যারা সৎভাবে ব্যবসা করবেন, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কিন্তু কেউ অবৈধভাবে কোনো পণ্য মজুদ করে বা ষড়যন্ত্র করে দাম বৃদ্ধির চেষ্টা করলে, তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে আমরা পিছ পা হব না। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশব্যাপী এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন করে এ হুঁশিয়ারি দেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে আমরা রমজানে পাঁচটি পণ্য দেবো। এখন দিচ্ছি তেল, চিনি, ডাল, চাল- এই চারটি আইটেম। সারা বাংলাদেশে এক কোটি পরিবার এই চারটি আইটেম পাবে। প্রধানমন্ত্রী প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে আমাদের বলেছেন, ঢাকা শহর ও এর আশপাশে যেসব শ্রমিক বসতি এলাকা আছে সেখানে যেন ফোকাস করা হয়। তিনি বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষদের টিসিবির পণ্যের আওতায় আনতে চেষ্টা করবো। এ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের একটা দায়িত্ব আছে। আমরা সাত হাজার ৭০০’র বেশি ডিলারের মাধ্যমে টিসিবির কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করি। তা না হলে এটি সম্ভব হতো না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে টিসিবির পণ্যের সুবিধাভোগীদের তালিকা তৈরি করা হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এক কোটি স্মার্ট কার্ড দেবো। ২০ লাখ কার্ড প্রস্তুত হয়ে গেছে। সেটি আমরা বিতরণ করবো। আগামীতে আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবো। আমরা টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু করেছিলাম ট্রাকের মাধ্যমে। সেখান থেকে দোকানে এসেছি। পরবর্তী সময়ে এটি যেন ন্যায্যমূল্যের দোকানের মতো হয়। বিশেষত কর্মজীবীরা যেন বিকেলেও ন্যায্যমূল্যে পণ্য নিতে পারেন আমরা সে ধরনের ব্যবস্থা নিয়ে আসবো। আহসানুল ইসলাম টিটু আরও বলেন, আমরা পোশাকশ্রমিকদের জন্য আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা করবো। একই সঙ্গে ডিলারদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রতি বছর তাদের নিয়োগ ও নবায়নের ব্যবস্থা রাখবো। জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করবো, তারাও যেন এই কার্যক্রমটা মনিটরিংয়ের মধ্যে নিয়ে আসেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগটা যেন সফল হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী রমজান পর্যন্ত টিসিবির জন্য আমাদের পণ্য মজুতের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। রমজান পর্যন্ত টিসিবির কোনো পণ্যের সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, আমরা সুযোগ-সুবিধা তৈরির মাধ্যমে যারা বাজার ব্যবস্থাপনায় যুক্ত আছেন তাদের কনফিডেন্সে নিয়েই কাজ করতে চাই। ভয়-ভীতি, জরিমানা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য উৎপাদন এবং রপ্তানিকারকদের থেকে রিটেইলারের মাধ্যমে ভোক্তার কাছে সহজে সব পণ্য পৌঁছে দেওয়া। এটি নিশ্চিত করাই আমাদের মন্ত্রণালয়ের কাজ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা সৎভাবে ব্যবসা করবেন তাদের সব ধরনের সহযোগিতা সরকারের তরফ থেকে দেওয়ার চেষ্টা থাকবে। তবে রমজান সামনে রেখে যারা কারসাজি বা পণ্য মজুত করে বাজারে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করবেন তাদের ব্যাপারে কঠোর হতে একটুও পিছপা হবো না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, টিসিবির মাধ্যমে প্রথমে আমরা তেল, চিনি ও ডাল বিক্রি শুরু করি। রমজানের সময় এর সঙ্গে ছোলা ও খেজুর যুক্ত হয়। আমাদের উপকারভোগীরা এর সঙ্গে চাল দেওয়ার দাবি জানায়। প্রধানমন্ত্রী এটি শোনার পর এই প্যাকেজের সঙ্গে চাল দেওয়ার নির্দেশনা দেন। গত বছরের জুলাই মাস থেকে আমরা ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল দেওয়া শুরু করি। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে অবস্থিত কিশলয় স্কুল সংলগ্ন পার্ক মাঠে নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে টিসিবি পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এর আয়োজন করে টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয়। এতে সহযোগিতা করে টিসিবির ডিলার মেসার্স সদাই জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মো. শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী নিম্ন আয়ের মানুষদের ১০০ টাকা দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৬০ টাকা দরে দুই কেজি মশুর ডাল, ৭০ টাকা দরে এক কেজি চিনি ও ৩০ টাকা দরে পাঁচ কেজি চাল দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব মো. সলিম উল্লাহ (সলু) প্রমুখ।