ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে আধুনিক পদ্ধতিতে দ্রুত জমি চাষের মাধ্যম হিসেবে ট্রাক্টর বা কলের লাঙ্গল অতি পরিচিত একটি কৃষিযান। বর্তমানে সেই কৃষিযান এখন কালীগঞ্জের জনসাধারণের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছেন ইট ভাটার মাটি,ইট,বাঠ জালানি ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। বেপরোয়া ভাবে এটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে গ্রাম ও মহাসড়কের এলাকায়। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ শহরের অভ্যন্তরেও দেখা যাচ্ছে এটি। সনদবিহীন চালকেরা ট্রাক্টর গুলো বেপরোয়া ভাবে চালাচ্ছেন। ফলে রাস্তা-ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদের দিয়ে ট্রাক্টর চালানো হয়, ফলে এসব উঠতি বয়সের ছেলেরা বেপরোয়া গতিতে ট্রাক্টর চালিয়ে বেড়ােেচ্ছ।
কালীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার অভ্যন্তরে শিবনগর এলাকায়, ঈশ্বরা, পাতবিলা,তালেশর, কোলা সড়ক, ছালাভরা, দামোদরপুর,বারোবাজার চলছে দানবের মত ইট ভাটার মাটি বহনের ট্রাক্টর। ট্রাক্টরের বড় বড় চাকার কারণে পিচের কার্পেটিংয়ের রাস্তায় কাদায় পরিণত হচ্ছে। সড়কে ইট ভাটার মাটির কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই যে কাদা হচ্ছে তাতে করে পথচারিরা চলাচল করতে পারছে না। ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মাঝে মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীরা। বেপরোয়া চলাচলে সবচেয়ে ঝুঁকিতে স্কুলগামী কোমলমতি ছোট ছোট শিশুরা। পাকা সড়ক হলে ও কাদার কারণে মটর সাইকেল চালিয়ে যাবার সময় ঘটছে ছোট বড় দূর্ঘটনা। এলাকার মানুষ বলছেন ট্রাক্টর ও মাটি টানা ট্রলির কারণে প্রতিনিয়ত চলাচল করায় স্কুলের বাচ্চারা সবসময় আতঙ্কে থাকে। কাদার রাস্তায় পিচলে থাকার কারণে অনেকেই পড়ে গিয়ে আহত হয়ে থাকে। এই গাড়ি চলাচলের কারণে স্কুল গামি বাচ্চাদের একা ছাড়তে পারে না অভিভাবকরা, যে কারণে রাস্তায় চালাচল করতে পারে না।
কালীগঞ্জে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন মাঝে মাঝে এটি বন্ধের উদ্যোগ নিলেও এলাকার কিছু লোভী প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের চাপে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না বলে জানিয়েছেন অনেকেই। অনেক সময় উপজেলা আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এসব নিয়ে আলোচনা হলেও বাস্তবে সেটা প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে কালীগঞ্জ কোটচাদপুর সড়কের ঈশ্বরবা ও শিবনগর সড়কে রয়েছে ইটভাটা এসব ভাটার কারণে পাকা সড়কের যে পরিমান ইট ভাটার মাটি পড়ে তাতে করে সামান্য বৃষ্টি কুয়াশা পড়লে চলাচল করতে পারছে না ছোট যানবাহন, মটর সাইকেল, ভ্যান, রিকসা, সিএনজি, বাইকেলসহ পথচারিরা।
কালীগঞ্জ শহর ও গ্রাম এলাকায় ১৬ টি ইট ভাট রয়েছে প্রতিটি ভাটার মাটির সড়কে পড়ে থাকার কারণে এভাবে কাদায় পরিনত হচ্ছে। বিশেষ করে ইট ভাটার মাটি, বালি, কাঠ বহনের সরকারি ভাবে কোন অনুমতি নেই। অন্যদিকে বিআরটি কর্তপক্ষ বলছেন এভাবে সড়কে ভাটার ট্রাক্টর, ট্রলি এ দুইটাই চলাচল অবৈধ।
কালীগঞ্জ যশোর সহাসড়কের পাশে রঘুনাথপুর নামক স্থানে রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,পাশে রয়েছে বিশাল ইট ভাটা, কালীগঞ্জ কোটচাদপুর সড়কের পাতবিলা ও তালেশ্বর নামক স্থানে রয়েছে ইটভাটা। এসব ভাটার কাছে রয়েছে বিশাল বিশাল ইটের ভাটা, ফলে ভাটার কাদার কারণে শিক্ষার্থীরা চলাচল করতে মারাত্নক হিমশিম খাচ্ছে। আবার মহাসড়কে আমবাগান নামক স্থানে সড়কের পাশে গড়ে উঠা ইটভাটার মাটি রাস্তার উপরে ¯ু‘পাকারে পড়ে থাকায় চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অপরদিকে গুলশান মোড় থেকে শিবনগর সড়কে ইট ভাটার মাটির কারণে পৌরসভার রাস্তা ভেঙ্গে গেছে এবং কাদার কারণে চলাচল অনুপযোগি হয়ে পড়েছে।ইটভাটা গুলোতে প্রতিদিন ট্রাক্টর বোঝাই করে ইট প্রস্তুতের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে মাটি নিয়ে আসছে ভাটায়।
ইট প্রস্তু ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩(২০১৩ সনের ৫৯ নং আইন )অথচ ইট প্রস্তুত ও ভাঁটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) ২০১৩ আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কৃষিজমি, পাহাড় ও টিলার মাটি কেটে ইট তৈরি করা যাবে না। ওই আইনের ৬ নম্বরে ধারায় বলা হয়েছে, জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করে ইট পোড়ানো যাবে না। এ ছাড়া এই আইনের ৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় এয়ার শেডে ইটের ভাঁটা স্থাপন করা যাবে না।
এ ছাড়া সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে এবং বিশেষ কোনো স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল-ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ইটভাটা স্থাপনে ছাড়পত্র ও লাইসেন্স দেওয়া হবে না। কিন্তু বাস্তবে এসব আইন কোন ভাবেই প্রয়োগ বা মানা হয় না।২০২১ সালে ভোর থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কের কালীগঞ্জের বাকুলিয়া নামক একটি স্থানেই ঘটেছে প্রায় ২৩ টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা। মাত্র ৫ ঘন্টার ব্যবধানে ওই স্থানে দুর্ঘটনায় আছড়ে পড়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন অনেকেই। ওই সময়ে একের পর এক দুর্ঘটনায় পতিত মানুষের আহাজারি শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয়সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা। তারা রাস্তায় বালির বস্তা ও লাল কাপড় টাঙ্গিয়ে পথচারীদের সহযোগিতা করেন। ওইদিন ভোর ৫টার দিকে মানুষের চিৎকার শুনে তিনি রাস্তাতে আসেন এলাকার মানুষ। এ সময় দেখতে পান দু’জন মটরসাইকেল অরোহী দুর্ঘটনায় জখম হয়ে রাস্তাতে কাতরাচ্ছেন। একই সময়ে আরো কয়েকটি মোটর সাইকেল আসলে তারাও সড়কের কাদায় পড়ে আহত হন। এভাবেই একের পর এক ওই স্থানেই কমপক্ষে ২৩ মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল। ওই সময়ে দুর্ঘটনায় আহত মোটর সাইকেল আরোহী সাব্বির হোসেন জানান, রাস্তায় উপরে থাকা ইট ভাটার ভেজা মাটিতে কাদার কারণে চাকা পিছলে পড়ে গেছি। অল্পের জন্য প্রানে রক্ষা পেলেও হাত পা কেটে বেশ আঘাত প্রাপ্ত হন। আহত মটর সাইকেল আরোহীরা বলেছিলে, সড়কে পড়ে থাকা মাটির পিচ্ছিলে এসব দুর্ঘটনা ঘটলেও তার কোন প্রতিকার নেই। তিনি মাটি টানা গাড়ি ও ইটভাটার মালিকদের দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি করেছিলেন।
মহাসড়ক, গ্রাম এলাকার ও পৌরসভার রাস্তা দিয়ে ভাঁটা গুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাটি, বালি। মাটি বহনের জন্য স্থানীয় ভাবে তৈরি ইঞ্জিন চালিত যান ট্রলি, লাটাহাম্বার কিংবা আলমসাধু ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব খোলা যানবাহনে মাটি বহনের কারণে রাস্তার ওপর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকছে মাটি, যা পরে আর ভাঁটা মালিকপক্ষ সরিয়ে নিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করছে না। ওই মাটি রাস্তায় পড়ে থাকায় রাস্তায় সামান্য বৃষ্টি হলে কাদার কারণে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ঢাকা, খুলনা,যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা বরিশাল, নাটোর, বগুড়া, রংপুরসহ বিভিন্ন রুটে দিন রাত ২৪ ঘন্টা হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে থাকে। কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেলসহ কয়েক হাজার ছোট যানবাহনও চলাচল করে। রাস্তায় মাটি পড়ে থাকার কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হয়। তা না হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। ইটভাটার মাটি রাস্তায় পড়ে শুকিয়ে থাকে, সরানো হয় না। মাটি রাস্তার ওপর শুকিয়ে যায়। গাড়ি যখন চলে তখন ঘট ঘট ঘট শব্দ হয়। কিন্তু সামান্য একটু বৃষ্টি হলে পিচলে কাদায় পরিনত হয়ে বড় সমস্যা দেখা দেয়। তখন ছোট বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিভিন্ন দপ্তরের পক্ষ থেকে মৌখিক ও লিখিত এমনকি ভাটার মালিকদের একাধিকবার বলার পরও কোনো কাজ হয়নি। ইটভাটার মালিকপক্ষ কোনো কথা শোনে না।