নীলফামারীতে পৌষ মাসের শেষদিকে এসে প্রকট শীতের দাপট লক্ষ্য করা গেছে। ওই শীত ক্রমান্বয়ে বেশ কয়েকদিন স্থায়িত্ব থাকে। ফলে অসহায় মানুষজন শীতে কাহিল হয়ে পড়ে। শীত নিবারণে ওই মানুষগুলো গরম কাপড়ের জন্য ছুটাছুটি করতে থাকে অনেকের দ্বারে দ্বারে। ওই সকল ছিন্নমুল মানুষের পাশে কেউ কেউ কম্বল নিয়ে এসেছে। তবে যে ধরনের কম্বল তাদেরকে দেয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে কম্বল পাওয়ার পর ওই অসহায় মানুষজন রেগে যাচ্ছে। আবার তাদের অভিযোগ যে কাপড় দিয়ে শীত নিবারণ হয় না সে কাপড় দেয়ার কি প্রয়োজন ছিল। পৌষ মাসের প্রথম দিকে তেমন শীত ছিল না নীলফামারী জেলায়। পৌষের শেষ দিকে এসে বাড়তে থাকে শীত। ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় মানুষ কাতর। শীত নিবারণে অনেকে ছুটছেন গরম কাপড় দোকানে। আর এ সুযোগে কতিপয় ব্যবসায়ি দামও হাঁকছেন ডবলের বেশী। মধ্যখানে শীত কমে আসে। কিন্তু মাঘ মাস শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বাড়তে থাকে আবার শীতের তীব্রতা। মাঘের শীতে বর্তমানে মানুষ কাতর। ভোর রাত থেকে আকাশ ভরে যাচ্ছে কুয়াশার চাদরে। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত থাকছে কুয়াশা। কোন কোন সময় হঠাৎ সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তা স্থায়ী থাকছে না। সন্ধ্যার পর ঠান্ডা আরো তীব্র আকার ধারন করে। অনেকটা জেঁকে বসে শীত। সাথে বইছে এলোমেলো হাওয়া। ফলে যানবাহনগুলো সড়কে চলাচল করতে দেখা যায় ধীরগতিতে। সৈয়দপুর আবহাওয়া দপ্তর সুত্র জানায়,প্রায় দিন সকালে তাপমাত্রা থাকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে। কোন কোন দিন নয় ও আটে নেমে থাকে। সৈয়দপুর শহরে বাজার সারতে আসা আশরাফ আলি জানান, পেট খায় তাই বাজার করতে আসা। যে ঠান্ডা পড়ছে তাতে কেমন করে ঘর থেকে বের হই। কিন্তু পেটে তো কিছু দিতে হবে। তাই যত ঠান্ডাই হোক কাজ করতে হবে। যদি বের না হই আর কাজ না করি তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমি খেটে খাওয়া একজন মানুষ। প্রতি বছর শীত এলে অনেকেই কম্বলের স্লীপ বাড়ীতে দিয়ে যায়। এবছর কোন স্লীপ কেউ দেয়নি। সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলেন, সরকারি অনেক কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরো চাহিদা দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেগুলো অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে। পত্রিকা বিক্রেতা পলাশ জানান, আমাদের প্রতি কেউ নজর দেয় না। প্রচন্ড শীতে সাতসকালে বাইসাইকেল নিয়ে বের হই। সাইকেলে করে পত্রিকা বিক্রি করি। পাঠকদের বাসায় বাসায় পত্রিকা পৌঁছে দেই। কোন একজনও বললো না শীত লাগে কি না। কেউ পাশে এসে সহযোগিতাও করে না কম্বল দিয়ে। কোন কোন বছর শীতের সময় পত্রিকার মালিক পক্ষ থেকে জ্যাকেট ও কম্বল দেয়া হত। এবার তাও নেই। পত্রিকা বিক্রেতা বিমল রায়। তার বাসা পার্বতীপুর উপজেলার বেনিরহাট এলাকায়। প্রায় ৭ কিলোমিটার রাস্তা বাইসাইকেল চালিয়ে সৈয়দপুর শহরে আসে পত্রিকা বিক্রি করতে। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে বিকেলে বাসায় যায়। আবার রাতে এসে পত্রিকার বাকি দেয়া বিল উত্তোলন করে বাসায় ফিরে। শীতে কষ্টের সীমা থাকে না বলে জানান। এদিকে পত্রিকা বিক্রেতা নুর ইসলাম, হিটলার, আলতাফ, আরশাদ, সোবান জানান, শীতকালে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। অনেকে ঠান্ডায় অসুখে আক্রান্ত হন। তবুও পেটের দায়ে সংসার চালাতে ভোরে ঘর থেকে বের হই। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি করে রাতে বাসায় আসি। আমরা বড় অসহায়। কেউ ফিরে তাকায় না, আমরা কেমন আছি,কিভাবে আছি। এবার শীত পড়ছে অনেক বেশী। ঠান্ডায় কেউ কম্বল দিয়ে পাশে আসেনি।