সারিবদ্ধভাবে রোপণ করা হয়েছে মাল্টা গাছ। মাল্টা গাছের এ বাগানটি দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। বাগানের মাঝখানে আলুর ক্ষেত। এর সঙ্গে লাউ, পেঁয়াজ, রসুন, পেঁপে, ফুল কপি, বাধা কপি, মরিচ, লাল শাক, সবুজ শাক, পালঙ্ক শাক ও শিমসহ হরেক রকমের সাথি ফসল আবাদ করা হয়েছে। ফলের বাগানের চারিপাশে সীমানা বেড়ায় লাগিয়েছেন মেটে আলু। একই জমিতে কয়েক ধরনের ফসল আবাদ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করলেও খোঁজ রাখেনা কৃষি অফিস। যশোরের চৌগাছা শহরের ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। ৫ বছর আগে ৪ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে করেছিলেন মাল্টা বাগান। এখন চাষি হাবিবের নতুন পুরাতন মিলে ১৫ বিঘা বর্গা জমিতে রয়েছে ফলের বাগান। ফল এসেছে মাল্টা ও পেঁয়ারা বাগানে। এবছর প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন তিনি।এছাড়া চাষি হাবিরের রয়েছে ২ বিঘা নার্সারী, পিঁয়ারা ৪ বিঘা, ড্রাগন চাষ রয়েছে ৩ বিঘা জমিতে। বাগানের ফাঁকা অংশ ফেলে না রেখে একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে লাভবান হয়েছেন হাবিবুর রহমান। তার সাফল্যে প্রশংসা করছেন এলাকাবাসি। মাল্টা বাগানে গিয়ে দেখা যায় বাগান পরিচর্চায় ব্যস্ত রযেছেন তিনি। আলাপ চারিতায় তিনি জানান, তিনি মুলত নার্সারী ব্যাসায়ি ছিলেন। এতে তার অভাব ছিল নিত্য সাথি। কোনো কিছুতেই অভাব তার পিছু ছাড়ছিলনা। এর পরে নিজ উদ্যোগে নার্সারি ব্যবসার পাশাপশি তিনি শহরের মধ্যেই ৫ বছর পূর্বে চার বিঘা জমি বর্গা নিয়ে মাল্টা বাগান করেন। এতেই ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। বর্তমানে ১৫ বিঘা বর্গা জমির জন্য বছরে দুই লক্ষাধিক টাক পরিশোধ করছেন। তার বাগাানে প্রতিদিন ৫/৭ জন পরিচর্জার কাজ করেন। তাদের বেতন দিতে হয় বছরে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি বলেন, ‘সবার বাগানের মধ্যে ফাঁকা জায়গা পড়েই থাকে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে সাথি ফসল হিসেবে সবজি চাষ করে সফল হই। এর পরে বাণিজ্যিকভাবে আমার ৯ বিঘা জমির মাল্টা, পিয়ারা ও ড্রাগন বাগানে সবজি চাষ করেছি। বাগানে বেশির ভাগ সবজি বিক্রি করেছি। বাকি আছে গোল আলু’। তিনি বলেন, আমার বাগানে যে সবজি উৎপাদন হয়েছে তার মধ্যে কাঁচা মরিচে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি। কাঁচা মরিচ বিক্রি করে তিনি পেয়ছেন এক লাখের বেশি টাকা। অন্যান্য সবজি থেকে এসেছে আরো লাখ খানেক টাকা। সব ঠিক থাকলে আলু থেকে আরো দুই লক্ষাধিক টাকা আসবে বলে আশা করছেন তিনি। এ ছাড়া অন্যান্য সবজি তো রয়েছেই। বাগান ঘুরে দেখা যায় কোথাও এক টুকরো ফাঁকা জায়গা তিনি ফেলে রাখেননি। বাগানের সারির ফাঁকা জায়গায় আলু, মিষ্টি কুমড়ো, মরিচ, বেগুন, বাঁধা কপি, ফুল কপি, পেঁয়াজ, রসুন, শি ও লাউয়ের মাচাসহ বিভিন্ন শাক রোপন করেছেন। তিনি বলেন, বাগানের সাথি ফসল থেকে যে পরিমান সবজি উৎপাদন হয়েছে তাতে পাঁচ লাখেরও বেশি টাকা আয় হবে। এতে বাগান পরিচর্জা ও জমির বর্গা খরচ উঠে আসবে। ফল থেকে যে পরিমান টাকা আসবে তা পুরোটাই লাভ থাকবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমি ১৫ বিঘা বাগান করেছি কিন্তু আজ পর্যান্ত উপজেলা কৃষি অফিসের কেউ এসে খোঁজ খবর নেননি। সরকারি কৃষি বিভাগের কোনো সহযোগিতাও পাইনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসাব্বির হুসাইন বলেন, ফলবাগানে সাথি ফসল উৎপাদন বিষয়টি একটি ভালো খবর। কিন্তু আমাকে কেউ জানাইনি। এখন জানলাম খোঁজ নিয়ে দেখবো। তাকে সযোগীতা করার প্রয়োজন হলে সকল প্রকার সহোগীতা করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।