গল্পে অনেক কিছুই ঘটতে পারে, কিন্তু বাস্তব এই যে কাঁচ আমাদের খাদ্য নালি দিয়ে নামবার সময় নালির নরম দেওয়াল ক্ষতবিক্ষত করে দেবে। ফলে বমি করিয়েও কাঁচ বার করা যায় না। কিন্তু বাস্তবে কাচ ও আগুন খেয়ে খেলা দেখিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে বেচে আছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ ঢাকালে পাড়ার সেলিম সরকার। তিনি প্রায় ৩১ বছর এ খেলা দেখিয়ে বেড়াচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কাচ চিবিয়ে খেয়ে হজম ও করছে বছরের পর বছর। বৈদ্যুতিক কাচের টিউবলাইট মুখে ভরে চিবিয়ে কচ-কচ করে চিবিয়ে খাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। চিবিয়ে কাচ খাওয়া দেখে সবাই হতবাগ হয়ে পড়ে। এই খেলায় আমেজ করে আগুন মোমবাতিতে ধরিয়ে মুখে পুরে নিচ্ছেন আবার কখনো খাচ্ছেন কেরোসিন তেলের জ¦লন্ত আগুন। কী আজব এক খেলা দেখাচ্ছে সেলিম সরকার। তিনি এমন ঝুঁকিপূর্ণ খেলা দেখান বিভিন্ন হাটবাজার ও গ্রামে-পল্ল¬ীতে ঘুরে ঘুরে। দীর্ঘ ৩১ বছর জীবিকার তাগিদে বেছে নিয়েছেন এসব ভয়ংকর সব খেলা। খেলা দেখে মানুষ যে টাকা দেয় তাই দিয়ে সংসার চালায় সে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার ঢাকালে পাড়ার বাসিন্দা সেলিম সরকারের খেলা দেখে মানুষ হতবাগ হয়ে পড়ে। চিকন মোটা যত বড় কাচ হোক না কেন সব চিবিয়ে খেয়ে হজম করছে। সেলিম সরকারের দেখানো খেলা দেখে মুগ্ধ দর্শক লিতু মিয়া বলেন, এরকম আশ্চর্যজনক খেলা আমি আমার জীবনে কখনো দেখিনি এই প্রথম দেখলাম। নিজেকে বিশ্বাস করাতে কষ্ট হচ্ছে যে, আগুন ও কাচ মুখে দিয়ে ও তার মুখের কিছু হচ্ছে না। কাচে মুখ কাটছে না ও আগুনে মুখ পুড়ছে না। তার খেলা দেখে উপস্থিত মানুষ অবাক হয়ে উঠে। সকলেই কম বেশি তাকে খেলা দেখানোর জন্য টাকা দিয়ে থাকে। খেলার পরে বলেন আমার পরিবারের জন্য যে যা পারেন দেন। মানুষ খুশি হয়ে সেলিম কে টাকা দিয়ে থাকে। সেলিম বলেন, ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা পর্যন্ত দিয়ে থাকে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে ২/৩ স্থানে খেলা প্রদর্শন করে টাকা উপার্যন করছে। আশ্চর্যজনক খেলা দেখানো সেলিম সরকার জানান, আমি ৩১ বছর ধরে বিভিন্ন হাট বাজারে এভাবে খেলা দেখায়। আমার খেলা দেখে দর্শকরা খুশি হয়ে যা দেই তাতে আমার সংসার চলে, কার ও কাছে জোর করে টাকা দাবি করি না। জীবনের উপর ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলেও বউ বাচ্চা নিয়ে খেলা দেখিয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য এই পেশা আমাকে অনেকটা বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয়েছে। লেখাপড়া খুব একটা করতে পানি নাই, তাই ছোটবেলা থেকেই তিনি শুরু করেন এই খেলা। আমার এই খেলায় একটি টেকনিক আছে, কিন্তু মাঝে মধ্যে অনেক কষ্ট হয়ই তবু ও মানুষের সামনে কষ্ট বুঝতে দিই না। পেটের তাগিতে আমাকে এই ২ প্রকার খেলা দেখাতে হয়। এই দুই খেলা বাদে অন্য কোন খেলা বা ম্যাজিক শিখিনী। সেলিম সরকারের সন্তান স্ত্রী সংসারে নাকি অনেক সুখি জীবন যাপন করছেন বলে জানান। হাট বাজার ও গ্রাম এলাকার মানুষ কে খুশি রাখতে জীবনের ঝুকি প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন ও সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে সন্ধায় বাড়িতে ফিরে আসেন। সেলিম আরো জানান, দৈনিক আয়ের কোন ঠিক ঠিকানা নেই, একক দিন একক আয় হয়। প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতিনিয়ত মজমা বা লোক জমায়েত করে এই খেলা দেখানোর চেষ্টা করি। জানি ঝুঁকিপূর্ণ তারপরও জীবিকার তাগিতে আমাকে এটা করতে হয়। এ খেলা শিখতে আমার অনেদিন সাধনা করতে হয়েছে। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, এ পেশায় অবশ্যই আমার ওস্তাদ আছে। তবে তাদের কথা বলা যাবেনা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস লেগেছে এই খেলা শিখতে। দেশের বহু জেলায় আমার ওস্তাদের পিছনে ঘুরেছে কিন্তু সে কারও এ খেলা শিখায়নি। আমি একাই ওস্তাদের কাছ থেকে খেলা দুটি শিখেছি। যে কারণে এখন আমার অনেক বড় মজলিসে খেলা দেখাতে ভালো লাগে। মজমা ছোট হয়ে গেলে মন খারাপ হয়ে যায় লোক সমাগম বেশি হলে খেলা দেখাতে ভাল লাগে।