দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে এক নম্বর সমস্যা দুর্নীতি। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে একসময় প্রধান বাধা ছিল অবকাঠামো। সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনেক উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ফলে অবকাঠামোর দুর্বলতা অনেকটাই কমেছে। এর পরও ব্যবসা-বাণিজ্যে কাক্সিক্ষত গতি আসছে না। দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারির কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। তাঁদের এভাবে পিছিয়ে থাকার জন্যও প্রধানত দায়ী দুর্নীতি। কারণ দুর্নীতি বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি করছে। সরকারের নানা পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশ বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স (বিবিএক্স) ২০২২-২৩ জরিপে বলা হয়েছিল, ব্যবসায়ীদের ব্যাংকঋণ পাওয়া জটিল হয়েছে। কর ও ভ্যাট পরিশোধে হয়রানি আগের চেয়ে বেড়েছে। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের সমস্যা আছে। ছোট ব্যবসায়ীরা সব শর্ত পূরণ করার পরও ঋণ পান না। আবার প্রভাবপ্রতিপত্তি খাটিয়ে ঋণ নিয়ে বড় ব্যবসায়ীদের ফেরত না দেওয়ারও অনেক উদাহরণ আছে। এছাড়াও সিপিডির গবেষণা জরিপে একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি একটি পরিষেবা সংযোগ নিতে আবেদন করলে তাঁর কাছে যে পরিমাণ ঘুষ চাওয়া হয়েছিল, তা তাঁর পরিকল্পিত বিনিয়োগের সমপরিমাণ। এ ধরনের ঘটনা আগেও অনেক ঘটেছে। অনেক সময় মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ব্যবসায়ীরা গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি পরিষেবা সংযোগ নিতে বাধ্য হন। তাই সরকারের উচিত সিপিডির জরিপ ধরে যে প্রতিষ্ঠান পরিষেবা সংযোগ দেওয়ার বিনিময়ে উৎকোচ দাবি করেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া। যেখানে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কথা বলছে, সেখানে কেন ব্যবসা-বাণিজ্যে এই করুণ অবস্থা? অনেক বছর আগেই সরকার ওয়ান-স্টপ সার্ভিস বা একঘরে সব সেবা দেওয়ার কথা বলেছিল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। বড় ব্যবসায়ীরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে উৎকোচ দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিলেও ছোট ও মাঝারিদের পক্ষে সেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাহলে কি ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ছেড়ে দেবেন? তাই সিপিডি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি যেসব সুপারিশ করেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধান করতে হবে। র্নীতিকে কেবল আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। দুর্নীতি প্রতিরোধে মানুষকে নৈতিক জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধই হোক বাংলাদেশের এক নম্বর অগ্রাধিকার।