ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে জাহিদুল ইসলাম পরশ (১৯) নামের এক যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। মা বলছে পরশের বয়স ১৬ বছর। পুলিশের মতে ১৯ বছর। যুবকের মা সুলতানা বেগমের অভিযোগ পাম্প চুরির অভিযোগে পরশকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তাদের প্রতিবেশী কয়েক জন। গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার দিনে উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মুন্সিবাড়ির কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। হত্যার অভিযোগের তীর এখন শফিক (৫২), বাবুল (৩২) ও মঈন উদ্দিন সহ (৩২) আরো কয়েক জনের দিকে। আর অভিযুক্তরা বলছেন, এটা হত্যা নয়। আত্মহত্যা করেছে পরশ। পুলিশ বলছে লাশের মুখে গলায় সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আবার বিষ পানের কথাও শুনছি। মৃত্যুর ২৩ ঘন্টা পর শুক্রবার বিকাল ৫ টায় জেলা সদর হাসপাতালে পরশের ময়না তদন্তের কাজ শুরূ হয়।
পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মধ্যপাড়ার আবেদ মিয়ার ছেলে পরশ। পেশায় অটোরিকশা চালক পরশ একা গ্রামের বাড়িতে থাকে। আর মা বাবা ও পাঁচ ভাই বোন ঢাকায় থাকে। কিছুদিন পুর্বে পরশদের পাশের বাড়ির আলমগির নামের এক ব্যক্তির একটি পানির পাম্প চুরি হয়। চুরির অভিযোগ আসে পরশের উপর। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে প্রতিবেশী কয়েকজন মিলে পরশকে বেদম প্রহার করে। উপর তুলে একাধিকবার পরশকে আচরে দিয়েছে। পরশের সমগ্র শরীর থেঁতলে দিয়েছে। পরশের শাররীক অবস্থার অবনতি দেখে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান বড় চাচি মিনারা বেগম (৫২)। ওঁর সাথে হাসপাতালে যান প্রতিবেশী বাবুল মিয়ার দুই ছেলে শাহাদাৎ (১৮) ও শাওন (১৭)। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরশের মৃত্যু হয়। পরশের মৃত্যুর হাসপাতালে তার কোন স্বজনকে খোঁজে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে পরশের মা বাবা। বিষয়টিকে কোন রকমে নিস্পত্তি অথবা ধামাচামা দেওয়ার জন্য গতকাল দিনভার চলে দেন দরবার। অবশেষে মা সুলতানা বেগম হাসপাতালে পৌঁছলে বিকাল ৫ টায় পরশের লাশের ময়না তদন্ত শুরূ হয়। নিহত পরশের মা সুলতানা বেগম বলেন, আমাদের পাশের বাড়ির আলমগিরের পাম্প চুরি হয়েছে। এজন্য মুন্সি বাড়ির শফিক, বাবুল ও মঈন উদ্দিনসহ কয়েক জনে মিলে কিল ঘুষি ও আচরে আমার ছেলেকে ভর্তা করে ফেলেছে। অবস্থার অবনতি দেখে হাসপাতালে নিয়ে রেখে তারা সটকে পড়েছে। এখন বিষ পানে আত্মহত্যার নাটক তৈরী করে হত্যার দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। আমার ১৬ বছরের শিশুকে যুবক বানানোর চেষ্টা করছে। তারা প্রভাবশালী তাই ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করব। অভিযুক্ত আ.লীগ নেতা শফিক মুন্সি বলেন, পরশ এলাকার চিহ্নিত মাদকাসক্ত ও চুর। গত বুধবার রাতে এক বাড়িতে চুরি করে পালানোর সময় মালামালসহ আটক করে মারধর করেছে গ্রামবাসী। আমি তখন ঘটনাস্থলে ছিলোম। বাড়িতে গেলে তার চাচারা শাসন করেন। পরে ক্ষোভে বিষ পান করে পরশ। তাকে প্রথমে সরাইল ও পরে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি দেখে ঢাকা নেয়ার পথে পরশ মারা যায়। সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, নিহত পরশের মুখে, গলায় সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের অনেক গুলো চিহ্ন রয়েছে। তবে বিষ পানে আত্মহত্যার কথাও শুনছি। এস আই আবু তাহের চুরতহাল রিপোর্ট করেছেন। ময়না তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি।