দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একক ভোটে বিজয়ী হওয়া স্বতন্ত্র এমপিরা জোট গঠন করে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) মাত্র ১১ জন প্রতিনিধি রয়েছে। তাই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। ফলে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের জোট দ্বাদশ সংসদকে আরও কার্যকর করতে প্রধান বিরোধী দলে পরিণত হতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ১০ জানুয়ারি শপথ নেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভার সদস্যরা ১১ জানুয়ারি শপথ নেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন করা হয়েছে। এখন সবার দৃষ্টি দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিকে। ভোটের ফলাফলের গেজেট বিজ্ঞপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম অধিবেশন ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ৯ জানুয়ারি নির্বাচনের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় ৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হতে হবে। এই মুহূর্তে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কে বসবেন এবং কে হবেন বিরোধী দলের নেতা তা নিয়েই চলছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা। সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের পর যে দল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে তারাই প্রধান বিরোধী দল গঠন করবে। সে অনুযায়ী ১১টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। তবে জোটগতভাবে আসন সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন ৬২ জন স্বতন্ত্র এমপি। ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে তাদের একজনকে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে স্বাধীন জোট গঠন করলে এই জোটই প্রধান বিরোধী দল হবে এবং এবারও তা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। যেহেতু প্রায় ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যই আ.লীগের শাসন করছেন, তাই বিরোধী জোট গঠন এবং বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত অনেকটা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপর। এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা জোট গঠন করে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে উপস্থিত হতে যাচ্ছেন এবং বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে বিরোধী দলের নেতা কে হবেন তা এখনো ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি। অনেক নাম আলোচনায় রয়েছে এবং এটি স্বাধীন আইন প্রণেতাদের ঐকমত্যের উপর নির্ভর করে, বলেন তিনি। সূত্রমতে, বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতা ও ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য একে আজাদ এবং টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচিত সিনিয়র সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীসহ অনেকের নামই বিবেচনাধীন রয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতার হয়ে আলোচনায় রয়েছেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমও। এ ছাড়া ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী বিরোধীদলীয় নেতা হতে চান। হবিগঞ্জ-৪ থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, দল হিসেবে জাতীয় পার্টির সংসদে প্রধান বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের (স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের) মধ্যে জোট তৈরি হলে সংসদে প্রধান বিরোধী দল হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও একাদশ জাতীয় সংসদের উপণ্ডবিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের গত বুধবার বলেছেন, তিনি বিরোধী দলে আছেন এবং দ্বাদশ সংসদেও একইভাবে থাকতে চান। শপথের পর জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঠিক জানি না শাসন কী তবে আমরা বিরোধী দলে ছিলাম এবং বিরোধী দলে থাকতে চাই। আমরা একটি জনকল্যাণমুখী দল এবং আমরা মানুষের জন্য যা ভালো তা করতে চাই। ব্যর্থতার অভিযোগে নেতৃত্বের পদত্যাগের দাবিতে দলীয় নেতাকর্মীদের বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে জিএম কাদের এটাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন।