চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নাচোল পৌর এলাকার ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য মাধ্যমিক বিদ্যাপিঠ নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৭ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে অবসরজনিত কারণে বিদ্যালয়টিতে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য হয়। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে ২০ নভেম্বর জনৈক মনোরঞ্জন দাস প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ পান। কিন্তু নিয়োগকমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ও পরিচালনা কমিটির সদস্যদের বাধার মুখে যোগদান করতে পারেননি তিনি। মনোরঞ্জন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ সভাপতিকে প্রভাবিত করে নিয়োগ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই গোপনে অবৈধ পন্থায় প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ নিয়েছেন তিনি। প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষক নিয়োগদানের এক মাস পুর্বেই ১২ অক্টোবর/২০১১ খ্রিষ্টাব্দ সভাপতির বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ স্থিগিত চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে ১১১/১১ নং মামলা করেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ। তারপরও মামলা উপেক্ষা করে কমিটির অনুমোদন ছাড়াই সভাপতি ২০ নভেম্বর ২০১১ খ্রিষ্টাব্দ মনোরঞ্জন দাসকে প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ প্রদান করেন। অপরদিকে অনুমোদন ছাড়াই সভাপতির একক সিদ্ধান্তে নিয়োগ দানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জজ আদালতে ৭২/২০১১ নং মিস আপিল দায়ের করেন নিয়োগকমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ। এদিকে প্রধান শিক্ষকপদে নিয়োগ পেয়েও বাধার মুখে বিদ্যালয়ে যোগদানে ব্যার্থ হলে ৭ মাস পর ১৩ জুন ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সহকারী জজ আদালতে ৯২/১২ নং মামলা দায়ের করেন মনোরঞ্জন দাস। সেই থেকে উভয় পক্ষের পাল্টা-পাল্টি মামলার ফাঁদে এক যুগ ধরে আটকে আছে প্রধান শিক্ষকের পদটি। এদিকে এক যুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হওয়ায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কাঙ্খিত উন্নয়নের পরিবর্তে মুখ থুবড়ে পড়েছে সেখানের শিক্ষার পরিবেশ। একসময় ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য এ বিদ্যালয়টিতে ছেলে-মেয়েকে ভর্তির জন্য দিনের পর দিন পরিচালনা কমিটি এবং প্রধান শিক্ষকের শরণাপণœ হয়ে দৌড়ের উপর থাকতেন অভিভাবকগণ। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষদের মাঝে মতানৈক্য, নিয়মিত পনিচালনা কমিটি না থাকা, এসএসসির ফলাফলে কাঙ্খিত জিপিএ-৫ অর্জিত না হওয়াসহ নানান কারণে শিক্ষার্থী সংকট বিদ্যমান। এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ক্লাস না নেওয়া, শিক্ষার্থীদের বেতন-সেশানচার্জ ও প্রতিষ্ঠানের মার্কেটের ভাড়া এবং পুকুর ও আমবাগান লীজের আর্থিক আয়-ব্যয় সম্পর্কে কমটির সদস্য ও সহকর্মীদেরকে অবহিত না করা, বার্ষিক অভ্যন্তরীণ অডিট না করা, নিয়মিত কমিটি না করে গোপনে বারবার এ্যাডহক কমিটি গঠন করা, কমিটির সভা না করেই কাগুজে-কলমে সভা দেখানসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহকর্মীদের পক্ষ থেকে। যার ফলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মাঝে ‘যেমন খুশি তেমন চলো’ অবস্থা বিরাজ করায় বিদ্যালয়টির শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার মান তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাইরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয় এবং বেশকিছু দিন ধরে তিনি অসুস্থ ও চিকিৎসার কাজে ভারত যাওয়ার জন্য ভিসা তৈরীরতে ব্যস্ত আছেন বলে জানান। মনোরঞ্জন দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সঠিক আছে এবং এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। তবে তার নিয়োগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অনুমোদন না থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। জেলার অবহেলীত ও বরেন্দ্রজনপদ খ্যাত নাচোল উপজেলার প্রাণকেন্দ্র নাচোলে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীদের উদ্যোগে প্রধান শিক্ষক ও ৪জন সহকারি শিক্ষক দিয়ে নাচোল নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করে। শুরুতে ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিকের পাশাপাশি নি¤œ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টিকে ৯ম-১০ম শ্রেণীতে উন্নীত করে ৫ একর সম্পত্তির উপর পৃথক অবকাঠামো গড়ে তোলার মধ্যদিয়ে কো-এডুকেশন শিক্ষাকার্যক্রম বেশ সুনামের সাথে চলতে থাকে। ওই সময় নাচোল উপজেলার একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যাপিঠ ছিল এই নাচোল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং বিদ্যালয়টির ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও শিক্ষার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।