। এরপর ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হয়। এককভাবে আওয়ামী লীগ ২৩৩ টি সিট পেয়েছিল। বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৩ টি সিট। তখন থেকেই তারা ইলেকশনে আসতে চায় না। ইলেকশন আসলেই বানচাল করতে চায়। তাই আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই আপনারা তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্রকে ধুলিসাৎ করে দিয়েছেন। এবার জনগণ সুষ্ঠভাবে ভোট দিতে পেরেছে। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশে ’৭৫ এর পরে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে সেখানে কিন্তু জনগনের কোন ভোট ছিল না। মিলিটারী ডিক্টেটর এসেছে তারা ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জনগনের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে। সেই সাথে সাথে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে উন্নয়ন করেছে। আমরা শুধু তেলে মাথায় তেল দেইনি, অনগ্রসর জনগোষ্ঠিরও উন্নয়ন করেছি। দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাত্রার মান সমৃদ্ধশালী হয় সেজন্য কাজ করেছি। যার কারণে বিএনপি যতবার নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছে বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি। আসলে দেশের মানুষ তার ভোটটা চুরি করলে সে ঠিকই ধরে দেয়। যার দৃষ্ঠান্ত হচ্ছে ’৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি নির্বাচন করেছিল। সেখানে কিন্তু সারাদেশের প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, আইন-শৃংখলাবাহিনীর সদস্যসহ সবাইকে নামিয়ে দিয়ে তার নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে। কিন্তু সেখানে ভোটার যায় নি। তারপরও সিল মেরে বাক্স ভরে ২২ শতাংশের উপরে ভোট হয় নাই। জনগণ কিন্তু তখন এই নির্বাচন মেনে নেয়নি। তারা ভোট চুরি করেছিল। যে কারণে আন্দোলন হয়। এই আন্দোলনের মুখে ’৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে নাকে খত দিয়ে বিদায় নিতে হয়। তারা এখন আন্দোলন করে গনতন্ত্রের জন্য যারা গনতন্ত্রের ‘গ’ও বোঝে না। গনতন্ত্র বানানও করতে পারবে না। তাদের আন্দোলন হচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা। বাসে আগুন, গাড়িতে আগুন, লঞ্চে আগুন, রেলে আগুন। তারা ’১৩ সালে করেছে, ’১৪ সালে করেছে আবার এই নির্বাচনের আগে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষদের কে পুড়িয়ে মেরেছে। এমনভাবে পুরিয়েছে যে মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এই দৃশ্য কোন মানুষ সহ্য করতে পারেনা। যে কারণে তারা যতই চিৎকার চেঁচামেচি করুক তাদের কথায় জনগণ সাড়া দেয়নি। যারা মানুষদেরকে পুরিয়ে মেরেছে তাদের কোন ছাড় নাই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি নেবো। যারা এসব কাজ করেছে তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে দেশের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সারাটা জীবন কষ্ট করে, সংগ্রাম করে এবং তার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের জনগন অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় এনে দেশ স্বাধীন করেছে। সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সে দেশের জন্য তার জীবনটা উৎসর্গ করেছিলেন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাই, আমার স্বজন। আজকের এই দিনে আমি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শ্রদ্ধা জানাই আমার মা,আমার ৩ ভাইসহ আত্মীয়স্বজন যারা ১৫ আগষ্টে শহীদ হয়েছেন। আমি শ্রদ্ধা জানাই ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা-বোনকে। যাদের মহান আত্মত্যাগ আমাদের মহান বিজয় এনে দিয়েছে। রেহানা ও আমি জার্মানিতে ছিলাম। মাত্র ১৫ দিন আগে দেশ ছেড়ে যাই। তারপর আমাদের জীবনে নেমে আসে অমানিশার অন্ধকার। ১৫ আগস্ট ’৭৫ সাল একদিন শুনলাম আমাদের বাবা-মা, ভাই কেউ নেই। দেশেও আসতে পারি নাই। এমনকি জিয়াউর রহমান রেহানার পাসপোর্টটাও দেয় নাই। পাসপোর্টের সময় শেষ হয়ে গেছে আর পাই নাই। বিদেশের মাটিতে আশ্রয় নিয়ে আমরা রিফিউজি হিসেবেই ছিলাম। ’৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। ছেলে-মেয়ে রেখে আমি আসি আপনাদের মাঝে। আপনারাই আমাকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। যে কারণে আমি বারবার জয়ী হতে পেরেছি। আমি জয়ী হয়ে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমাদের একটাই লক্ষ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, এদেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া সেই লক্ষ নিয়েই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি।
দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, ব্রিজ যেগুলো বাকি আছে আমরা সেগুলো করবো। আমরা দেশের এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব। দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে। আমার গ্রাম আমার শহর সেভাবেই আমরা প্রতিটি গ্রামকে গড়ে তুলব। যেন কোন মানুষের কষ্ট না হয়।
দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ যে কারণে সামনে দুর্দিন আসতে পারে। আমাদের দেশের মাটি উর্বর, আমাদের মানুষ আছে, এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। জমি চাষ করা থেকে হাস-মুরগি, গরু-ছাগল পালনের মধ্যে দিয়ে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ^ব্যাপী খাদ্যের দাম বেড়েছে। বাংলাদেশেও জিনিসের দাম বেড়েছে। আমাদের দেশের মানুষের খাবারের যেন কোন অভাব না হয় সেটি আমাদের নিজেদের করতে হবে।
নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদেরকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়াবাসী আমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে আপনারই আমার নির্বাচন করেছেন। আপনাদের ভোটে জয়ী হয়ে আজকে আমি বাংলাদেশের জনগনের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। এখানে উপস্থিতসহ কোটালীপাড়াবাসী যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন সকলের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাচ্ছি। আজকে আমি আপনাদের ভোটে বার বার নির্বাচিত হয়েছি। আমার নির্বাচনী আসন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আমার সমস্ত দায়ভার আপনারাইতো নিয়ে নিয়েছেন। আপনারাইতো আমার সেই হারানো বাবা-মা, ভাইয়ের স্নেহ দিয়েছেন। ভালোবাসা দিয়েছেন। আমি আপনাদের দোয়া ও আশীর্বাদ চাই। আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা রইলো।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্রনাথ বিশ^াসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি সাবেক সিনিয়র সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান ও কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।