দেশে জ্বালানি তেলের বাজার যখন টালমাটাল যে সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস ঠিক সেই সময় খুলনায় চলছে জ্বালানি ডিপো থেকে ও ট্যাংকলরী এবং রেলের ওয়াগন থেকে জ্বালানি তেল চুরির মহোৎসব। সংঘবদ্ধ চক্র স্থলে রেলের ওয়াগন ও ট্যাংকলরী থেকে ড্রাম বা ক্যান ভর্তি করে জ্বালানি তেল চুরি করছে প্রতিনিয়ত। আর এ ব্যবসাকে সচল ও সজীব রাখার মানসে মেসার্স পদ্মা, মেসার্স মেঘনা ও মেসার্স যমুনা নামক তিনটি জ্বালানি তেল ডিপোর গেটে রোডের পাশে অবৈধ তেল চোরদের ছোট ছোট তেল ঘর। প্রতিনিয়ত এ সকল তেল চোরেরা ট্যাংকলরী থামিয়ে হোসপাইপে ড্রাম ঝুলিয়ে জ্বালানি তেল পাঁচারে নিয়োজিত হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, খুলনার খালিশপুর থানার কাশিপুরে ভৈরব নদী তীরে অবস্থিত তিনটি জ্বালানি তেল ডিপো মেসার্স পদ্মা, মেসার্স মেঘনা ও মেসার্স যমুনা নামে ৩টি তেলের ডিপো অবস্থিত। এ সকল ডিপোতে নানা ধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ করে চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্যাংকার জাহাজ গুলো। কাশিপুর, খালিশপুর ও দৌলতপুরের একটা প্রভাবশালীমহল ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিনিয়ত ডিপোগুলোর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ম্যানেজ করে ট্যাংকলরীর মাধ্যমে লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি করছে। এসব চোরাই তেল খুলনা নগরীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচার হচ্ছে। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে আগত ট্যাংকারে এ সকল ডিপোগুলোতে নানা রকম জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেল, পেট্রোল, কেরসিন, অকটেন, ফার্নেস ওয়েল উল্লেখযোগ্য। এ সকল ট্যাংকারে অবৈধভাবে সরবরাহের অতিরিক্ত জ্বালানি তেল লোড হয়। যে তেল চোরাই পথে বিক্রি হয়। লাভবান হয় বিপিসির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি রাজস্ব। অপর দিকে, ওই তেল ডিপোগুলো থেকে বিভিন্ন জ্বালানি তেল ট্যাংকলরী ও রেলের ওয়াগনে লোড নিয়ে ডিপোগুলো থেকে বিদায় নিয়ে গেটের থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় তেল পাঁচারের প্রতিযোগিতা। এসব তেল নিজ নিজ দোকানে মজুদ করে স্থানীয় দোকানে বা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। উল্লেখ্য যে, এ সকল ট্যাংকলরী তেল লোড নিয়ে খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ কাজে নিয়োজিত। পাশাপাশি রেলের ওয়াগনে লোড নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এসব ট্যাংকলরী ও রেলের ওয়াগন থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি হয়। ডিপোগুলোর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ট্যাংকলরীর চালক ও হেলপার এবং কাশিপুরের একটা সংঘবদ্ধ চোর চক্র প্রতিনিয়ত দিন-রাত সব সময় তেল চুরি করছে। তেল লোড হয় বেশী দেখায় কম। মেজারমেন্টে থাকা গেজার ছাড়া কেউ ধরার উপায় নেই। এভাবে তেল চুরির কারণে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে জ্বালানি তেলের ডিপোগুলো, এজেন্টগণ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। জ্বালানি তেলের মধ্যে কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও ফার্নেস ওয়েল অন্যতম। কাশিপুর বিভিন্ন তেলের ডিপো রোডের পাশে বেড়া বা শার্টারযুক্ত দোকান করে দিবারাতে ট্যাংকলরী থেকে তেল পাঁচার ও রেল লাইনের পাশে স্থাপনা তৈরি করে ওয়াগন থেকে ও বিএল কলেজ ও যমুনা তেলের ডিপো সংলগ্ন বালিঘাটে স্থাপনা তৈরি করে প্রতিনিয়ত তেল চুরি করে ওই এলাকার একটা সংঘবদ্ধ চক্র। তা ছাড়া ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা জাহাজ থেকে তেল চুরি করে ট্রলার ভর্তি জ্বালানি তেল ওঠানো হয় কাশিপুর এলাকায়। এ ব্যাপারে কথা হয় মেসার্স পদ্মা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর কাশিপুর ডিপো সুপার মোঃ পিয়ার আহমেদের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ডিপো থেকে ট্যাংকলরীতে চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাপের জ্বালানি তেল লোড দেওয়া হয়। তারা গেটের বাইরে গিয়ে কোথা থেকে কিভাবে জ্বালানি তেল চুরি করে বিক্রি করে তা আমাদের জানার বাইরে। এদিকে মেসার্স মেঘনা ও মেসার্স যমুনা ওয়েল কোম্পানি লিমিটেড এর ডিপো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারেও একই দিনে কথা হয় খালিশপুর মেট্রো থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তেল চুরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটটা কাশিপুরের। আর জাহাজ থেকে ঘাটের ট্রলার ভর্তি জ্বালানি তেল চুরি করে তো কাশিপুরে ওঠানো হচ্ছে এমন কথার জবাবে তিনি বলেন আমি বিষয়টা দেখছি। বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা সরকারি এ জ্বালানি তেল সম্পদ কি এভাবে লুটপাট হয়ে যাবে? কেউ কি নেই এ বিষয়ে প্রতিকারে এগিয়ে আসবে?