‘আমার অভিনীত শেষ বাজি চলচ্চিত্রটি গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে। একই দিনে নিয়ম নীতি না মেনে বিদেশি একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। যা আমাদের অধিকাংশ সিনেমা হলে প্রদর্শিত হয়েছে। যে কারণে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প এবং আমার ক্যারিয়ার যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদেশি ভাষার সিনেমা আমদানি প্রসঙ্গে আমাদের সমিতি নীরব রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় সমিতির কার্যকরী কমিটিতে থাকা আমি (নিজেকে) অযৌক্তিক এবং অনুচিত মনে করছি। তাই সহ-সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি চাইছি। জমা দেওয়া অব্যাহতি পত্রে এই কথাগুলো লিখেছেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। উল্লেখ্য, গত শনিবার মুক্তি পেয়েছে সাইমনের নতুন সিনেমা ‘শেষ বাজি’। একইসঙ্গে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘কাগজের বউ’ এবং ওপার বাংলার সিনেমা ‘হুব্বা’। দেশের দুই সিনেমার চেয়ে বেশিসংখ্যক প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে হুব্বা।আমদানিকৃত সিনেমার কারণে নিজের সিনেমা হল কম পেয়েছে বলে মনে করেন সাইমন। এমনকি বিষয়টি নিয়ে শিল্পী সমিতির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তবে হিন্দি সিনেমা দেশের প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিতই মুক্তি পাঁচ্ছে। সেই সিনেমাগুলোর সাথেও দেশের একাধিক সিনেমা মুক্তি দিয়েছেন নির্মাতা। আমদানিকৃত সিনেমার আয় থেকে ১০% কমিশনও নিয়েছে শিল্পী সমিতি। নানা সময় বিষয়টি নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। কিন্তু শিল্পী সমিতি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সেই জায়গা থেকে নিজের সিনেমা মুক্তি এবং ব্যবসায়িক শঙ্কায় সাইমনের অব্যাহতি নিয়েও নানাজন নানা কথা বলছেন। কেউ কেউ তার পক্ষে থাকলেও অনেকেই তার স্বার্থে আঘাত পড়ার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মন্তব্য করছেন।নির্মাতা খিজির হায়াত খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শিল্পী সমিতি থেকে তোমার (সাইমন) সহ-সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অব্যহতি নেওয়ার চিঠিটা দেখলাম। দেখে অবাক হইনি। হিন্দি সিনেমা সহ বিদেশি সিনেমাগুলোকে সঠিক কার্যকরী নীতিমালা না করে না মেনে অযাযিতভাবে ঢুকতে দেওয়ায় আমাদের নিজেদের সিনেমাগুলো যে অনেক বাধা আর ক্ষতির সম্মুখীন হবে তা তো আগেই জানতাম। দুঃখ এটাই যখন এই নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম তখন খুব কম মানুষকে সাথে পেয়েছিলাম। দুঃখজনক হলেও সত্য শিল্পী সমিতিসহ চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনকে দেখেছি তখন কমিশনের আশায় আত্মঘাতী সিন্ধান্ত নিতে। কিছু মানুষের ব্যক্তি স্বার্থের কাছে আমরা হেরে গিয়েছিলাম। নগর যখন পুড়ে দেবালয় রক্ষা পায় না। সেটাই হতে চলেছে, নিজেদের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এই অসম প্রতিযোগিতা একদিন আমাদের নাজুক সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আরো অনেক বড় ধ্বংসের মুখে ফেলে দেবে। যাক সকল বাধার মুখে আমাদের যুদ্ধটা চালিয়ে যেতে হবে। হয়তো একদিন এদেশের সরকার আমাদের রক্তাক্ত চিৎকার শুনতে পাবেন এবং নিজ দেশের সিনেমাকে বাঁচানোর কার্যকরী পদক্ষেপ নেবেন। সেই দিনের অপেক্ষায় থাকলাম।’ তবে এর আগে কমিশন নেওয়া এবং বর্তমানে শিল্পী সমিতির সাথে নিজের স্বার্থে আঘাত লাগার কারণে বৈরিতা কি-না?-এমন প্রশ্নে অব্যাহতিপত্রের বাইরে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি সাইমন সাদিক। শুধু বললেন, ‘আমি কখনও কাঁদা ছোড়াছুড়ি করিনি। এখনও চাই না। আপাতত বিষয়টি নিয়ে অব্যাহতিপত্রের বাইরে কিছু বলতে চাই না।’ যদিও অব্যাহতিপত্রে সাইমন লিখেছেন, ‘বিগত দিনগুলোতে নিজ দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ নিবেদিত ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি সমিতির নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত ও নীতির সঙ্গে একমত হতে পারছি না। সাফটা চুক্তিতে বিদেশি ভাষার সিনেমা আমদানি করে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে হুমকিতে ফেলে বিদেশি সিনেমা মুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভুত বিতর্কিত পরিস্থিতিতে সমিতির কার্যকরী পরিষদের নিষ্ক্রিয়তা আমার কাছে সমর্থনযোগ্য নয়।’