ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বৃষ্টিতে ইটভাটার অধিকাংশ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিনে শুষ্ক মৌসুমে আকস্মিক বৃষ্টিতে কালীগঞ্জের ইটভাটার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, অধিকাংশ ভাটার কাঁচা ইট পানিতে ভিজে কাদা হয়ে গলে গেছে। বুধবার রাত থেকে শুরু হয়ে বৃহম্পতিবার সারা দিনই থেমে থেমে ও জোরালো বৃষ্টি চলে। কালীগঞ্জ উপজেলায় বর্তমানে ১৬ টি ইটভাটা রয়েছে এ বছর প্রতিটি ভাঁটা চালু রয়েছে। এসব ভাটায় পোড়ানোর অপেক্ষায় রাখা প্রায় কয়েক কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টিতে গলে গেছে। যাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে অন্তত ২ কোটি টাকা। ভাটার মালিকেরা বলছেন, অসময়ে এভাবে হঠাৎ বৃষ্টি চলতে থাকলে ভাঁটা চালু রাখা যাবে না ও ইট কাটা ও সম্ভব হবে না। কালীগঞ্জ উপজেলার শোয়াইবগর, ছালাভরা, গুনজোনগর, ঈশ^রবা, পাতবিলা, তালেশ^র, বারবাজার, দামোদরপুর, কোলাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১৬টি ভাটায় রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে সারিবদ্ধ করে রাখা শুকনো ইটগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার কয়েকজন মালিক জানান, নভেম্বর মাস থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতিটি ভাটায় ইট তৈরি করে স্তুপ বানিয়ে রাখা হয়। এখন হঠাৎ বৃষ্টিতে প্রতিটি ভাটায় স্তুপ করে রাখা ৪৫ থেকে ৫০ লাখ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কারও ভাটায় ১০ লাখ কাঁচা ইট খোলা জায়গায় রাখা ছিল। সে ভাটায় বৃষ্টিতে প্রায় ৭ লাখ ইট ভেঙে কাদায় পরিণত হয়েছে। এ ক্ষতি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইটভাটার মালিকরা বলছেন এ বছর কয়লা দাম অনেক বেশি, আবার ভাটার শ্রমিক মজুরি ও বেশি দিতে হচ্ছে,ঠিকমত মাটি পাওয়া যাচ্ছে না যে কারণে এবার প্রতিটি কাঁচা ইটের উৎপাদন খরচ অন্তত ৫/৬ টাকা ধরা হলেও ভাটার মালিকদের মোটা অংকের লোকসান গুনতে হতে পারে। সামনে বৃষ্টি হলে ইট ভাটায় আর ক্ষতি বা লোকসানের পরিমান বেড়ে যাবে। ইটভাটার মালিকগন বলেন, হঠাৎ বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। যে কারণে বৃষ্টিতে কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া খুবই দুসাধ্য হয়ে পড়বে। মাঘ মাস শুরুতে টানা দুই দিনের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে প্রতিটি ইটভাটার কাঁচা ইট। অনেক আধা শুকনা ইট বৃষ্টির পানিতে দাগ পড়েছে, এ ইট বিক্রি হবে কম দামে। ইটভাটা গুলোতে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় খলিয়ানে থাকায় ইট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো ইট ভাটায় খামাল করে রাখা ইটে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখায় কিছুটা রক্ষা পেয়েছে। তবে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হওয়ায় এখন বাড়তি সময়, শ্রমিকদের খাওয়ার খরচ গুনতে হবে মালিকদের। নষ্ট ইট আঙিনা থেকে সরিয়ে পুনরায় পানি দিয়ে নরম করে ইট তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া বৃষ্টিতে আঙিনা নষ্ট হলে কয়েকদিন শ্রমিকদের বসে বসেও পারিশ্রমিক দিতে হবে মালিকদের। খলিয়ানে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইটগুলো গলে গেছে। কিছু কাঁচা ইট খামাল করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে, সে গুলো ও ঠিকমত রক্ষা করা যায়নি। এ ছাড়া কয়েকটি ভাটায় চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য সাজানো ইটও গলে গেছে। অনেক ইট ভাঁটা মালিক বলছেন হঠাৎ বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। আবার প্রতিদিন শ্রমিকদের বসে বসে মজুরি ও খেতে দিতে হচ্ছে। খলিয়ান শুকাতে আরও ৫/৬ দিন সময় লাগবে। প্রতিদিন শ্রমিকদের অন্তত ৮ ধেকে ১২ হাজার টাকা মজুরিসহ খরচ দিতে হচ্ছে। সে হিসেবে শ্রমিকরা যে কয়দিন বসে থাকবে সে কয়দিন মজুরিসহ খরচ টানতে হবে তাদের পিছনে। ইটভাটার মালিকেরা বলছেন, এভাবে যদি আরও কয়েকদিন বৃষ্টি হয় তাহলে ভাঁটা চালু রাখা যাবে না। অনেক ইট ভাটায় রোদে শুকাতে দেয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে গলে নষ্ট হয়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক কামাল উদ্দিন চুন্নু বলেন, আমার ভাটায় অন্তত ৮ লাখ টাকার ইট নষ্ট হয়েছে এ রকম কালীগঞ্জের ১৬ টি ভাঁটা মালিকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর কয়লার দাম দ্বিগুণ বেশি, এবং শ্রমিক ও মাটির দামও বেশি।