কোনো অবস্থায় যেন সড়কে মৃত্যু থামছে না। নিরাপদ হচ্ছে না সড়ক। এতদিন সড়কে মৃত্যুর পরিসংখ্যান জানাতো বেসরকারি কিছু সংগঠন। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যেতো না। এবার প্রথমবারের মতো সড়ক পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ প্রথমবারের মতো সড়কে মানুষের মৃত্যু ও আহতের পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে প্রতিদিন সড়কে প্রায় ১৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবে সড়কে মৃত্যুর সরকারি এ হিসেবের সাথে বেসরকারি সংগঠনগুলোর তথ্যের পার্থক্য অনেক। তাদের পরিসংখ্যান বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার বছরে অন্তত সাড়ে ছ’ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। যদিও বিআরটিএ এর তথ্য বলছে, গত বছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৪৯৫ টি। এসব দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৫ হাজার ২৪ জন। আর আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৯৫ জন। পুলিশ বিভাগ; জেলা প্রশাসন এবং জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনা তথ্য সারা দেশে থাকা ৬৪ টি সার্কেল অফিসের মাধ্যমে যাচাই করেছে তারা। সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যুর যে হিসাব বিআরটিএ দিয়েছে, তা পূর্ণাঙ্গ নয় বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। তবে তারা বলছেন, সরকারি সংস্থার হিসাবও ভয়াবহ। বিদায়ী বছরের শেষের দিকে হরতাল অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দূরপাল্লার যানবাহন কম চলেছে। তারপরও দুর্ঘটনায় এত মানুষের মৃত্যু হয়েছে সড়কে, যা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমান বন্দর সড়কে বাস-চাপায় দু’ শিক্ষার্থী নিহত হলে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন দেশবাসীর সমর্থন পেয়েছিল। টানা ন’ দিন রাজপথে আন্দোলনের পর সরকারের আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রেণি কক্ষে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বাস্তব অবস্থার পরিবর্তন হয় নি। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সড়কে আনফিট গাড়ি চলছে, রুট পারসিটহীন গাড়ী চলছে যে কোনো রাস্তায়; ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার সময় কোন বিচার হচ্ছে না, এসব অভিযোগ থাকলেও বিআরটিএ এদিকে নজরদারি করে না। শুধু জনবলের কথা বলে দায়িত্ব এড়াতে চায়। সড়কে আইন মেনে চলার ব্যাপারে যেমন চালক, পথচারীদের অবহেলা রয়েছে; তেমনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সেদিকে দৃষ্টি দেন না। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩ প্রতিবেদনকেও সম্পূর্ণ অবাস্তব বলে উল্লেখ করেছে বিআরটিএ। তারা বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে ২০২১ সালের বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য দিয়েছে। তাতে উল্লেখ করেছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সম্ভাব্য সংখ্যা ৩১ হাজার ৫৭৮, যা সম্পূর্ণ অবাস্তব। প্রতিবেদনটি প্রকাশ না করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কে বিআরটিএ অনুরোধ করলেও তারা কথা রাখে নি বলে জানায় বিআরটিএ। গত ১৬ জানুয়ারি রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরে বিআরটিএ। তথ্যের হেরফের নিয়ে বিতর্ক তৈরি না করে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার ব্যাপারে তাদের উদ্যোগ কি, সেটাই বড় প্রশ্ন। বছরে কতজন মরলো আর কত জন আহত হলো সে বিতর্কে না জড়িয়ে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। কারণ প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান। আমরা আশা করবো আগামীতে তারা সড়কে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়ে মূল্যবান জীবনের সুরক্ষা দেবেন।