রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ও বিপজ্জনক পথ দিয়ে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে অভিবাসন বা অভিবাসনের চেষ্টা করছে। টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে নিয়ে আসে পাঁচারকারীরা। শরণার্থী জীবন থেকে পালানোর ইচ্ছে এবং তাদের জীবন ও জীবিকা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সহ বিভিন্ন কারণে তারা এই পথ বেছে নেয়। কিন্তু এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। অপরাধী চক্র এবং চোরাচালান চক্রের ক্রমবর্ধমান অনিয়ম এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন একটি নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ অভিবাসীরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, আর্থিক ক্ষতি এমনকি মানব পাঁচারের সম্মুখীন হয়। এছাড়াও, অভিবাসীরা ভাষার পার্থক্য, নতুন পরিবেশ, সীমিত কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং গন্তব্য দেশে সামাজিক ও আইনি পরিবেশ বোঝার অভাবের কারণে নতুন ধরনের বৈষম্য ও অপব্যবহারের শিকার হয়। পরবর্তীতে তাদের কাঙ্খিত দেশের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অনেকেই নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। যদিও অনেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন, অনেকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণের পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা সহিংসতা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ পথ দিয়ে অভিবাসন বেছে নেয়। স্থানীয় বাংলাদেশিদের পাশাপাশি শরণার্থী শিবিরে থাকা অনেক রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক রোহিঙ্গা অবৈধ অভিবাসন রুট সম্পর্কে খুব কমই জানে। তাই মালয়েশিয়ায় প্রবেশের জন্য তারা পুরোপুরি চোরাকারবারিদের ওপর নির্ভরশীল। মালয়েশিয়ায় যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রথমে কক্সবাজারের টেকনাফে নিয়ে যায় চোরাকারবারীরা। যে বিষয়টি বারবার আশ্চর্যজনক তা হল আবেদনকারীদের এই দলে নারী, শিশু এবং নবজাতকের অনুপাত। টেকনাফ থেকে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমান্তে সমুদ্রপথে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাদের ছোট নৌকায় করে মিয়ানমারের সামিলা উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক ছোট ছোট নৌকায় জড়ো হয় এবং সমুদ্র ভ্রমণে যায়। অভিবাসীরা সামিরা থেকে মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পাঁচারকারীদের অগ্রিম অর্থ প্রদান করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টেকনাফ তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি আদায় করে। তখন অভিবাসীদের অতিরিক্ত ফি ও দিতে হয়। এমনকি নিখোঁজও হয়েছে বহু মানুষ। দেশে এ অবস্থা চলতে থাকলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অধিকন্তু, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে মানব পাঁচারকারী প্রধান দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হলে তা বিশ্ববাজারে জাপানের অবস্থানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং রোহিঙ্গা মানব পাঁচারের সমস্যা বাংলাদেশের জন্য আলাদা নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। বাংলাদেশ যেখানে অবৈধ রোহিঙ্গা অভিবাসন নিয়ে লড়াই করছে, মালয়েশিয়াও একটি পরিচিত মানব পাঁচারকারী দেশ। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও রোহিঙ্গারা অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এই ঝুঁকি এই সমস্ত দেশের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এবং শক্তিশালী ও বিবেকবান দেশগুলোর উচিত রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ দেশে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। সে দেশে তাদের নিরাপদ আবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে।