জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে কলেজ শাখার ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দুই নেতা ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) মূলে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করায় কলেজের এক কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে সদর থানায় মামলা দায়ের করায় ওই দুই নেতার দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। জানাযায়, গত ১৭জানুয়ারী (বুধবার) দুপুরে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের হিসাব শাখার কম্পিউটার কক্ষে টিসি মূলে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করায় কলেজের হিসাবরক্ষক মো. হেলাল উদ্দিনকে মারধর করেন। মারধরের শিকার হওয়া কর্মচারীর মো. হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শামীম আহম্মেদ ও সহ-সভাপতি নাদিম হাসান জয় দুইজনের নামসহ আরও ৩-৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দুই নেতাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জেলা ছাত্রলীগ। মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, মো. শামীম আহম্মেদ ও নাদিম হাসান জয়ের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন কলেজের কম্পিউটার কক্ষে প্রবেশ করেন। শামীম আহম্মেদ টিসি মূলে একজন শিক্ষার্থীকে কলেজে ভর্তি করতে বলেন। এ সময় মো. হেলাল উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষের অনুমতি ব্যতীত ভর্তি তালিকায় এপ্রোভে অস্বীকৃতি জানান। পরে ওই দুজনের নেতৃত্বে তাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করা হয়। তাদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করা হয়। সে সময় অধ্যক্ষ কলেজে উপস্থিত ছিলেন না। একপর্যায়ে হিসাবরক্ষক হেলাল তাদেরকে উপাধ্যক্ষের অনুমতি নিতে বলেন। পরে ওই দুই ছাত্রলীগ নেতা উপাধ্যক্ষের কাছে যায়। উপাধ্যক্ষ হিসাব শাখায় গিয়ে হেলালের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি উপাধ্যক্ষকে বললে, তিনি বলেন এটা অধ্যক্ষের অনুমতি লাগবে। এ সময় তারা হিসাবরক্ষক হেলালকে মারধর শুরু করেন। তারা এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তারা টেনে হিঁচড়ে তাকে (হেলাল) ওই কক্ষ থেকে বের করে অটোরিকশায় উঠিয়ে কলেজ থেকে বের করে নিয়ে যায়। অটোরিকশায় উঠিয়ে তাকে মারধর করতে-করতে পৌর কবরস্থানে নেওয়া হয়। তিনি জীবন বাঁচাতে ডাক-চিৎকার দিলে, স্থানীয় লোকজন এগিয়ে যান। এ সময় তারা (ছাত্রলীগ নেতা) তাকে রেখে পালিয়ে যান। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান বাবু বলেন, ‘কলেজে একটি অনাকঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র নেতাদের সাথে পরামর্শ করে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শামীম আহম্মেদ ও সহ-সভাপতি নাদিম হাসান জয়কে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। তদন্তে দোষীসাব্যস্ত হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রেরণ করা হবে। এ বিষয়ে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো.হারুন অর রশিদ বলেন, ‘হিসাবরক্ষক হেলাল রাতে আমাকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করি। পরে শামীম ও জয়ের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্যে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা মো.শামীম আহম্মেদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জামালপুর সদর থানার ওসি তদন্ত (পরিদর্শক) হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ওই কলেজের একজন কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এখানে দুজনের নাম ও ৩ থেকে ৪ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।