প্রাকৃতিক প্যারাবনগুলো দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষিতসহ নানা ধরনের বনাঞ্চলগুলো সরকারের নানা উন্নয়ন প্রকল্পের কারণেও হুমকির মুখে। এমনকি কক্সবাজারের প্যারাবন নিধনেও নেমেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। প্রতিদিন নির্বিচারে কাটা হচ্ছে প্যারাবনের বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ। ইতোমধ্যে প্যারাবনের বড় একটি অংশ নিঃশেষ হয়েছে। যে প্রাকৃতিক বন শুধু কাঠ দেয় না, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে জনপদকে রক্ষাও করে। সিডর ও আইলার সময় কিংবা অতীতের আরো অনেক ঘূর্ণিঝড়ের সময় তার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া গেছে। কক্সবাজারের উপকূলীয় অঞ্চলেও অতীতে অনেক ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস নিষ্ঠুর আঘাতের চিহ্ন রেখে গেছে। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় প্রাণ হারিয়েছিল ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গিয়েছিল কয়েক লাখ গবাদি পশু। কিন্তু মানুষ বর্তমান বিবেচনায় অতীত-ভবিষ্যৎ কোনো কিছুকে পরোয়া করে না। তাই সমুদ্র উপকূলের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত প্যারাবন উজাড় করে চিংড়িঘের বানাতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী। এমনকি পূর্বাংশে দাঁড়িয়ে থাকা প্যারাবনের মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাঁধ দিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করার কাজও শুরু করেছে। এখন উপকূলীয় অনেক এলাকায় প্যারাবনের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে গেছে। যেসব এলাকায় সামান্য পরিমাণে প্যারাবন রয়েছে, সেগুলোর ওপরও প্রভাবশালীদের লোভের দৃষ্টি রয়েছে। সুযোগ পেলেই তারা প্যারাবন ধ্বংসে মেতে ওঠছে। ‘কক্সবাজারের ভবিষ্যতের সঙ্গে জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে, তাই এটি আর কক্সবাজারের সমস্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি এখন জাতীয় সমস্যা। সমন্বিত-ভাবে উদ্যোগ নিয়ে পরিবেশ ধ্বংসকারীরা যত বড়ই হোক না কেন তাদের চিহ্নিত করে সবার প্রিয় কক্সবাজারকে বাঁচাতে হবে। যদিও পাহাড় ও বন কাঁটার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের মাঝেমধ্যে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। গাছ কাঁটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে বা পরিবেশ আদালতে মামলা করেই যেনো পরিবেশ অধিদপ্তর দায়িত্ব শেষ। এ কথা ভুলে গেলে চলবে না যে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং বন ধ্বংসকারীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের। জরিমানা ছাড়াও পাহাড় বেষ্টনী দিয়ে বনায়ন করতে হবে। দিনদুপুরে যেভাবে প্যারাবন দখল, হাজার হাজার গাছ নিধন করে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে সেটি উদ্বেগজনক। পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় এসব জীব-বৈচিত্র্য বিধ্বংসী কর্মকা- চালানো হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তা আরও উদ্বেগজনক। এসব পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা- বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’ আমরা আশা করি, স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই পরিবেশ-বিনাশী অপণ্ডতৎপরতা রোধ করবে এবং নিয়মিত মামলা করাসহ জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।